তিনি আবারও প্রমাণ করলেন যে তিনি হারিয়ে যাননি। নিজের দিনে ঠিকঠাক ব্যাটে-বলে হলে তিনি যে আজও বিপক্ষের ত্রাস আবারও বুঝিয়ে দিলেন — আন্দ্রে ডোয়েন রাসেল। ৩১ বলে ৭০ রানের দুরন্ত ইনিংস খেলে কেকেআর-কে ২ পয়েন্ট এনে দিলেন কলকাতার প্রিয় ড্রে রাস। ওয়াংখেড়েতে পাঞ্জাব কিংস-কে ১৫ ওভারের মধ্যে ৬ উইকেটে হারিয়ে পয়েন্ট টেবিলে শীর্ষ স্থান দখল করলেন নাইটরা।
আইপিএলের মঞ্চে ‘বীর-জারা’-র লড়াইয়ে ‘জারা’-র দল কে প্রথম আঘাতটা দেন উমেশ যাদব। চার ওভার বল করে একটি মেডেন ওভার সহ ২৩ রান দিয়ে তাঁর শিকার – মায়াঙ্ক আগরওয়াল, লিয়াম লিভিংস্টোন, হরপ্রীত ব্রার, রাহুল চাহার – ৪-১-২৩-৪ – আইপিএলে তাঁর সেরা বোলিং ফিগার। তিন ম্যাচে আটটি উইকেট ঝুলিতে পুরে এখন পার্পল ক্যাপের ও অধিকারী তিনি। এদিন তাঁর সাথে যোগ্য সঙ্গ দেন টিম সাউদি (৪-০-৩৬-২) ও সুনীল নারিন (৪-০-২৩-১)। শুরুর দিকে শিবম মাভির বিরুদ্ধে বেশ কিছু চোখধাঁধানো শট খেললেও মাভির বলেই আউট হন পাঞ্জাবের উইকেট রক্ষক শ্রীলঙ্কার ভানুকা রাজাপক্ষে ৩১ (৯)। তারপর থেকে আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি পাঞ্জাব। ইনিংসের শেষদিকে কাগিসো রাবাদা চারটি ৪ ও একটি ছয় সহযোগে ১৬ বলে ২৫ রানের একটি প্রয়োজনীয় ইনিংস খেললে প্রীতি জিন্টার দল ১৩৭ রানের একটি সাম্মানিক স্কোর খাড়া করে কিং খানের দলের সামনে।
১৩৮ রানের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ব্যাট করতে নেমে রাহানে, শ্রেয়সরা ভালো শুরু করলেও পরপর কয়েকটি উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় কলকাতা নাইট রাইডার্স ৫১/৪ (৭)। আর ঠিক এখান থেকেই স্যাম বিলিংস ২৪* (২৩)-কে সাথে নিয়ে হাল ধরেন মাসল-রাসেল। বিপজ্জনক হয়ে ওঠা রাহুল চাহারের ওভারগুলি সামলে খোলস ছেড়ে বেড়িয়ে আসেন কলকাতার নয়নের মণি রাসেল।
দশম ওভারে হরপ্রীতের ব্রার-এর বলে বিশাল দুটি ছক্কা মেরে শুরু হয় রাসেলের ধ্বংসলীলা। এরপর ১২তম ওভারে স্বদেশীয় ওডেন স্মিথ-কে তিন তিনটে দৈত্যাকার ছক্কা ও একটি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে প্রমাণ করলেন তিনি শেষ হয়ে যাননি। অর্শদীপ সিং-কে সোজা বাউন্ডারি তে পাঠিয়ে মাত্র ছাব্বিশ বলে নিজের অর্ধশতরান পূর্ণ করেন। এরপর যেন ছিল শুধু সময়ের অপেক্ষা। কত তাড়াতাড়ি ম্যাচ শেষ করতে পারেন তিনি। ছক্কার পর ছক্কা। ওনার আগমনই ঘটেছে যেন সাদা বলটাকে বাউন্ডারির বাইরে পাঠানোর জন্য। ১৫ তম ওভারে লিভিংস্টোন-এর বলে পরপর দুটি ছয় হাঁকিয়ে ম্যাচ ফিনিশ করলেন নিজস্ব ভঙ্গিমায়। মাঠের মধ্যে উপস্থিত শাহরুখ কন্যা সুহানা, পুত্র আরিয়ান ও অভিনেত্রী অন্যন্যা পান্ডে সহ কেকেআর সমর্থকরা ফেটে পড়লেন উল্লাসে। ৩১ বলে ৭০ রানের অপরাজিত ইনিংসটি সাজানো মোট ৮ টি ছয় ও ২ টি চার দ্বারা।
এই বিধ্বংসী রাসেল-কেই তো দেখতে চায় কলকাতা। আজ ফিরলেন পুরনো মেজাজে। শুধু ফিরলেনই না। ফিরলেন রাজার মেজাজে। তিন ম্যাচে ৯৫ রান করে অর্জন করলেন অরেঞ্জ ক্যাপ। বিগত কয়েক বছরের লাগাতার সমালোচনা, ব্যর্থতা, লজ্জা ঝেড়ে ফেলে জ্বলে উঠলো ড্রে রাসের ব্যাট। ম্যাচ শেষ করে তাই দৃশ্যতই পরিতৃপ্ত দেখালো রাসেল-কে। যে দল এত ভরসা করেছে তাঁর ওপর, তার যোগ্য সম্মান দিতে পেরেছেন তিনি, সমস্ত রকমের সমালোচনা, ট্রোলিংয়ের জবাব দিতে পেরেছেন ব্যাটের মধ্য দিয়ে।
বীর-জারার লড়াইয়ে তো শেষ হাসি হাসলেন বীর। এখন দেখার পুরনো ছন্দ ফিরে পাওয়া উমেশ ও রাসেল জুটি আগামী ৬ই এপ্রিল, বুধবার, তীব্র সম্মানের লড়াইয়ে মুম্বাই ইন্ডিয়ানস-কে হারিয়ে হাসি ফোটাতে পারে কিনা বলিউড বাদশা তথা আপামর কেকেআর সমর্থকদের মুখে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
পাঞ্জাব কিংস – ১৩৭/১০ (১৮.২) [ভানুকা রাজাপক্ষে ৩১ (৯), কাগিসো রাবাদা ২৫ (১৬); উমেশ যাদব ৪-১-২৩-৪, টিম সাউদি ৪-০-৩৬-২] । কলকাতা নাইট রাইডার্স – ১৪১/৪ (১৪.৩) [আন্দ্রে রাসেল ৭০* (৩১), শ্রেয়স আইয়ার ২৬ (১৫); রাহুল চাহার ৪-১-১৩-২]
নাইট রাইডার্স জয়ী ৬ উইকেটে।
ম্যাচের সেরা – উমেশ যাদব।
ছবি ইন্টারনেট