মাস দুয়েক আগে দুবাই ক্রিকেট স্টেডিয়ামের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা সেই প্রবাসী ভারতীয় যুবককে মনে আছে? যিনি টিম বাসে উঠতে যাওয়া অর্শদীপের দিকে পাঞ্জাবীতে চোখা চোখা শব্দ ছুঁড়ে দিয়েছিলেন? অবশ্য শুধু তিনি কেন? সেদিনের বহু অসভ্য অন্ধ সমর্থকরাই আজ জবাব পেলেন তাঁর করা মাত্র চার ওভারে। অবশ্য প্রথম বলে বাবর আজমকে ফেরানো সমেত চার ওভারে তিন উইকেট পাওয়ার পরও আজ তিনি প্রচারের আলোর বাইরে।
শুধু অর্শদীপ নয়, বল হাতে প্রথমে তিরিশ রানে তিন উইকেট এবং পরে ব্যাট হাতে বিপর্যয় সামলে ৪০ রানের দায়িত্বশীল ইনিংস খেলার পর হার্দিক পান্ডিয়াও আজ ব্যাকসিটে। অন্য যে কোন দিন হলে হার্দিক আজ সমর্থকদের নয়নের মনি হতেন, কিন্তু ক্রিকেট ভগবান আজকের দিনটা লিখেছিলেন অন্য একজনের জন্য।
অর্শদীপের মতো তাঁরও জবাব দেওয়ার ছিল। কথায় বলে সকালই নাকি দিনের পূর্বাভাস দেয়। অথচ তাঁর ‘সকাল’টা শুরু হয়েছিল শান মাসুদের সহজ রান আউট মিস দিয়ে, যিনি কিনা এদিনের পাকিস্তান শিবিরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। অর্থাৎ তিনি ব্যর্থ হলে এবং ভারত গেলে সমালোচকরা কি তাঁকে একেবারে ছেড়ে দিতেন? মনে হয় না। প্রায় তিন বছর কাঙ্খিত ফর্মের ধারেকাছে না থাকার পর এশিয়া কাপের শেষ ম্যাচে শতরান পেলেও মন ভরেনি সমর্থকদের। প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে যাওয়ার পরে গুরুত্বহীন ম্যাচে দুর্বল প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে শতরান ব্যক্তিগত ক্রিকেটীয় ব্যাঙ্ক ব্যালান্সকে পুষ্টি দিতে পারে, হারানো আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে পারে, কিন্তু তার বেশী সত্যি কি কিছু দিয়েছিল? কিন্তু এদিন যা করলেন, তাঁর অতি বড় সমালোচকও মুখ বন্ধ করতে বাধ্য। টিম এশিয়া কাপে ব্যর্থ, বহুদিন বড় ট্রফি নেই, চোট বিতর্কে জর্জরিত, তার উপর প্রতিযোগিতার প্রথম ম্যাচেই চিরপ্রতিদ্বন্দীর সামনে ১৬০ রানের আপাত সাধারণ টার্গেট তাড়া করতে গিয়ে ৩১ রানে চার উইকেট হারিয়ে প্রায় কোমায়। সেই অবস্থা থেকে অভিজ্ঞ নাবিকের মতো যেভাবে তীরে তরী ভেড়ালেন, সেটা তিনি বিরাট কোহলি বলেই সম্ভব। পরিস্থিতির বিচারে নিজের কেরিয়ারের অন্যতম সেরা টি২০ ইনিংস টাই শুধু খেললেন না, সেই সঙ্গে এই বার্তাও দিয়ে দিলেন যে আক্ষরিক অর্থেই তিনি ফেরত এলেন। ঠিক যেভাবে সমর্থকরা, সতীর্থরা তাঁকে দেখতে চেয়েছিল এবং সবচেয়ে বড় কথা নিজে নিজেকে যেভাবে দেখতে চেয়েছিলেন।