ওবেদ ম্যাকয়কে গুজরাট টাইটান্স ইনিংসের প্রথম বলটি ফাইন-লেগ অঞ্চল দিয়ে ছক্কা মেরে সমগ্র আহমেদবাদে যেন জয়োচ্ছাস ছড়িয়ে দিলেন পাঞ্জাব-তনয় শুভমান গিল।
অবশ্য গুজরাটের জয়লাভের সূচনার আভাস যেন প্রথম ইনিংস থেকেই দিতে শুরু করেছিলেন হার্দিক হিমাংশু পাণ্ড্য। জস বাটলার যখন পাণ্ড্যর আউটসাইড-অফ, লেংথ বলকে থার্ড-ম্যানে পাঠাতে গিয়ে ঋদ্ধিমান সাহার গ্লাভসে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফিরে গেলেন তখনই যেন গুজরাট ড্রেসিংরুম থেকে আহমেদাবাদ স্টেডিয়াম – সকলেই বুঝে নিয়েছিল যে প্রথমবার অংশগ্রহণ করেই আইপিএলে বাজিমাত করতে চলেছে গুজরাট টাইটান্স। রাজস্থান ড্রেসিংরুম তখন হাহাকারমগ্ন। ড্রেসিংরুমে বসা লাসিথ মালিঙ্গা ও কুমার সাঙ্গাকারা দেখছেন তাঁদের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ব্যাটারের ফিরে আসার করুণ দৃশ্য। এগারো বছর আগে এই ভারতের মাটিতেই কোনো এক গ্যারি কার্স্টেনের শিক্ষায় শিক্ষিত দল ট্রফি নিয়ে গিয়েছিলো তাঁদের চোখের সামনে থেকে এবং আজ সেই কার্স্টেনের দলের বিজয়োল্লাসের উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে রয়েছেন তাঁরাই।
ক্রিকেটীয় ভাষায় বলে ‘ক্যাপ্টেন্স নক’। আজ যেন সেই ক্যাপ্টেন্স নক খেলে দলকে ফাইনালে বিজয়ী করলেন হার্দিক। পাওয়ার-প্লের মধ্যে ঋদ্ধিমান সাহা (৫) এবং ম্যাথিউ ওয়েড (৮) ফিরে যাওয়ার পরে ব্যাট করতে আসা অধিনায়কের থেকে যে ইনিংস দেখতে চাওয়া উচিৎ, নিজের ৩৪ রানের ইনিংসে যেন সেই সব চাওয়ার প্রতিফলন ঘটালেন হার্দিক। তাঁর ইনিংস যেমন ছিল দায়িত্বশীল, তেমনই তাতে ছিলো ট্রেন্ট বোল্টকে পাঞ্চ করে কভার অঞ্চল দিয়ে চার এবং রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে কাউ-কর্নার দিয়ে ছয়। এবং আজ ৪ ওভার বল করে ১৭ রান দিয়ে ৩টি উইকেট তোলার ম্যাচ জেতানো পারফরমেন্স করে নিজের ফিটনেসজনিত প্রশ্নকে একেবারে ‘ক্যাপ্টেন্স নক’ এর মতো করেই নকআউট করলেন হার্দিক।
যুজবেন্দ্র চাহাল বল করেছেন দুর্দান্ত। হার্দিক পাণ্ড্যকে লেগ স্ট্যাম্পে ফেলা যে বল প্রায় সাত ডিগ্রি টার্ন করে স্লিপে জমা করলো তার তারিফ করতে হয় অবশ্যই, কিন্তু কি করে ভুলবেন গুজরাট ইনিংসের প্রথম ওভারের চতুর্থ বল। ট্রেন্ট বোল্টকে শুভমান গিল লেগ সাইডে ঠেলতে গিয়ে যখন হাল্কা হাওয়ায় তুলে দেন, শর্ট স্কোয়ার লেগে সেই সহজ ক্যাচ ফেলে দিয়েছিলেন চাহাল। সেই গিলই একের পর এক স্ট্রাইক রোটেশন করে রাজস্থান রয়্যালসের কাছ থেকে খেলা হাতের বাইরে বার করে নেন।
দিনের শেষে খেলাটি ক্রিকেট। আজ যাকে রাজা বানাবে, কাল সে ফকির হবে এমনটাই দস্তুর। আর কিছুটা ছিলো ভাগ্য। নাহলে কেন জস বাটলার আজকেই চলতে চলতে থেমে যাবেন? কেন পেস-স্ট্রাইকার শিমরণ হেটমায়ার ব্যর্থ হবেন? কেনই বা লো-স্কোরিং খেলায় খরুচে হয়ে উঠবেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন? সর্বোপরি কেনই বা অতীব সহজ ক্যাচ ফেলবেন চাহাল? সবই হয়তো ললাট-লিখন। যে ললাট-লিখন সদ্যপ্রয়াত শেন ওয়ার্নের দলকে চোদ্দো মরশুম বাদে তাঁর মৃত্যুর বছরেই আইপিএলের ফাইনালে তুলে এবং জেতার এতো কাছে নিয়ে গিয়েও ট্রফি তুলে শ্রদ্ধার্ঘ্য দিতে দেয়নি, কোথাও যেন এসব তারই ফলশ্রুতি।
গুজরাট টাইটান্সকে অভিনন্দন। প্রথমবারেই ট্রফি জয় কিন্তু একেবারেই সহজ ছিলনা।