দু’মাস ধরে টি২০–র মারকাটারি ক্রিকেট শেষ। সাঙ্গ হয়েছে আইপিএলের আসর। দুমধাড়াক্কা ব্যাটিংয়ের মেগা শো শেষ হতেই এবার নজর ওভালে। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে মুখোমুখি ক্রিকেটের দুই শক্তিধর দেশ। ভারত ও অস্ট্রেলিয়া। এবার লড়াই অসীম ধৈর্যের, টেকনিক ও টেম্পারামেন্টের।
আইপিএলের আবহ থেকে বেরিয়ে মাত্র কয়েকদিনই সময় পাচ্ছেন ভারতীয় ক্রিকেটাররা লাল বলের সঙ্গে মানিয়ে নিতে, বিলেতের আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিতে। নিঃসন্দেহে কঠিন চ্যালেঞ্জ। তাছাড়া, ক্রিকেটারদের সাদা বলে টানা খেলার ক্লান্তি ভোগাতে পারে ভারতকে। আইপিএল শুরুর আগে যদিও বিসিসিআই জানিয়েছিল টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালের কথা মাথায় রেখে সংশ্লিষ্ট ক্রিকেটারদের ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্টে গুরুত্ব দেওয়া হবে। নিজ নিজ ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে নেটে অনুশীলনের সময় ওই প্লেয়াররা লাল বলেও গা ঘামাতে পারবেন। তবু সংশয় কাটছে না।
বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালের জন্য ঘোষিত ভারতীয় দলে একমাত্র চেতেশ্বর পুজারা ছিলেন আইপিএল থেকে অনেক দূরে। তাঁকে এবার কোনও ফ্র্যাঞ্চাইজিই নেয়নি। কিন্তু ক্রিকেট সাধক পুজারা সময় নষ্ট না করে অনেক আগেই চলে গিয়েছিলেন ইংল্যান্ডে, কাউন্টিতে খেলার জন্য। গত মরশুমের মতো এবারও সাসেক্সের হয়ে অনবদ্য পারফরমেন্স করেছেন পুজারা। তাঁর ফর্ম যথেষ্ট স্বস্তি দিচ্ছে ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টকে। এমনকী, সুনীল গাভাসকারের মতো কিংবদন্তিও মনে করছেন যে, পুজারার থেকে অনেকটাই সাহায্য পাবে ভারত। অনেকদিন ধরে ইংল্যান্ডে থাকায় পুজারার অভিজ্ঞতা কাজে লাগবে রোহিত ব্রিগেডের।
বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল এবং ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে পাঁচ টেস্টের অ্যাশেজ সিরিজের গুরুত্বের কথা ভেবে অস্ট্রেলিয়ার অনেক নামী ক্রিকেটারই আইপিএল থেকে দূরে ছিলেন। ফিটনেস ঠিক রাখার পাশাপাশি মানসিকভাবেও তাঁরা তৈরি হওয়ার সময় পেয়েছেন। পুজারার মতো স্টিভ স্মিথ এবং মার্নাশ লাবুশেনও কাউন্টি খেলে নিজেদের তৈরি করেছেন এই দুটি বড় ইভেন্টের জন্য।
গতবার বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে উঠেও ভারতকে হারতে হয়েছিল নিউজিল্যান্ডের কাছে। দীর্ঘ কয়েক বছর ভারত কোনও আইসিসি ট্রফি জিততে পারেনি। এবারও নানা কারণে ওভালে অসিদেরই ফেবারিট বলছেন অনেক বিশেষজ্ঞ। যদিও রবি শাস্ত্রীর মত আলাদা। তিনি বলছেন, ‘অধিকাংশের মতেই ফাইনালে ফেবারিট অস্ট্রেলিয়া। কারণ খেলাটা হচ্ছে ওভালে। কিন্তু এটা এমন একটা টেস্ট যেখানে একদিন খারাপ খেললেই সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। তাই বলব, অস্ট্রেলিয়াকেও সারাক্ষণ সতর্ক থাকতে হবে।’
আইপিএলে বিরাট কোহলি, শুভমান গিল দুরন্ত ছন্দে ছিলেন। আইপিএলে ব্যাটারদের স্বর্গরাজ্যে সামি, সিরাজ চমক দিয়েছেন। ওভালে তাঁরা ঢেকে দিতে পারেন যশপ্রীত বুমরার অভাব। ফরম্যাট বদলে গেলেও তাঁদের আত্মবিশ্বাস কাজে লাগতে পারে ভারতের। উইকেট কিপিংয়ে কে? শ্রীকর ভরত নাকি ঈশান কিষাণ? এই নিয়ে কঠিন পরীক্ষায় পড়তে হতে পারে ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টকে। গতবার ফাইনালে দুই স্পিনারকে খেলানো বুমেরাং হয়েছিল ভারতের কাছে। এবার কী হবে? রবীন্দ্র জাদেজা এবং রবিচন্দ্রন অশ্বিন দু’জনেই কি থাকবেন প্রথম একাদশে? এরকম নানা প্রশ্নের সমাধান করে ফেলতে হবে শীঘ্রই। কারণ হাতে বেশি সময় নেই। তবে শেষপর্যন্ত আইসিসি ট্রফির খরা কাটিয়ে টেস্টে বিশ্বসেরার মুকুট উঠবে ভারতের মাথায়, প্রত্যাশা এটাই।