কাউন্টি ক্যাপসুল ২০২২ – পর্ব ২: জমে ওঠার দিকেই এগোচ্ছে চ্যাম্পিয়নশিপ

এলভি=ইন্স্যুরেন্স কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২২-এর ষষ্ঠ রাউন্ড শেষ হল। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পথেই যে টুর্নামেন্টটি এইবার এগোচ্ছে তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। আগের লেখাতেই বলেছিলাম, এই মঞ্চ নিজেকে প্রমাণ করার এবং ফিরে আসার তা দেশ-বিদেশের সমস্ত ক্রিকেটার বিলক্ষণ জানেন। আর সেই কারণেই নিজেদের উজাড় করে দেন। 

আপাতত আমি বলছি, ডিভিশন-১ নিয়েই। কারণ এটিই এলিট গ্রুপ। 

প্রথম রাউন্ডে নিজেদের একটু মেপে নেয় দলগুলি। কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচ থেকেই ছিল আঙুলের নখ শেষ হয়ে যাওয়া খেলা। সমারসেট এক উইকেটে জেতে এসেক্সের বিরুদ্ধে। টনটনে প্রথমে ব্যাট করে সমারসেট করে মাত্র ১০৯ রান। কিন্তু ক্রেইগ ওভারটনের মার্জিত সুইংয়ের ভরসায় (৭/৫৭) এসেক্সকে মাত্র ১৮০ রানের মধ্যে সীমিত রাখে তারা। কিন্তু আবার ব্যাটিং বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়  সমারসেট (১৫৪)। শ্যেন স্ন্যাটেরের (৬/৩৬) আগুনে বোলিং ভেঙে দেয় তাদের প্রতিরোধ। চতুর্থ ইনিংসে এসেক্সের টার্গেট ছিল ৮৪। কিন্তু তাদের পথ ছিল কাঁটা বিছোনো। আবার ধাক্কা দেন ক্রেইগ ওভারটন (৬/৩০) এবং তাঁকে যোগ্য সঙ্গত করেন অস্ট্রেলিয়ান পিটার সিডল (৩/২৫)। এসেক্স মাত্র ৪ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে তখন ধুঁকছে। এই সময় একদিকে খেলা ধরেন ম্যাট ক্রিচলে। ১৭ রানের গুরুত্বপূর্ণ একটি ইনিংস তিনি খেলেন। কিন্তু পর পর দুটো উইকেট হারিয়ে আবার বিপদে পড়ে এসেক্স। ৬/২৮ থেকে খেলা ধরেন দুই অ্যাডাম – অ্যাডাম রোসিংটন এবং অ্যাডাম হোয়াটর। প্রতিটা বল গন্ধ শুঁকে খেলার চেষ্টা করেন তাঁরা। ছোট মাঠে রানের ফুলঝুরি ছোটানোর বদলে জোর দেন ভি-র মধ্যে বল রেখে খুচরো রান নিতে। দলীয় ৫৭ রানের মাথায় ওভারটনের লেগ কাটার উইকেটের সামনে অ্যাডাম হোয়াটরের (১৭) পা পেয়ে যায়। ৩ রান পর পড়ে যায় অষ্টম উইকেট। সমারসেট তখন অসাধ্য-সাধনের গন্ধ পাচ্ছে। নবম উইকেটে শ্যেন স্ন্যাটের ৯ রানের একটি নাছোড় সঙ্গত দেন রোসিংটনকে। ২৩ রান যোগ হয়। কিন্তু স্কোর যখন দুই দলের সমান, তখনই শ্যেন আউট হয়ে যান। রুদ্ধশ্বাস টাই টেস্টের সম্ভাবনা তখন প্রবল। একদিকে টেল এন্ডার আর অন্য দিকে ওভারটন। ওভারের বাকি তখনও তিন বল। ওভারের শেষ বলে এলবিডব্লিউর আবেদনও ওঠে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ লেগবাই এসেক্সের ঘরে এনে দেয় গুরুত্বপূর্ণ ৩ পয়েন্ট। 

যদিও এসেক্স এর পর থেকেই বেশ গুবলেট করেছে। পরের ম্যাচেই ওয়ারউইকশায়ারের কাছে ১০ উইকেটে হারে তারা। তারপর ফলো-অন করে হারের মুখে কোনও মতে ড্র করে নর্থহ্যাম্পটনশায়ারের সঙ্গে। বরং পঞ্চম রাউন্ডে ইয়র্কশায়ারের সঙ্গে বেশ ভালো খেলেই ড্র করে তারা। আর ষষ্ঠ রাউন্ডে ল্যাঙ্কাশায়ারকে ইনিংসে হারিয়ে এখনও অবধি ৭৬ পয়েন্ট নিয়ে পঞ্চম স্থানে আছে এসেক্স। 

দৌড়ে সবথেকে এগিয়ে থাকা সারে ৬ ম্যাচে ৩টি জিতে এবং ৩টি ড্র করে ১০৫ পয়েন্ট পেয়েছে। এই দলটি জেতা এবং ড্র হওয়া ম্যাচ থেকে প্রচুর বোনাস পয়েন্ট ঘরে তুলেছে। তাই হ্যাম্পশায়ার ৪টি ম্যাচ জিতেও এখনও দুই নম্বরে। তাদের সংগ্রহ ১০২। বোনাস পয়েন্টই কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপ জেতার একমাত্র কৌশল। 

তিন এবং চার নম্বরে যথাক্রমে ইয়র্কশায়ার (৯০) এবং ল্যাঙ্কাশায়ার (৮৭)।  এখানেও বোনাস পয়েন্ট বেশি পাওয়ার জন্য কম ম্যাচ জিতেও ইয়র্কশায়ার এগিয়ে। এই দলটি আমাদের রনজি ট্রফির নিরিখে মুম্বইয়ের মতো। বহুবারের চ্যাম্পিয়ন। ধীরে শুরু করেও যেকোনও মুহূর্তে সব হিসেবে নিকেশ উল্টে দিতে পারে। দলে জো রুটের মতো খেলোয়াড় আছেন। আছেন প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে সাড়ে চারশোর বেশি উইকেট পাওয়া বোলার স্টিভেন প্যাটার্সন। ওয়ারউইকশায়ারকে তারা প্রায় হারিয়ে দিয়েছিল। প্রথমে বল করে ওয়ারউইকশায়ারকে  তারা বেঁধে রাখে মাত্র ২৪৪ রানে। তারপর নিজেরা করে ৪৪৯ রান। এরপর ওয়ারউইকশায়ারের টপ অর্ডারে ভাঙ্গন ধরাতেও সক্ষম হয় তারা।  চ্যাম্পিয়ন ওয়ারউইকশায়ার তাদের দ্বিতীয় ইনিংসে ৫৭ রানে তিন উইকেটে চতুর্থ দিন শুরু করে, ১৪৮ রানের ঘাটতি ছিল, এবং যখন দিনান্তে আম্পায়াররা খেলার অন্তিমকাল ঘোষণা করছেন, তখন উইল রোডস ও স্যাম হেইনের ধৈর্য্যশীল জোড়া শতরানে ভর দিয়ে তারা ৪৭ রানের লিড নিয়ে তিন উইকেটে ২৫২ রান করে।

হেইন এবং তাঁর অধিনায়ক রোডস, এই উভয় কাউন্টির সাথে চ্যাম্পিয়নশিপ বিজয়ী, চতুর্থ উইকেটের জন্য ১০৪ ওভারের মধ্যে ২২৭ রান করেন এবং নিজ নিজ ব্যক্তিগত স্কোর ১০৯ এবং ১১১-তে শেষ করেন।

তবে ল্যাঙ্কাশায়ারের বিরুদ্ধে জোর বেঁচে যায় ইয়র্কশায়ার। লিডসের স্যাঁতস্যাঁতে পিচে ইয়র্কশায়ার টসে জিতে বল করার সিদ্ধান্ত নেয়। ল্যাঙ্কাশায়ার ৯ উইকেটে ৫৬৬ রান করে। জবাবে ঘরের ছেলেরা ৩৭৯ রানে গুটিয়ে যায়। ফলো-অন করতে নেমে নিয়মিত উইকেট হারালেও খেলার শেষে ৬ উইকেটে ১৬৯ রান করে পয়েন্ট ভাগাভাগি করে নেয়। 

পাঁচ নম্বরে এসেক্স, এর কথা আগেই বলেছি। ছয় নম্বরে আছে ৭৩ পয়েন্ট নিয়ে গতবারের চ্যাম্পিয়ন ওয়ারউইকশায়ার। নর্থহ্যাম্পটনশায়ার এখনও কোনও ম্যাচ জেতেনি। কিন্তু ৫টি ড্র এবং বোনাস পয়েন্টের সুবাদে তারা ৬৬ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের মাঝামাঝি আছে। মোটামুটি এই দলটি এই রকম অবস্থানেই থাকে। অথচ সমারসেট ২ টি ম্যাচ জিতেছে, কিন্তু পয়েন্ট মাত্র ৬০। কারণ, বাকি ৪টি তেই তারা হেরে বসে আছে। এসেক্সের বিরুদ্ধে হারের কথা তো বললামই। সারের বিরুদ্ধেও চতুর্থ ইনিংসে ২৩৭ রান তারা ডিফেন্ড করতে পারেনি। আর প্রথম ম্যাচে হ্যাম্পশায়ারের বিরুদ্ধে লজ্জার ইনিংস ডিফিট। দলটির আরও বড় সমস্যা হল, বোনাস পয়েন্ট কম পাওয়া। 

করুণ অবস্থায় শেষ দুটি দল – কেন্ট (৫৩) এবং গ্লস্টারশায়ার (৩৫)। দুটি দলই অবনমনের আওতায় রয়েছে। 

বোনাস পয়েন্ট নিয়ে বারবার এতো জোর দিচ্ছি, তার কারণ, টুর্নামেন্ট যত এগোবে, বোনাস পয়েন্ট টেবিলের পজিশন নির্ধারণে তত বড় ভূমিকা নিতে থাকবে। এমনকি, কম জিতলেও বেশি বোনাস পয়েন্ট লীগ তালিকায় যেকোনও দলকে এগিয়ে দিতে পারে। বোনাস পয়েন্টের জটিল গণনা আমার আগের পোস্টে উল্লেখ করেছি। কাউন্টি ক্রিকেট শুধুমাত্র জেতা-হারায় বিশ্বাসী নয়। ধারাবাহিক পারফরম্যান্সে বিশ্বাসী। প্রতি সেশন, প্রতি ঘন্টা, প্রতিটি রান, বল, উইকেট এখানে গুরুত্বপূর্ণ। আর খরগোশ-কচ্ছপের ঈশপের গল্প কিন্তু এখানে আকছার ঘটে।