নিশ্চিত থাকুন ট্রফি আসবেই : সৌরাশিস লাহিড়ী

কথা ছিল সন্ধ্যে সাতটায় ফোন করবো, যথারীতি করলাম কিন্তু ধরলেন না। ভাবলাম আজ হয়তো আর কথা বলা হলো না। দশ মিনিট বাদেই দেখলাম নিজেই কল ব্যাক করেছেন এবং সেই সঙ্গে দুঃখপ্রকাশ, বাথরুমে থাকায় ফোন ধরতে পারেননি। এনসিএ-এর ট্রেনিং থেকে এসে ফ্রেশ হয়েই উইলোর উইলের সঙ্গে কথা বলা শুরু করে দিলেন বাংলার সহকারী কোচ সৌরাশিস লাহিড়ী।

প্রশ্ন : এনসিএ-এর এই পরিবেশ কেমন লাগছে?

সৌরাশিস: এক কথায় অসাধারন। আ্যমেজিং পরিবেশ। সমস্ত ক্রিকেটার এক জায়গায়, বিরাট কর্মকান্ড। অসাধারন ব্যবস্থাপনা। একদিকে সঞ্জু স্যামসন, কেএল রাহুলরা রিহ্যাব করছে, জাতীয় মহিলা দল কমনওয়েলথ খেলতে যাওয়ার আগে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি সারছে, অন্যদিকে এমার্জিং ক্যাম্প চলছে। সেখানে বাংলার চারজন খেলোয়াড় আছে। আর সর্বোপরি এদের দেখাশোনা করার জন্য ঋষিকেশ কানিতকার, ট্রয় কুলি আছেন, আর আছেন সবার প্রিয় ভিভিএস। একজন আ্যশেজ জেতানো বোলিং কোচের হাতে ভবিষ্যতের বোলাররা তৈরি হচ্ছে, ভীষণ ভাল ব্যাপার।

প্রশ্ন: ভিভিএস-এর সঙ্গে তো অনেক দিন কাজ করছেন। কেমন অভিজ্ঞতা?

সৌরাশিস: অসাধারন মানুষ। বিনয়ী, ভদ্র, সময়ের বিষয়ে ভীষন কঠোর, এক কথায় অতুলনীয় মানুষ। সেই ভিশন-২০২০ থেকে দেখছি। প্রথমে খেলোয়াড় হিসেবে ওখানে গিয়েছিলাম, পরে ভূমিকা পাল্টায়। ভিশন-২০২০র সাফল্যের পেছনে লক্ষণের অনেক বড় ভূমিকা আছে।

প্রশ্ন: ভিশন-২০২০ আক্ষরিক অর্থে কতটা সফল বলে আপনার মনে হয়?

সৌরাশিস: ভীষনভাবে সফল। এখনকার বাংলা সিনিয়র দলের অনেকেই ওখান থেকে এসেছে, এখনও অনেকে জুনিয়র লেভেলে আছে। ভিশন-২০২০কে এনসিএ-র একটা বাংলা সংস্করণ বলা যায়। সারা বছরের একটা প্রসেস।

প্রশ্ন : বাংলার সহকারী কোচ হিসেবে একবছর হয়ে গেল। কেমন ছিল এই একটা বছর?

সৌরাশিস: খুব ভালো অভিজ্ঞতা। দলে মনোজ, অনুষ্টুপদের মতো অনেক সিনিয়র আছে যাদের সঙ্গে আমি খেলেছি, আবার অনেক জুনিয়র আছে যারা বাংলার হয়ে অনূর্ধ-২৩ আমার কোচিংয়েই খেলেছে। কাজেই মানিয়ে নিতে কোন অসুবিধে হয়নি। তবে এই বাংলার দলটা খুব সম্ভবনাময়, হয়তো ট্রফি আসেনি কিন্তু সব ফরম্যাট মিলিয়ে দেশের প্রথম তিনটে দলের মধ্যে থাকবে বাংলা। অজুহাত নয়, কিন্তু এবছর সীমিত ওভারের টুর্নামেন্টে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বৃষ্টির জন্য ভুগতে হয়েছে। রনজিতে গ্ৰুপ শীর্ষে থেকে কোয়ালিফাই করি। ভুলে যাবেন না রনজিতে গত দুবছরে বাংলাই একমাত্র দল যারা দুবারই শেষ চারে পৌঁছছে। এবারের গ্ৰুপ শীর্ষে থাকাটা কিন্তু সামনের বছর রনজির গ্ৰুপ বাছাইয়ের সময়ে সুবিধে দেবে।

প্রশ্ন : কিন্তু ট্রফি তো আসছে না!

সৌরাশিস: এটা ঠিক যে দিনের শেষে সবাই ট্রফি চায়, ট্রফি দিয়েই সবটা বিচার করতে চায়। আমরা একটা প্রসেসের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। ট্রফি অবশ্যই আসবে। আসলে খেলায় হার হয় না, হয় আপনি জিতলেন নয়তো শিখলেন। এই শেখাটা খুব জরুরী, যেটা আগামী দিনে এই শেষ ধাপটা পার হতে সাহায্য করবে। ধরে নিতে পারেন আমরা একটা পঞ্চাশতলা বাড়ি তৈরি করছি, যার তিরিশ বা পঁয়ত্রিশ তলায় পৌঁছেছি। সুতরাং নিশ্চিত থাকুন ট্রফি আসবেই।

প্রশ্ন : এবারের সেমিফাইনাল নিয়ে কী বলবেন?

সৌরাশিস : ওই পাঁচটা দিন মধ্যপ্রদেশ আমাদের থেকে ভালো খেলেছে। এটাই ক্রিকেটের নিয়ম। ওই একটা দিন বা পাঁচটা দিন যে ভাল খেলবে সে জিতবে। এতো হতেই পারে। কিন্ত তার মানে এটা নয় যে বাংলা খারাপ টিম হয়ে গেল। আমারা কিন্তু চ্যাম্পিয়ন টিমের কাছেই হেরেছি। মধ্যপ্রদেশ দলটা কিন্তু দীর্ঘদিন একটা প্রসেসের মধ্যে দিয়ে গেছে।

প্রশ্ন: আপনার কি মনে হয় না বাংলার ব্যাটারদের মধ্যে ধারাবাহিকতার অভাব আছে?

সৌরাশিস: ব্যাটারদের জন্য ক্রিকেটটা কিন্তু এক বলের খেলা। আমার তো মাঝেমধ্যে ওপেনারদের দেখে খারাপ লাগে। ভাবুন, শীতের ইডেনে কুয়াশায় মোড়া পরিবেশে যখন নতুন বল ফেস করার কাজটা কিন্তু খুব একটা সহজ নয়। আর কিছু ক্ষেত্রে ফেল করলেও কেউ না কেউ কিন্তু ঠিক দাঁড়িয়ে গেছে। আর সেই কারণেই কিন্তু একবার ফাইনাল আর একবার সেমিফাইনাল।

প্রশ্ন : শরদিন্দু মুখার্জী, উৎপল চ্যাটার্জী, সৌরাশিস লাহিড়ী। তারপর?

সৌরাশিস : এটা ঠিক যে এখন সত্যি আক্রমণাত্মক স্পিনারের অভাব। কিন্তু খেলাটার দিকেও একটু নজর দিন। দলে তিনজন স্ট্রাইক বোলার যারা কেউ স্পিনার নয়। স্বাভাবিক ভাবেই যে স্পিনার খেলছে, সে যখন বল করতে আসছে অনেকক্ষেত্রেই তাকে একটা দিক ধরে রাখতে হচ্ছে। উল্টোদিক থেকে আক্রমন করা হচ্ছে। পেস সহায়ক পরিবেশে অনেক সময়ে প্রথম ইনিংসে স্পিনার বল করার সুযোগই পাচ্ছে না। এরকম অবস্থায় প্ৰকৃত স্পিনার উঠে আসবে কী করে?

প্রশ্ন: শেষ প্রশ্ন, একটু অন্যরকম। একশো ফার্স্টক্লাস ম্যাচ খেলা, একই ম্যাচে শচীন তেন্ডুলকারকে দুবার আউট করা নাকি বাংলার কোচ হওয়া? কোনটা আপনার হৃদয়ের বেশী কাছে?

সৌরাশিস : অবশ্যই এত ম্যাচ খেলার সুযোগ পাওয়া। ১৫বছর ধরে বাংলার হয়ে খেলতে পারা। খেলতে পেরেছিলাম বলেই বাকি দুটো আ্যচিভমেন্ট ধরা দিয়েছে। ১৫টা বছর একটা দীর্ঘসময়। দুবার রনজি ফাইনাল খেলা, অবনমন এবং সেখান থেকে উঠে আসা (যদিও আমি সেই সময়ের একমাত্র খেলোয়াড় যে প্লেটে খেলেনি), অবনমন বাঁচানোর লড়াই। ওই ইনিংসটি সম্ভবত আমার সেরা স্মৃতি। ওটা সারাজীবনমনে রাখবো।