ফিরে আসার লড়াই। সঙ্গে অভিষেক রমন।

প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে বাংলার হয়ে তার অভিষেক ঘটেছিলো ২০১৬ সালের নভেম্বরে। এরপর থেকে বিগত বছরের রঞ্জি সেমি-ফাইনাল অবধি বাংলা দল খেলেছে ২৯টি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ এবং সবকটিতেই প্রথম একাদশে ছিলেন রমন। এছাড়া লিস্ট-এ ক্রিকেটেও তাঁর ৩৬ গড় ও ৯০ স্ট্রাইক রেট প্রমাণ করে তাঁর উৎকৃষ্টতা।
বাদ পড়ার পর থেকে আজ কলকাতা ক্লাব ক্রিকেটে তিন ম্যাচে তিনটি সেঞ্চুরি করে জীবনের “পার্পল ফর্ম” উপভোগ করছেন অভিষেক রমন। কেমন ছিলো এই ফিরে আসার লড়াই? ভবানীপুর ক্লাবের ড্রেসিংরুমে বসে সেই নিয়েই আলোচনা করলেন অভিষেক রমন।


প্রশ্ন:- মাঝখানে একটা সময় তুমি রান পাচ্ছিলে না। সেখান থেকে এরকম কামব্যাক। নিজেকে কিভাবে প্রস্তুত করেছ?
রমন:- যখন রঞ্জি ট্রফিতে সুযোগ পাইনি, লিমিটেড ওভারে বাদ পড়েছিলাম, মাথায় এটাই ঘুরছিলো যে কিভাবে নিজেকে বেটার করতে পারি। রান করাই আমাদের কাজ, সিলেকশন তো আমাদের হাতে না। তার আগেও যখন রঞ্জি খেলি, দুটো একশো ছিলো আর লিমিটেড ওভারেও দুটো একশো। তারপরেও একটা টাইম গিয়েছিলো যখন ফ্লপ করেছি। যখন ভালো করেছি তখন চেষ্টা করেছি যাতে সেটা রেপ্লিকেট করতে পারি। যখন ফর্ম খারাপ গিয়েছে ওটার থেকেই শিক্ষা নিয়েছি।
প্রশ্ন:- রঞ্জি ট্রফিতে দুটো সেঞ্চুরি দিয়ে শুরুর পর ফর্ম খারাপ হলো। ভুলটা পয়েন্ট আউট করতে পেরেছো?
রমন:- হান্ড্রেড পার্সেন্ট ভুল ছিলোই। আমার ব্যাটিং এর ভিত ডিসিপ্লিনড ব্যাটিং এবং সেটা হচ্ছিল না। ওপেনার হিসেবে কঠিন উইকেট আমরা পাই, আমরা জানি ভালো উইকেটে খেলা হয় এবং অবশ্যই যেদিন স্টার্ট পাবো, কনভার্ট করা উচিৎ। সেখানে আমি রাজস্থান ম্যাচে দুটো ইনিংসে স্টার্ট পেয়েও বড়ো রান পাইনি। ওপেনার হিসেবে স্টার্ট পেলে সেটাকে বড়ো করতে হবে। ডিসিপ্লিনড ব্যাটিং করতে হবে। দুটো সেঞ্চুরির ক্ষেত্রে আমি অনেক বল খেলি, ছাড়ার বল ছাড়ি – ডিসিপ্লিনড ব্যাটিং করি।
প্রশ্ন:- কর্ণাটক ম্যাচে কে. এল. রাহুলের ক্যাচ ধরেছিলে। এর আগে অভিষেক রমনকে এতো ভালো দেখা যায়নি। কি নতুন এফোর্টস দিচ্ছ?
রমন:- ফিল্ডার হিসেবে বরাবর ভালোই ছিলাম। হয়তো রুকুদা, অভিমন্যুর মতো টপ ক্লাস ছিলাম না তবে সেফ ফিল্ডার ছিলাম। এখনও কাজ করি ফিল্ডিংয়ের জন্য। আমার স্ট্রং পয়েন্টে এখনও কাজ করি। ক্লোজ-ইন ফিল্ডিং, রিফ্লেক্স ক্যাচ ধরা সব নিয়েই কাজ করছি। শেষ বছর ফাইনালে চারটে ক্যাচ ধরি যদিও খেলিনি। কারণ ফিল্ডিং এমন জিনিস ওখানে সবসময় অবদান রাখা যায়।
প্রশ্ন:- নেটে দেখলাম স্কুপের মতো ইম্প্রোভাইজ করা শট ট্রাই করলে। নতুন ডেভেলপ করেছ?
রমন:- টিটোয়েন্টিতে আমার যে খেলা সেটা ফিল্ড গ্যাপ খুঁজে খেলা। আমার খেলা চারটে বা পাঁচটা ছয় মেরে পাওয়ার-হিটারের নয়। আমাকে যদি একশো করতে হয় তবে বেশী সংখ্যক চার মারতে হবে। বোলার দেখে মারার জন্য প্রয়োজন বাড়তি রেঞ্জ এবং সেটা উইকেটের সামনে বা পেছনে – দুই ভাবেই হয়। তাই চেষ্টা করছি।
প্রশ্ন:- বিজয় হাজারেতে রাজস্থানের সঙ্গে একটা সেঞ্চুরি করেছিলে। দীপক চাহার রাহুল চাহার খলিল অহমেদ রবি বিষ্ণোই মিলিত বোলিং অ্যাটাকের সামনে কতটা চাপ ছিল?
রমন:- অবশ্যই চাপ ছিলো কারণ ওয়ান-ডে-তে নিয়মিত ছিলাম না। অভিমন্যু দুটো ম্যাচ খেলেনি বলে আমি খেলি। সার্ভিসেসের সঙ্গে একটা সেঞ্চুরি করি। তারপর টিম কম্বিনেশনের জন্য বাদ যাওয়ার চাপ ছিলো। ঐদিন জানতাম ওটা শেষ সুযোগ, রান করতে না পারলে আর ফিরবো না। তার মধ্যে ঐদিন ৩০০ তাড়া করতে গিয়ে উইকেট চলে যায় এবং শুধু রান-রেট ঠিক রাখার চেষ্টা করি। সেদিন রান করে খুব আত্মবিশ্বাস পেয়েছিলাম যে ওই বোলিংয়ের সামনেও আমি ম্যাচ জেতাতে পারি।
প্রশ্ন:- তোমাদের জুনিয়র লেভেলে ডে’স ম্যাচের সময়ে কোনো সাদা বলের ম্যাচ হতোনা। এটা কি তোমাদের কোথাও পিছিয়ে দিয়েছে?
রমন:- হান্ড্রেড পার্সেন্ট। বেঙ্গল ক্রিকেটে হোয়াইট বলে উন্নতি হচ্ছেনা অনেকে বলে কিন্তু যদি দেখা যায় আমরা লাস্ট ইয়ার অনেক ভালো খেলেছি। কারণ বাইজুস্ খেলেছি ফলে অনেক ম্যাচ পেয়েছি। প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলা সবসময় অন্যরকম প্রভাব ফেলে। আগে আমরা ভালো টিমের বিরুদ্ধে ম্যাচ পেতাম হয়তো বছরে পাঁচটা, ফলে গ্যাপটা অনেক বেশী হয়ে যায়। এই গ্যাপটা কমলে প্লেয়াররা বেটার খেলবে।
প্রশ্ন:- রক্স, বাইজুস্ এর মতো টুর্নামেন্ট প্লেয়ারদের কতটা অ্যাডভান্টেজ দিচ্ছে?
রমন:- আমার মনে হয় এই টুর্নামেন্ট যেভাবে হয়েছে তার থেকে আরো ভালোভাবে হতে পারে। বৃষ্টির জন্য ৫ ওভার, ১০ ওভার করে খেলা হচ্ছে এবং যদি টাইমিং ভালো করে, ভালো উইকেটে খেলি তবে অনেক উন্নতি হবে। অনেক প্রতিভাবান ছেলে আছে যারা উপকৃত হতে পারে এই টুর্নামেন্টের জন্য। সিএবির উদ্যোগ খুবই ভালো। তবে কুড়ি ওভার খেলা হোক, ভালো উইকেটে খেলা হোক। প্লেয়াররা নিজেদের সেরাটা দিক, এটাই গুরুত্বপূর্ণ। যখন আপনি লাইভ খেলছেন এবং দশটা লোক দেখছে, সেই চাপ নেওয়াও খুব গুরুত্বপূর্ণ।