প্রথম বলেই বাউন্ডারি মারার বিষয়ে বদনাম রয়েছে বীরেন্দ্র শেহবাগের। ২৯৩ থেকে ছয় মেরে ২৯৯-এ পৌঁছতে চেয়েছিলেন বীরু, শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ব্র্যাবোর্ন স্টেডিয়ামে। কিন্তু আউট হয়ে গিয়েছিলেন নজফগড়ের সম্রাট তবু তাঁর মুখে কখনও আফশোষ শোনা যায়নি। ওটা মারার বল ছিল এবং মারার বল থাকলে তিনি অবশ্যই মারবেন। কিন্তু ১০১ ম্যাচে যিনি তিন অঙ্কের রান দেখেননি, তাঁকে তো শুরুতে দেখে খেলতেই হবে।
আরও একটি শূন্য। পরপর দুই ইনিংসে শূন্য। সবমিলিয়ে ১০১ ম্যাচে তিন অঙ্কের রান করতে পারেননি বিরাট কোহলি। দুশ্চিন্তার ছায়া সর্বত্র। রবি শাস্ত্রী বলেছেন, বিশ্রামে গিয়ে তরতাজা হয়ে ফিরে আসতে। জানি না প্রাক্তন ভারতীয় কোচ নিজে কোচ থাকাকালীন এই পরামর্শ কেন দেননি। তিনি যখন ভারতীয় দলের কোচ ছিলেন, তখনও একটা সময়ে ব্যর্থতা বিরাটের নিত্যসঙ্গী ছিল। এখন সমস্যাটা আরও বড় আকার নিয়েছে। একেবারেই ভাল লাগছে না, দ্রুত বিরাটকে প্যাভিলিয়নে কালো মুখ করে ফিরতে দেখে। একেবারেই নয়।
কী করা উচিত কোহলির? এ ব্যাপারে সুনীল গাভাসকার অবশ্য রবিবার সকালে স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, “ক্রীড়াবিদদের কাছে মাঠই হলো মন্দির, মসজিদ, গির্জার মতো”। পরোক্ষে যেন নিজের বক্তব্যের নির্যাসটা তুলে ধরলেন ছোট্ট একটা মন্তব্যের মাধ্যমে। তিনি কি বোঝাতে চাইলেন? সুনীল গাভাসকারের কথায়, ‘আগেও তো বহুবার বলেছি, ড্রেসিংরুমে বসে রান সংখ্যাকে বাড়ানো যাবে না। আমি চাই ফ্যাফ এর সঙ্গে কোহলি আলোচনা করে ঠিক করুক, ও কী কী করতে চাইছে। ফ্যাফ যেহেতু দলের অধিনায়ক, তাই দলের সবচেয়ে সিনিয়র সদস্য হিসেবে অধিনায়কের সঙ্গে আলোচনা করতেই পারে বিরাট। ক্রিজে গিয়ে প্রথম থেকেই চার-ছয় মারার প্রয়োজন নেই। আমি বিশ্বাস করি এখনও বিরাট আট-দশ ওভার ক্রিজে থাকলে সহজেই ৬০-৭০ রান করতে পারবে। শুরুতে খুচরো রান নেওয়ার দিকে মন দিক। শুরুতে যত খুচরো রান নেবে, তত রক্ত সঞ্চালন ঠিকঠাক হবে এবং উইকেটের চরিত্র সম্পর্কে একটা ধারণাও তৈরি হয়ে যাবে। বিরাটের এই স্বাধীনতাটুকু প্রাপ্য। আমি নিশ্চিত বিরাট দশ ওভার ধরে ক্রিজে থাকলে অবশ্যই এই রান-খরা কাটিয়ে উঠবে। সমস্ত ক্রীড়াবিদের জীবনেই খারাপ সময় আসে এবং এই সময় নিজের সঙ্গেই নিজেকে লড়তে হয়, চ্যালেঞ্জ নিতে হয়। বিরাট শুরুতে মন দিক খুচরো রানের দিকে, ক্রিকেটের ব্যাকরণ বইতে ইংরাজি ‘V’ শেপের যে কথা বলা হয়েছে, শুরুতে সেই প্রথা অনুসরণ করে খেলুক। বিরাট যে ঘরানার ক্রিকেটার, তাতে একবার সেট হয়ে যাওয়ার পর বড় শট নিতেই পারে। কিন্তু শুরুতে যদি অযথা আক্রমণাত্মক হতে গিয়ে ওর উইকেট চলে যায়, কার লাভ হবে? না নিজের, না দলের। পুরনো ছন্দে ফেরার জন্য একটা বড় রানই যথেষ্ট বিরাটের এবং ওই বড় রানের জন্য শুরুতে সাবধান হতে হবে বিরাটকে।“ এখন ব্যাপার হচ্ছে, এমন পরামর্শ পছন্দ না-ই হতে পারে বিরাটের। তিনি সুনীল গাভাসকার, তাঁর মতামতের উপর আমাদের অনেকের আস্থা থাকলেও, বিরাটকেও যে এই পরামর্শ শুনতেই হবে, একথা আমরা বলছি না। বিরাট এই পারফরম্যান্স অগ্রাহ্য করে খেলা চালিয়ে যেতেই পারেন। তিনি এটা ভালভাবেই জানেন যে এত শূন্য করার পরেও আরসিবি তাঁকে বাদ দেবে না, তাহলে এত চিন্তাই বা তিনি কেন করবেন?