আই.পি.এল-এর সাম্প্রতিক অতীতের বোলারদের নিয়ে কিছু কথা – প্রথম পর্ব

ক্রিকেটে একটা পুরনো কথা আছে – ম্যাচ জিততে হলে, এমনকি বিপক্ষের রান তোলা আটকাতে গেলেও, সেরা পন্থা হচ্ছে উইকেট নেওয়া, অর্থাৎ বোলিংশক্তি হওয়া চাই ভাল ও বৈচিত্র্যময়। তাই বিগত তিনটে আই.পি.এল-এর নিরিখে কয়েক ধরণের কিছু বোলারকে নিয়ে খুব সংক্ষেপে কিছু কথা বলবার জন্যই এই লেখা।

আলোচিত এই বোলারদের মধ্যে কে এবারের প্রতিযোগিতায় কোন দলে গেছেন, বা অংশগ্রহণ করছেন না, বা কোনও দলই পাননি, তার মধ্যে যাচ্ছিনা। কারণ সেটা সবাই জেনে গেছেন বা জেনে নিতে পারেন।

আরেকটা জরুরি কথা খেয়াল রাখবেন – এই বোলাররা এবারের প্রতিযোগিতায় কেমন করবেন তা নির্ভর করবে (অন্যান্য কারণের সঙ্গে) তাঁদের দল-পরিচালন সমিতি তাঁদের কেমনভাবে ব্যবহার করবেন এবং তাঁদের সহ-বোলাররা কারা ও কেমন করেন।

এবার এগোনো যাক – কেমন!

ছবি : ইন্টারনেট

প্রথমেই আসি সেইসব ডান-হাতি সিমারদের কথায়, যাঁদেরকে পাওয়ার-প্লে (PP) বোলার ব’লে ধরা হয় [যদিও PP-তে স্পিনারদেরও কাজে লাগানো হয় অবস্থাবিশেষে]।

  • আবেশ খান গতবছর খুবই ভাল করেছেন, PP-তে ওভারপ্রতি গড়ে সাতের নিচে রান দিয়ে গড় রেখেছেন ২৭, অতএব তাঁর গুরুত্ব আছে।
  • আর্চার দারুণ PP বোলার, ওভারপ্রতি গড়ে পাঁচের কম রান দিয়ে গড় রেখেছেন ১৪, কিন্তু এমন তিনি কতদিন চালাতে পারবেন সেটাই কথা আর তিনি তো এই বছর খেলবেনই না জানিয়েছেন। 
  • নর্টিয়ে PP-তে দুর্দান্ত, গোড়ার দিকে উইকেট নিতে তিনি পারেন, কিছুদিন হ’ল স্লোয়ারের কায়দা রপ্ত করে অনেক মাথা খাটিয়ে বল করছেন।
  • দীপক চাহার, তাঁর কার্যকরী আক্রমণাত্মক ব্যাটিং ও নিরাপদ ফিল্ডিং সমেত, দলের পক্ষে বেশ উপযোগী প্যাকেজ।
  • মাভি, খুব বেশি বোলিং না করলেও, তাঁর ২৩ বছরের তারুণ্যের জোরে সাফল্যের মুখ দেখবার সম্ভাবনা বাড়িয়েছেন। ওঁকে অবশ্য মিডল-ওভার (MO) বা ডেথ-ওভারেও (DO) ভালই কাজে লাগানো যেতে পারে।
  • শার্দূল যদিও ওভারপ্রতি গড়ে নয়ের বেশি রান দিয়েছেন কিন্তু PP-তে উইকেট নেওয়ার অভ্যাস আছে ৩১.৩৮ গড়ে। ব্যাট হাতে তাঁর আক্রমণাত্মক খেলাও দলের পক্ষে কার্যকরী। সঙ্গে কম-রান-দেওয়া বোলার থাকলে তাঁর উইকেট পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়তে পারে। 
  • ভুবনেশ্বর আজকাল উইকেট কম পান। কিন্তু ওভারপ্রতি ছয়ের কম রান দেওয়ার ফলে ব্যাটাররা সাধারণত ওঁকে মারতে চেষ্টা করেন না। তবে তিনি ৩২ ছুঁতে চলেছেন এবং বলের গতি কমের দিকে, তাই মার খেতেও পারেন।
  • সন্দীপ শর্মা গতবছরেও PP-তে ওভারপ্রতি সাতের কম রান দিয়েছেন, কিন্তু MO বা DO-তে তাঁকে নিয়ে সমস্যা হতে পারে।

এরপর আসি সেইসব ডান-হাতি সিমারদের কথায় যাঁদেরকে মিডল-ওভার (MO) বোলার ব’লে ধরা যায়, এঁদের সংখ্যা অবশ্য কমের দিকেই, তার উপর হার্দিক বোলিং করতে পারবেন কিনা সেটাই একটা বড় প্রশ্ন।

  • হর্ষালকে আগে DO-বিশেষজ্ঞ বলেই ধরা হচ্ছিল, কিন্তু গতবছর তিনি MO-তে ১৩টা উইকেট নিয়েছেন, যদিও এবারে তাঁর সেই সাফল্য আসবে কিনা সন্দেহ আছে কারণ ব্যাটাররা হয়ত এবার তাঁকে কম ঠ্যঙাতে চেষ্টা করবেন।
  • শামি PP-তে উইকেট খুব কমই পান আর DO-তে একসঙ্গে একাধিক উইকেট পান, অথচ MO-তে তাঁর গড় ১৭, তাঁকে দু’ওভার করে MO ও DO-তে ব্যবহার করলেই বোধহয় ভাল।
  • প্রসিদ্ধ MO-তে এখনও পর্যন্ত গড় রেখেছেন ২২, হয়ত আগামী বছর দুয়েকে তিনি PP-তে ঢুকতে পারবেন।
  • রাসেল DO-র থেকে MO-তেই বেশি কার্যকরী।
  • বিজয় শঙ্করের MO-তে রেকর্ড কিন্তু ভাল।

এইবার আসি সেইসব ডান-হাতি সিমারদের কথায়, যাঁদেরকে ডেথ-ওভার (DO) বোলার ব’লে ধরা যায়। ক্রিস মরিস অবসর নেওয়ার পর এই জাতীয় বিশেষজ্ঞের সংখ্যাও কমতির দিকে।

  • অবশ্যই আছেন বুমরা যাঁর ওভারপ্রতি আটের কম রান দেওয়ার কারণে তাঁকে ব্যাটাররা সমঝে চলেন।
  • সিরাজ হয়ত আরো কয়েক বছরে PP-বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠবেন, যদিও বর্তমানে PP-তে তিনি ওভারপ্রতি নয়ের কাছাকাছি রান দিচ্ছেন। DO-তে তিনি বেশ কার্যকরী আর কম বয়স ও ধারাবাহিক ক্রমোন্নতি তাঁর জোরের জায়গা।
  • রাবাদা ওভারপ্রতি প্রায় সাড়ে-নয় রান দিলেও গত তিন মরসুমে DO-তে তিনি প্রায় পঞ্চাশটা উইকেট নিয়েছেন।
  • জেসন হোল্ডারকে ভুললে চলবেনা। DO-তে ওভারপ্রতি দশের বেশি রান দিলেও তাঁর গড় ১২ – বেশ ভাল। ব্যাটিংটাও ভালই করেন। অতএব দলের পক্ষে উপযোগিতা যথেষ্ট।
  • ক্যুল্টার-নাইল কিছুদিন যাবৎ DO-তে ভালই করছেন। আক্রমণাত্মক ব্যাটিংটাও তাঁর আসে।
  • ব্রাভো চালিয়ে যাচ্ছেন কিন্তু বয়স তো তাঁরও বাড়ছে, ৩৮ তো হ’ল। তাঁর ব্যাটিংটাও আর আগের মতন নেই। দলে কিছুটা অনিয়মিত হয়ে পড়েছেন।
  • সিদ্ধার্থ কল DO-তে ওভারপ্রতি নয়ের কম রান দিয়েছেন, PP-তেও তাঁর বোলিং মন্দ নয়। বয়স এবং দলে কিছুটা অনিয়মিত হয়ে পড়া তাঁরও সমস্যা।

আজ এই পর্যন্ত থাক – পরের পর্বে বাঁ-হাতি সিমার এবং বিভিন্ন ধরণের স্পিনারদের কথা বলা যাবে।

[পুনশ্চ: তথ্যগুলোর বেশ কিছু অংশ অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট-সাংবাদিক জ্যারড কিম্বার-এর থেকে নেওয়া।