প্রাক সরস্বতী পুজোর ইডেন গার্ডেন্স। মাঠে খেলোয়াড়, গ্রাউন্ডস্টাফ বাদে বাকি কিছু লোক রয়েছেন শুধুমাত্র তিন নম্বর গেট দিয়ে ঢোকা কিছু বাংলা ক্রিকেট অনুরাগী এবং এঁদের মধ্যে অনেকে আবার শুধু যাতায়াতই করছেন মাত্র।
বাংলার তোলা ৩১৮ রান তাড়া করতে নেমে প্রথমে কুনাল চান্ডেলাকে হারালেও খেলা বেশ ধরে নিয়েছেন অন্য ওপেনার হিতেন দালাল এবং অধিনায়ক ধ্রুব শোরে। এমনই অবস্থা যে মুকেশ কুমারের অফ দ্য উইকেট জোরে আসা বলেও কাজ হচ্ছেনা এবং ঠিক ততটাই ব্যর্থ আকাশদীপ। নিজেদের মধ্যে প্রায় ১১৫ বল খেলে ৬৮ রানের পার্টনারশীপ করে এগিয়ে যাচ্ছেন দুই দিল্লীজাত ব্যাটার।
বল হাতে এগিয়ে এলেন একজন প্রায় ছয়ফুট উচ্চতার বোলার যিনি ময়দানে নিজের ইনসুইং এর কারণে বেশ পরিচিত। দৌড়ে এসে সামান্য ঝাঁপিয়ে ফোর্থ স্ট্যাম্প লাইনে ফেললেন বল। হিতেন দালাল খেলতে খেলতে কিছুটা তাঁর ইনসুইং বুঝলেও বুঝতেই পারেননি যে এতটা বেশি মাত্রার ইনসুইং আছে ত্রিবেণীর ওই মিডিয়াম ফাস্ট বোলারের। হিতেন বল অফস্ট্যাম্পের বাইরে যাবে ভেবে ব্যাট তুলে দিতেই আবিষ্কার করলেন তাঁর অফস্ট্যাম্পের বেল উড়ে গিয়েছে। স্কোরবোর্ড দেখালো – হিতেন দালাল বোল্ড এন. দাস ৪০(৭৮)।
তাহলে নীলকণ্ঠ দাসের বিশেষত্ব কোথায়? ইনিংসের শুরুতে ব্যাটার যদি ভেবে থাকে যে বল বেশিমাত্রায় ছেড়ে তাকে পুরোনো করবে এবং খুব কম মাত্রায় বল ব্যাটে খেলবে তখনই নীলকণ্ঠ হয়ে ওঠেন ভয়ানক। যদি নতুন বলে তাঁর সঙ্গী হন কোনো ভালো আউটসুইং থাকা বোলার, তবে খুব লাভবান হয়ে ওঠে সেই টিম। সারাক্ষণ ব্যাটারকে থাকতে হয় ব্যস্ত এবং স্বল্প ভুলেই উইকেট দিয়ে আসতে পারেন সেই ব্যাটার।
আজ থেকে তেরো বছর আগে সি. কে নাইডু ট্রফিতে সেমিফাইনাল খেলে বাংলা। এবং সমগ্র টুর্নামেন্টে ২৭৪ ওভার বল করে ৪৬টি উইকেট তুলে নেন নীলকণ্ঠ। বোলিং গড় ছিল ১৩.৭১। উক্ত টুর্নামেন্টে তিনিই হয়েছিলেন সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী এবং তৎকালীন ভারতের সেরা অনুর্ধ-২২ বোলার হয়েছিলেন, অনুর্ধ-২২ স্তরে সেরা খেলোয়াড় হওয়ার জন্য পেয়েছিলেন এম. এ চিদাম্বরম ট্রফি।
সি. কে নাইডু ট্রফিতে কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলার মুখোমুখি হয় কর্ণাটক। প্রথম ইনিংসে বাংলা মাত্র ২১৯ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পরে নীতিন ভিললে, কেম্পায়া অবিনাশ, অমিত বর্মা, গৌরব ধীমান, নিখিল কাশ্যপ এবং লোকেশ অক্ষয়কে প্যাভিলিয়নে ফিরিয়ে কর্ণাটককে ১৪১ রানে গুটিয়ে দেন। এখানেই শেষ নয়। পরের ইনিংসে বাংলা ১০৯ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পরে আবার বল হাতে ৬০ রান দিয়ে পাঁচ উইকেট নেন নীলকণ্ঠ। ফলে বাংলা জিতে যায় ৩১ রানে।
সেই বছর সেমিফাইনালে মুম্বাইয়ের বিরুদ্ধে দুই ইনিংস মিলিয়ে ছয়টি উইকেট নিলেও পরাজয় স্বীকার করে বাংলা। পরের বছর সি. কে নাইডু ট্রফিতে ১০টি উইকেট তুললেও তাঁর বোলিং গড় হয়ে দাঁড়ায় ৪০.৩০। এরপরে আস্তে আস্তে রাজ্য দলের দৌড় থেকে ছিটকে যান নীলকণ্ঠ। ২০১৯-২০ মরশুমেও দিল্লির বিরুদ্ধে অভিষেক করা কষ্টসাধ্য হতো তাঁর জন্য। কিন্তু তা সম্ভব হয় ওই বছর ঈশান পোড়েল ভারতীয় এ দলের হয়ে খেলতে যাওয়ায়। বর্তমানে তাঁর প্রথম শ্রেণীর কেরিয়ারে ৪টি ম্যাচ থেকে সংগ্রহ ১৪টি উইকেট এবং বোলিং গড় ২০। প্রথম মরশুমে দিল্লির বিরুদ্ধে অভিষেকের পরে রাজস্থান ম্যাচে দ্বিতীয় ইনিংসে তুলে নেন ৪টি উইকেট এবং কোয়ার্টার ফাইনালে ওড়িশার বিরুদ্ধে তিনটি উইকেট নিয়েছিলেন নীলকণ্ঠ।
এখন রাজ্য দলের হয়ে কতগুলো ম্যাচ তিনি পাবেন তা সময়সাপেক্ষ তবে এখনও নিজের ক্লাবদলের হয়ে পুরোদমে লড়াই জারি রাখবেন নীলকণ্ঠ। দমে যাওয়ার পাত্র একদমই যে নন এই ত্রিবেণীর ছেলে।