অপেশাদারের সাময়িক পেশাদারিত্বের উপাখ্যান

১২ই ফেব্রুয়ারী ২০২২। দুপুর আন্দাজ সোয়া ২টো। ব্যাঙ্গালোরের প্ৰখ্যাত পাঁচতারা হোটেলে হাতুড়ির তলায় যাচ্ছেন একের পর এক ক্রিকেটার। শ্রেয়স আইয়ার পেয়েছেন ১২.২৫ কোটি, নিজেদের যোগ্যতার মান অনুযায়ী মূল্য পেয়েছেন শিখর ধাওয়ান থেকে শুরু করে ডেভিড ওয়ার্নারও। সব কিছু পেরিয়ে তখন মূল্য নির্ধারণ হচ্ছে শ্রীলংকার পিন্নাদুওয়াগে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা ডি সিলভার। ১০.৭৫ কোটিতে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর তাঁকে কিনে নেওয়ার পরেই ঘটলো সেই ঘটনা যার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলোনা নিলামকক্ষ। অভিজ্ঞ নিলামদার হিউ এডমেডিস যখন পোস্টচারাল হাইপোটেনশনে আক্রান্ত হয়ে ধরাশায়ী হলেন তখন নিলাম বাতিলের ভ্রূকুটি ছিলো বিসিসিআই এর সামনে।
এমন অবস্থায় নিজের ফোন ঘোরালেন আইপিএল কমিটি চেয়ারম্যান ব্রিজেশ প্যাটেল এবং ফোন গেলো বিখ্যাত টিভি ব্যক্তিত্ব চারু শর্মার বাড়িতে। “জুতো পরুন এবং চলে আসুন”- এই ছিলো সংক্ষিপ্ত কথোপকথন।

যেমন বলা তেমন কাজ। এলেন চারু শর্মা। বলে রাখা ভালো চারু শর্মা আদতে একজন টিভি প্রেজেন্টার, কুইজমাস্টার হলেও নিলামের মতো কাজ কখনোই করেননি। যেখানে আইপিএল নিলামে ডাকা হয় রিচার্ড ম্যাডলি, হিউ এডমেডিসের মতো পেশাদারদের যাঁরা নিজের জীবনে প্রায় তিরিশ বছরের বেশি সময় নিলাম করাচ্ছেন সেখানে অভিষেক হওয়া কিন্তু সহজ নয়। ব্যাপারটা এমনই যেন জীবনের প্রথম আন্তর্জাতিক ইনিংস খেলতে নামছেন একেবারে বিশ্বকাপ ফাইনালে যখন দেশ ৩০০ রান তাড়া করতে নেমে ৫০-৩!

চারু এতো ভাবেননি। বলেছিলেন “ফাইন। লেটস ডু ইট।” এরপর মাত্র পনেরো মিনিট নিয়ে সবটা বুঝে নেমে পড়লেন মাঠে। আইপিএল আধিকারিকরা ব্রেক বাড়ানোর কথা বললেও তা নাকচ করেন তিনি।
চারু আরো বলেন “এই পেশাটা আমার কাছে এলিয়েন নয়। শুধুমাত্র হাতুড়ি নিয়ে একটা দিন। শুধু পার্থক্য এই যে অনেক বেশি লোক দেখছেন। একটা পেশা পেশাই হয়। দুজন লোক যুক্ত থাক বা দুই লক্ষ বা দুই কোটি, দু’টাকার নিলাম হোক বা কোটি টাকার।”

প্রথমবার নিজের নিলামদার হিসেবে অভিষেকেই বাজিমাত চারুর। না তিনি নির্ভুল ছিলেননা। কোথাও বেশী সময় দিয়েছেন, কোথাও কম বা অন্য ভুলও হয়েছে হয়তো, তবে সব কিছু ছাপিয়ে নতুন চ্যালেঞ্জ নিতে পারাটাই চারু শর্মার ইউএসপি হয়েছে।

আজ ভালো রকম কৃতজ্ঞতা প্রাপ্য চারু শর্মার।