এককালে শ্রীলঙ্কা ছিল ভয় ধরানো। বিভিন্ন বিশ্বমানের খেলোয়াড় নিয়ে সেই সময় শ্রীলঙ্কা টক্কর দিতো বিভিন্ন প্রথম সারির দলগুলোর সঙ্গে। বর্তমানে সেই রাবণও নেই, সেই লঙ্কা নেই। বলা ভালো রাবণ যাওয়ার সঙ্গেই লঙ্কা হত হয়েছে। আজ যে বিশেষণ তাদের জন্য সবচেয়ে প্রযোজ্য তা হলো “আনপ্রেডিক্টবল”।
কেন বলছি? দিনের শুরুতে ৪৪৭ রান তাড়া করতে নেমে এক উইকেট হারানো দলের ধসে পড়ার সম্ভাবনা বরাবরই সপ্তমে থাকে যদি কোনো দলের বোলিং বিভাগে মহম্মদ শামি, জসপ্রীত বুমরাহ, রবিচন্দ্রন অশ্বিন, রবীন্দ্র জাদেজা ও অক্ষর প্যাটেল থাকেন। কিন্তু তাঁদের সামনে গতদিনের অপরাজিত দুই ব্যাট, কুশল মেন্ডিস এবং দিমুথ করুনারত্নে ছিলেন মাটি কামড়ে। গতদিনের ২৮-১ অবস্থা থেকে দলগত ৯৭ রানে পৌঁছতে বেশি সময় নেয়নি শ্রীলংকা। কিন্তু তারপরে আবার ছন্দপতন। রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বলে ঋষভ পন্থর হাতে স্ট্যাম্প হয়ে কুশল মেন্ডিস (৫৪) ফিরে যাওয়ার পরেই আবার শ্রীলঙ্কা ব্যাটাররা হয়ে পড়েন টালমাটাল।
গত ইনিংসে দুর্দান্ত শুরু করা অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস জাদেজার বলে ফিরে যান মাত্র এক রান করে এবং গত ইনিংসে নিজের খেলার প্রতি বেশ ভালো নিয়ন্ত্রণ রাখা নিরশন ডিকওয়েলাও দুর্ভাগ্যজনক ভাবে অক্ষর প্যাটেলের একটি হঠাৎ নিচু হওয়া ডেলিভারিতে ফিরে গেলেন ১২ রানে। এরপর ছিলেন চরিত আসলঙ্কা। তিনি বেশী কিছু করতে সক্ষম যে হবেন না তা বোঝা গিয়েছিলো প্রথমেই এবং এরপর অক্ষরই ফেরালেন তাকে।
আজ বিশেষজ্ঞ মহল থেকে বারবার বলা হচ্ছিল দিমুথ করুনারত্নের অন্যপ্রান্ত থেকে কোনো সহযোগিতা না পাওয়ার কথা। কিন্তু এত কিছু সত্ত্বেও গোলাপি বলে ভারতীয় বোলিং ব্রিগেড এর সামনে একটি তিন অঙ্কের রান করে নিজের দুরন্ত ব্যাটসম্যানশিপের পরিচয় দিলেন দিমুথ। কিন্তু ব্যক্তিগত ১০৭ রানের মাথায় যখন সিরিজে তৃতীয়বারের মতো যখন তার মিডল স্ট্যাম্প উড়লো তখন যেন তার দুর্বলতা আবার বেরিয়ে পড়ল, ইনসুইং এর সামনে। তবুও আজ দর্শকদের করতালি এবং সতীর্থদের অভিনন্দন ইনিংসটির মূল্য বুঝিয়ে দিচ্ছিল বারবার।
এরপর ম্যাচের কিছুই বাকি ছিলোনা। তবুও যে মুহূর্ত শিরোনামে উঠে এল, তা হলো জসপ্রীত বুমরার বলে বোল্ড হওয়ার পরে সুরঙ্গ লাকমালের সমগ্র ভারতীয় ব্রিগেড থেকে অভিনন্দিত হওয়া। একে একে এগিয়ে এলেন বুমরা-পন্থ-কোহলি থেকে রোহিত শর্মা সবাই। অভিবাদন মাত্রাই বুঝিয়ে দিচ্ছিলো, একজন ৭০ টেস্ট খেলা জোরে বোলারের গুরুত্ব। হয়তো বিশ্ব ক্রিকেটের আঙ্গিকে ৩৬ গড়ে ১৭১ উইকেট খুব বড় কিছু নয় তবুও শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটের আঙ্গিক বলছে শেষ পাঁচ বছরে বল হাতে তিনিই শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ম্যাচ উইনার।
অগত্যা লাকমলের উইকেটের পরেই প্রমোদ জয়বিক্রমার একটি ব্যর্থ স্লগ-সুইপ শর্ট মিড-অনে শামির হাতে জমা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভারত জিতলো টানা পঞ্চদশ ঘরোয়া টেস্ট সিরিজ এবং তৃতীয় গোলাপি বলের টেস্ট। আইপিএল শুরু হতে এখনও প্রায় ১২দিন বাকী। কিন্তু তার আগে ১২০ স্ট্রাইক রেটে আইপিএলের আগেই আইপিএলের দামামা এবং শ্রীলঙ্কা বোলারদের ১২টা বাজানো ঋষভ পন্থই যে সিরিজসেরা হবেন এই বিষয় আর আশ্চর্য কি?