দিনের শুরুতে ম্যাচ থেকে আশা যা ছিলো ম্যাচের শেষেও তাই। আজ দর্শনীয় বিষয় দিনের শুরুতে ছিলো ৮৫-৬ অবস্থা থেকে আর কতদূর এগোতে পারে দ্বীপরাষ্ট্রীয় দল এবং বেশিক্ষণ ফিল্ডিং পজিশনে থাকতে হয়নি ভারতীয় দলকে।
দিনের শুরুতেই পুল করতে গিয়ে লাসিত এম্বুল্ডানিয়ার টপ এজ যখন ঋষভ পন্থের হাতে গেলো তারপরেই শুরু হলো পরাজয়যাত্রা। কিছু পরে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বলে সুরঙ্গ লাকমাল (১) বোল্ড হলেন এবং এরপর জাসপ্রিত বুমরাহ একটি দুর্দান্ত শর্ট বলে পরাস্ত করে নিরশন ডিকওয়েলা (২৩) কে ফেরালেন। বিশ্ব ফের্নান্দো রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বলে স্টাম্পড হওয়ায় শ্রীলঙ্কা শেষ হয় ১০৯ রানে এবং ভারতকে হাতে দিয়ে যায় ১৪৩ রান।
রবিচন্দ্রন অশ্বিন আজ পেলেন ৬৫০-তম আন্তর্জাতিক উইকেট, জাসপ্রিত বুমরাহ পেলেন নিজের অষ্টম পাঁচ উইকেট এবং ঋষভ পন্থ পেলেন নিজের ১৫০-তম আন্তর্জাতিক শিকার।
ব্যাট করতে নেমে ভারত প্রতিপক্ষকে দাবিয়ে রাখবে এতে খুব বিস্ময় ছিলোনা এবং সৌভাগ্যক্রমে তা হয়নি। শুরুতেই ময়াঙ্ক আগারওয়াল আক্রমণাত্মক খেলে পাঁচটি চারের সাহায্যে ২২ রান করে ফিরে যান লাসিত এম্বুল্ডানিয়ার বলে। এরপর তিন নম্বরে নামা হনুমা বিহারিও ছিলেন আগের ইনিংসের মতো মজবুত। রোহিত শর্মা যখন সুযোগ পেলেই স্ট্রোকের দিকে এগোচ্ছেন তখন হনুমা খুব নজর করে বল খেলতে থাকেন সাবধানী হয়ে। দুজনেই খেলেন ৭৯ বল এবং রোহিত করেন ৪৬, সঙ্গে হনুমা ছিলেন ৩৫ স্কোরে। প্রবীণ জয়বিক্রমা হনুমা বিহারীকে আউট করার পরে বিরাট কোহলিকেও ফেরৎ পাঠান প্যাভিলিয়নে। ব্যক্তিগত ১৩ রানের মাথায় একটি হঠাৎ নিচু হয়ে যাওয়ায় লেগ বিফোর হয়ে ফিরে যান কোহলি।
ক্রিজে এসে এরপর আক্রমণ করতে থাকেন ঋষভ পন্থ। ঋষভ শুরু থেকে পেয়েছিলেন এম্বুল্ডানিয়া-জয়বিক্রমাকে এবং তার প্রতিটি মারই পড়েছে বাউন্ডারির বাইরে। অর্থাৎ ৭টি চার এবং ২টি ছক্কার সাহায্যে মাত্র ২৮ বলে নিজের হাফ-সেঞ্চুরী পূর্ণ করেন ঋষভ। এই সঙ্গে তিনি ভাঙেন কপিল দেবের ৪০ বছর আগে করা ৩০ বলে হাফ-সেঞ্চুরির রেকর্ড এবং বর্তমানে তিনি ভারতের দ্রুততম টেস্ট হাফ-সেঞ্চুরিকারী খেলোয়াড়।
শ্রেয়স আইয়ার আগের ইনিংসের মতো দ্রুততায় যাননি। বরং তিনি চেয়েছিলেন ধীরে ধীরে নিজের রান বাড়াতে এবং বেশ ধৈর্যশীল হয়ে স্পিনারদের বল দেরিতে খেলে নিজের ইনিংসের গাড়ি এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। বর্তমানে তিনি প্রথম ভারতীয় হিসেবে করলেন গোলাপি বলের টেস্টে দুই ইনিংসেই হাফ-সেঞ্চুরি। যখন ব্যক্তিগত ৬৭ রানের মাথায় প্রবীণ জয়বিক্রমার বল তার প্যাড ছুঁলো তখন সেঞ্চুরির আশায় এক ঘটি জল পড়লেও দর্শকদের করতালি উপচে পড়ে জানান দিলো কতো দুর্দান্ত কাজ তিনি করেছেন!
এরপর ভারতের বাকি ছিলো ৩০০ রানের বৈতরণী পেরোনোর কাজ। মহম্মদ শামি এসে প্রতিপক্ষীয় বাঁহাতি স্পিনারকে টার্ন এর বিরুদ্ধে গিয়ে মিড-উইকেট অঞ্চল দিয়ে দুটি বাউন্ডারি এবং মিড-অন দিয়ে একটি ছক্কা মেরে দু’শো স্ট্রাইক রেটে ১৬ রান করে সেই কাজও করলেন অনায়াসভঙ্গিতে।
ভারত ৩০৩ রানে শেষ করায় শ্রীলংকার সামনে ৪৪৭ এর স্কোর। বিগত ইনিংসে ১০৯ রানে পরাস্ত হওয়া দলের কাছে এই স্কোর পর্বতসম বলা খুব কম বিশেষণ দেওয়া। উপরন্তু অভিজ্ঞ লাহিরু থিরিমানে জসপ্রীত বুমরাহর প্রথম বলে ফিরে যাওয়ায় কাজ আরো কঠিন।
যতই কুশল মেন্ডিস ও দিমুথ করুনারত্নেকে আজ জমাট লাগুক, শেষরক্ষা হবেনা এ তো প্রায় জানা কথা। দিনের শেষে শ্রীলংকার কিন্তু ২৮ রানে এক ডাউন।