জন্মদিনের ক্যালেন্ডার – সপ্তম পর্ব

একই বছরের একই দিনে দুই ভারতীয় টেস্ট ক্রিকেটারের জন্মানোর নজিরও অমিল নয়। জানুয়ারি ২৬, ১৯৫৭ তারিখেই যেমন যথাক্রমে হায়দরাবাদ ও অমৃতসরে জন্ম ১৯৭৯-৮০ থেকে ১৯৮৬-৮৭ পর্বে ৩৫ টেস্ট খেলা হায়দরাবাদি অফস্পিনার শিবলাল যাদব ও ১৯৮১-৮২ থেকে ১৯৮৪-৮৫ পর্বে ৭ টেস্ট খেলা হরিয়ানভি মিডল-অর্ডার ব্যাটার অশোক মালহোত্রার (প্রসঙ্গত ১৯১৯-এর উক্ত তারিখে আবার বোম্বেতে জন্ম ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ১৯৪৮-৪৯ ঘরোয়া সিরিজের ৪ টেস্ট খেলা মুম্বইকর টপ-অর্ডার ব্যাটার খানমহম্মদ ইব্রাহিমের)। কাঁটায় কাঁটায় সমবয়সি এমনি আরও তিন জোড়া ভারতীয় টেস্ট ক্রিকেটারের হদিস মেলে কালের হস্তাবলেপে হলদে হয়ে যাওয়া দস্তাবেজ ঘাঁটলে।

    অগাস্ট ১৮, ১৯২৩। যথাক্রমে বোম্বে ও করাচিতে জন্ম ১৯৪৬—১৯৫২ পর্বে ৭ টেস্ট খেলা লেগস্পিনার সদাশিব শিণ্ডে ও ১৯৪৭-৪৮ অস্ট্রেলিয়া সফরে ২ টেস্ট খেলা উইকেটরক্ষক জামশেদ ইরানির। প্রসঙ্গত, ১৯৫৬-র এই তারিখে আবার বোম্বেতে ভূমিষ্ঠ হয়েছিলেন ১৯৭৯-৮০ থেকে ১৯৮৪-৮৫ পর্বে ২৯ টেস্ট খেলা মিডল-অর্ডার ব্যাটার সন্দীপ পাটিল।

    ডিসেম্বর ১২, ১৯২৫। যথাক্রমে কোলাপুর ও সুরাটে জন্ম ১৯৪৭-৪৮ থেকে ১৯৫৮-৫৯ পর্বে ৩১ টেস্ট খেলা অলরাউন্ডার দাত্তু ফাদকার ও ১৯৫৮-৫৯ থেকে ১৯৫৯-৬০ পর্বে ২ টেস্ট খেলা পেসার গোলাম গার্ডের। প্রসঙ্গত, ১৯৮১-র এই তারিখে চণ্ডীগড়ে জন্ম ২০০৩-০৪ থেকে ২০১২-১৩ অধ্যায়ে ৪০ টেস্ট খেলা ক্যান্সারজয়ী মিডল-অর্ডার ব্যাটার যুবরাজ সিং-এর। 

    অগাস্ট ১১, ১৯৫৪। যথাক্রমে সেকেন্দ্রাবাদ ও লুধিয়ানায় জন্ম ১৯৭৮-৭৯ থেকে ১৯৭৯-৮০ পর্বে ৪ টেস্ট খেলা অলরাউন্ডার ববজি নরসিমা রাও (ভগবৎ চন্দ্রশেখরের সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে ভাবা হচ্ছিল যাঁকে) ও ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৩-৮৪ পর্বে ৩৭ টেস্ট খেলা মিডল-অর্ডার ব্যাটার যশপাল শর্মার।

    দেখা যাচ্ছে, ১৯৪৭-উত্তর অধ্যায়ে ১৫ অগাস্ট ও ২৬ জানুয়ারির মতো সামাজিক ভাবে অতীব মাহাত্ম্যপূর্ণ দু’টি তারিখে জন্ম তিন ভারতীয় টেস্ট ক্রিকেটারের। গান্ধিজয়ন্তীতে কি ভূমিষ্ঠ হয়েছেন তিনশো তিনের কেউ? হয়েছেন। এবং ঘটনাচক্রে সংখ্যাটা আবারও তিন।

    অক্টোবর ২, ১৯৩০। পঞ্চগনিতে জন্ম ১৯৫২-৫৩ থেকে ১৯৫৯ অধ্যায়ে ৮ টেস্ট খেলা বরোদার অলরাউন্ডার জয়সিংরাও ঘোরপাড়ের।

    অক্টোবর ২, ১৯৩৯। মুলকিতে জন্ম ঘরোয়া ক্রিকেটে মহীশূর ও রেলওয়েজের প্রতিনিধিত্ব করা উইকেটরক্ষক বুধি কুন্দরনের। ১৯৫৯-৬০ থেকে ১৯৬৭ অধ্যায়ে যিনি খেলতে পেরেছিলেন ১৮ টেস্ট।

    অক্টোবর ২, ১৯৮৬। মীরাটে জন্ম ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ ও ইংল্যান্ডে ২০১১-র দুই পিঠোপিঠি সফরে ৬ টেস্ট খেলতে পারা উত্তরপ্রদেশীয় পেসার প্রবীণ কুমারের।

নিবন্ধটা যেহেতু বাংলায় অতএব পাঠকের মনে ইতিমধ্যেই উঁকি দিয়েছে প্রশ্নটা। বলে রাখি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিনে আজ অবধি পৃথিবীর আলো দেখা হয়নি সাদা পোশাকে বাইশ গজে ভারতবর্ষের প্রতিনিধিত্ব করা কোনও পুরুষেরই। মজার কথাটা হল, মহাত্মা গান্ধির জন্মমাসে ভূমিষ্ঠ হওয়া প্রাক্তন রেলওয়েজ অলরাউন্ডার সঞ্জয় বাঙ্গারের নেতাজি প্রেম কিন্তু বেশ গভীর বলেই শোনা যায়। ২০০১-০২ থেকে ২০০২-০৩ পর্বে ১২ টেস্ট খেলা বাঙ্গারের জন্ম অক্টোবর ১১, ১৯৭২-এ বিডে। ক্যালেন্ডারের পাতায় ১৯৯৩-এর এই তারিখে আবার চোরইয়াসিতে জন্ম ইতিমধ্যে ১১ টেস্ট খেলতে পারা বরোদার অলরাউন্ডার হার্দিক পান্ডিয়ার।

জওহরলাল নেহরুর জন্মদিনেও কিন্তু পৃথিবীর আলো দেখেছেন তিন ভারতীয় টেস্ট ক্রিকেটার। শিশুদিবসে জন্ম বলেই কি কারও টেস্ট কেরিয়ারই পদার্পণ করতে পারল না শৈশব পেরিয়ে যৌবনে?

নভেম্বর ১৪, ১৯৬৭। পাটনায় জন্ম ২০০০-০১ ঢাকা টেস্ট (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ১,৫১২, বাংলাদেশের উদ্বোধনী টেস্ট) খেলা উইকেটরক্ষক সৈয়দ সাবা করিমের।

নভেম্বর ১৪, ১৯৭৪। তৎকালীন পুণায় (অধুনা পুনে) জন্ম ১৯৯৯-০০ অস্ট্রেলিয়া সফরে ২ টেস্ট খেলা ন্যাটা মিডল-অর্ডার ব্যাটার ঋষিকেশ কানিতকারের। প্রসঙ্গত এঁর পিতা হেমন্ত কানিতকারও (জন্ম ডিসেম্বর ৮, ১৯৪২-এ অমরাবতীতে) ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ১৯৭৪-৭৫ ঘরোয়া সিরিজের ২ টেস্টে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন দেশের।

নভেম্বর ১৪, ১৯৭৬। মাদ্রাজে জন্ম ২০০১ মরশুমে জিম্বাবোয়ে ও শ্রীলঙ্কার মাটিতে ৪-টি টেস্ট খেলতে পারা ন্যাটা মিডল-অর্ডার ব্যাটার হেমাং বাদানির।

ভারতীয় ক্রিকেট ক্যালেন্ডারের পাতায় মাত্র তিনটি মাসের প্রথম তারিখগুলি নিষ্ফলা। মে, জুলাই ও অক্টোবর। সেই হিসেবে গান্ধিজয়ন্তীতে ঘোরপাড়ে, কুন্দরন ও প্রবীণ কুমারের আবির্ভাবের সূত্রে খাতা খোলে অক্টোবরের। বলে রাখি, মে ও জুলাইয়ের খাতা যথাক্রমে খোলে ২০১৪-র ইংল্যান্ড সফরে ২ টেস্ট খেলা রাজস্থানি পেসার পঙ্কজ সিং (জন্ম মে ৬, ১৯৮৫ সুলতানপুরে) ও ১৯৯৭-৯৮ থেকে ২০১৫ অধ্যায়ে ১০৩ টেস্ট খেলা পাঞ্জাবি অফস্পিনার হরভজন সিং-এর (জন্ম জুলাই ৩, ১৯৮০ জলন্ধরে) দৌলতে।

প্রায় সমান কার্যকারিতার পাঞ্জাবি অফস্পিনার শরণদীপ সিংকে (জন্ম অক্টোবর ২১, ১৯৭৯ অমৃতসরে; ২০০০-০১ থেকে ২০০২ পর্বে খেলেছিলেন ৩-টি টেস্ট) টপকে চলতি শতকের শুরুতে হরভজনের প্রবল উত্থানের নেপথ্যে বেশ বড় ভূমিকাই ছিল অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলীর। বাঙালির এযাবৎকালের শ্রেষ্ঠতম ক্রিকেট তারকার জন্মও যে জুলাইতে আগেই দেখেছি আমরা।