ক্রীড়াপ্রেমী বাঙালি এইবছর অনায়াসে কলকাতা নাইট রাইডার্স বা মুম্বই ইন্ডিয়ানসের জার্সিটা মে মাসে খুলে সঙ্গে সঙ্গে ব্রাজিল বা আর্জেন্তিনার জার্সিটা পরে ফেলতেই পারত। কিন্তু বাদ সাধল ফিফা। জুন-জুলাইয়ের চিরাচরিত বিশ্বকাপকে নিয়ে গেল নভেম্বর-ডিসেম্বরে। মধ্যপ্রাচ্যে জুন-জুলাইয়ের প্রচণ্ড গরমকে মাথায় রেখে। শুধু তাই নয়, কাতারে ভাল ফুটবলের প্রয়োজনীয় পরিবেশের জন্য তৈরি করেছে এয়ার কুলিং সুবিধা যুক্ত ওপেন স্টেডিয়ামও।
উয়েফা এবং বাকি সংস্থাগুলো ফিফার এই সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছে। বিশেষত যেখানে উয়েফা পরিচালিত বা উয়েফার অধীনে থাকা দেশের লিগগুলো এর ফলে সামনের মরসুমে অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। নিন্দুকরা অবশ্য বলতে ছাড়ছেন না, বর্তমানে ইউরোপের বহু ক্লাবের টিকি মধ্যপ্রাচ্যে বাঁধা রয়েছে বলেই এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করা যায়নি।
ফুটবলারদের কথা ভেবে কাতারে বিশ্বকাপ চিরাচরিত প্রথা ভেঙে নভেম্বরে শুরু হতে পারে, কিন্তু বছরের পর বছর এপ্রিল-মে মাসে ভারতের মতো গ্রীষ্মপ্রধান দেশে অনুষ্ঠিত হয়েই চলে বিশ্বের একনম্বর টিটোয়েন্টি লিগ! লক্ষ লক্ষ ডলার উড়ছে আইপিএল-এ। অতীতে দেখা গিয়েছে, জয়পুর-কোচি-চেন্নাই-এ মে মাসে বিকেল সাড়ে-তিনটে / চারটেতে ক্রিকেটারদের নামিয়ে দেওয়া হয়েছে মাঠে। আর কর্মকর্তারা, ফ্র্যাঞ্চাইজির কেষ্ট-বিষ্টু থেকে শুরু করে টেলিভিশনে আমদর্শক পর্যন্ত পা এর উপর পা তুলে ঘরের এসির তাপমাত্রাকে সহনীয় জায়গায় রেখে সেই খেলা দেখে আমোদে মেতে উঠেছে।
প্রশ্ন উঠবেই, শুধু আইপিএলকে দায়ী করা কেন? ঠিকই তো। সেই আটের দশক থেকে আমরা মরুশহরে মার্চ-এপ্রিলে ক্রিকেট দেখে বড় হয়েছি, মে মাসে ভারতেও আকছার ক্রিকেট হয়েছে। পাল্টা যুক্তি হিসেবে বলাই যায় যে সে তো ক্রিকেটে একদিন হেলমেটও ব্যবহার হত না, থার্ড আম্পায়ারও ছিলেন না। কিন্তু এখন সময়ের সঙ্গে, নতুন প্রযুক্তি আসার সঙ্গে, প্রয়োজনীয় পরিবর্তন এসেছে। এখন ভারতীয় বোর্ড এবং আইসিসির হাতে অঢেল পয়সা। ন্যূনতম একটা বা দুটো মাঠেও কি এয়ারকুলিং ব্যবস্থা করা যায় না? জানি, ক্রিকেট ফুটবলের মতো ‘ফিজিক্যাল গেম’ নয়। কিন্তু তা-ও? আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরে যখন কাতারে বিশ্বকাপ খেলা হবে, তাপমাত্রা থাকবে ৩০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডেরও কম। তা সত্ত্বেও এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে শুধুমাত্র ফুটবলারদের কথা ভেবে। সেই সুবিধা দর্শকরাও পাবেন। আর ব্যবসা, হ্যাঁ শুধু আরও ব্যবসার খাতিরেই অসহনীয় গরম এবং আর্দ্রতার মধ্যে সাড়ে-তিনটের সময় ক্রিকেট খেলার আয়োজন হচ্ছে, যা একসময় শীতকালের খেলা হিসেবেই পরিচিত ছিল!
আর্থিক খরচের অজুহাতে নিদেনপক্ষে যদি এই এয়ার কুলিং ব্যবস্থা না-ও করা যায়, সেক্ষেত্রে সমস্ত ম্যাচ কি সন্ধ্যের পরে শুরু করা যায় না? একই সময় দুটো ম্যাচ হলে টেলিকাস্টিং ছাড়া আর কোনও সমস্যা আছে কি? একই সময়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের দুটো ম্যাচ বা অন্য কোনও দেশের লিগে দুটো খেলা একসঙ্গে হতে দেখি না? ফুটবলে তো যে কোনও বড় প্রতিযোগিতার একই গ্রুপে লিগের শেষ ম্যাচ, যে কোনও বড় লিগের শেষ রাউন্ডের সব ম্যাচ, বাধ্যতামূলক ভাবে একই দিনে এবং একই সময়ে শুরু হয়। কীভাবে টেলিকাস্ট হয়? বিভিন্ন সময়ে সোচ্চার হয়ে ফুটবলাররা এ ব্যাপারে সফল হয়েছেন। কর্তারাও বুঝেছিলেন, একই সময়ে ম্যাচ আয়োজনের প্রয়োজনীয়তা। ক্রিকেটাররা এইসব বিষয়ে বিন্দুমাত্র কথা খরচ করেন না, নীরব কর্মচারীর মতো মালিকের হুকুম পালন করে যান। দিনের পর দিন, বছরের পর বছর।
তাই, এবারও আইপিএল-এ দেখা যাবে সাড়ে-তিনটেয় শুরু হচ্ছে বেশ কিছু ম্যাচ। ভারতের আই লিগে যা এখনও হয়, প্রায় রোজই।
গনগনে রোদে সাড়ে তিনটের ম্যাচে ফেসবুক লাইভ-এর আই লিগ আর স্টার স্পোর্টসের ১৮ বা ২২ ক্যামেরার আইপিএল-কে তবুও মিলিয়ে দেয় ভারতবর্ষ, হ্যাঁ এখনও!