আসন্ন ক্যারিবিয়ান সফরেই নির্ধারণ হবে বিশ্বকাপ দল ও বিরাটের ভাগ্য!

ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সাদা বলের সিরিজে ভারতের দাপট অব্যাহত ছিল। ৫০ রানে প্রথম টি-টোয়েন্টি জয়ের পর, দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচেও ৪৯ রানের বড় ব্যবধানে জয় পেয়েছে ভারতীয় দল। তিন ম্যাচের সিরিজে পরপর দুই ম্যাচ জিতে সিরিজে কব্জা করছে টিম ইন্ডিয়া। তৃতীয় টি-টোয়েন্টি জিতে ভারত ইংল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করতে পারেনি ঠিকই। কিন্তু দ্বিতীয় সারির বোলিং বিভাগ নিয়ে দারুণ খেললো ভারত। প্রায় জয়ের দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরে এসেছে ভারত।

সামনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। এইদিকে লক্ষ্য রেখে বিসিসিআই নির্বাচকরা অস্ট্রেলিয়া ভালো একটা দল পাঠানোর জন্য নজর রাখছেন টি-টোয়েন্টির ম্যাচগুলোতে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত নির্বাচকরা বিশ্বকাপের কয়েক মাস আগেও একটা ভালো একাদশ এখনো দাঁড় করাতে পারল না। সামনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে রয়েছে আরও পাঁচটি টি-টোয়েন্টি। সেখান থেকেই নির্বাচিত করে ফেলতে হবে এবারের বিশ্বকাপ দল।

তাহলে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে তিনটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে ভারত কী পেল? বলা যেতে পারে, বোলিং বিভাগটা ভারতকে কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে। কিন্তু ব্যাটিং বিভাগে যাদের উপর ভারত নির্ভর করে আছে সেই বিরাট কোহলি এবং রোহিত শর্মা রীতিমতো এই সিরিজে ব্যর্থ। আর এই ব্যাপারটাই নির্বাচকদের খুবই ভাবাচ্ছে।

ফিরে আসা যাক বোলিং বিভাগে। এবার প্রথম দুটি

টি-টোয়েন্টিতে ভারতের জয়ে মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন ভুবনেশ্বর কুমার। প্রথম ম্যাচে তাঁর দু্র্দান্ত বোলিং পারফরম্যান্সের জেরে ম্যাচের সেরাও নির্বাচিত হন ভারতের এই তারকা বোলার। এই ম্যাচেই এক রেকর্ড গড়ে ফেলছেন ভুবনেশ্বর কুমার। টেস্ট খেলা দেশগুলির মধ্যে এখন টি-টোয়েন্টির প্রথম ওভারে সর্বাধিক উইকেট নেওয়ার রেকর্ড ভুবির দখলে।  

ভুবি প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ড অধিনায়ক বাটলারকে প্রথম বলে ফিরিয়েছিলেন। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে তাঁর ওপেনিং পার্টনার রয়কেও প্রথম ওভারেই ফেরান ভুবনেশ্বর। এই উইকেটের ফলেই টি-টোয়েন্টিতে প্রথম ওভারে ১৪টি উইকেট নিয়ে রেকর্ড গড়েছেন তিনি। এই ম্যাচেই ইংল্যান্ডের হয়ে মাঠে নামা ইংলিশ অলরাউন্ডার ডেভিড উইলির প্রথম ওভারে ১৩টি উইকেট নেওয়ার রেকর্ড ভেঙেছেন  ভুবনেশ্বর।

এমনিতে টি-টোয়েন্টির ইতিহাসে প্রথম ওভারে ভুবির থেকে একমাত্র ওমানের বিলাল খানই বেশি উইকেট (১৬টি উইকেট) নিয়েছেন। ভুবনেশ্বর এই ম্যাচে তিন উইকেট নেওয়ার সুবাদে যশপ্রীত বুমরাকে টপকে টি-টোয়েন্টিতে ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী হয়ে গেলেন। 

এছাড়া ভারতের আর তিন বোলার যশপ্রীত বুমরা, যজুবেন্দ্র চাহাল এবং হার্দিক পান্ডিয়া এবারের সিরিজে পারফরম্যান্স যথেষ্ট ভালো। তাই এবার ভারতীয় বোলারদের এই পারফরম্যান্স কিন্তু টিম ইন্ডিয়ার ম্যানেজমেন্টকে বেশ ভরসা দেবে। 

বোলিং বিভাগটা টিম ইন্ডিয়া ম্যানেজমেন্টকে আশ্বস্ত করলেও ব্যাটিং বিভাগটা নিয়ে  ইন্ডিয়ার ম্যানেজমেন্ট কিন্তু খুবই চিন্তায়। ইনিংসের ভালো শুরু করার পরেও রোহিত শর্মা বড় রান করতে ব্যর্থ হচ্ছেন বারবার। হিট মাস্টারের কাছে এটা কিন্তু কেউই আশা করছেন না। আর বিরাট কোহলি তো বারবার সুযোগ পেয়েও রীতিমতো ব্যর্থ। দুই এর অংকই তিনি পৌঁছতে পারছেন না।

বিরাট রান না পেলেও কি হবে, বিরাটকে দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবেই মানছেন দলের অধিনায়ক রোহিত। তৃতীয় টি-টোয়েন্ট ম্যাচের পর প্রেস কনফারেন্সে ভারত অধিনায়ক বলেছেন, ”আমি জানি না ওঁকে নিয়ে এত নেতিবাচক কথা কারা বলছেন। আমরা বাইরের কোনও কথায় অতটা পাত্তা দিচ্ছি না। আর যে বিশেষজ্ঞরা বিরাটকে নিয়ে কথা বলছেন, তাঁরা কেনই বা বিশেষজ্ঞ তাও আমি বুঝি না। ওঁনারা কেউই দলের ভেতরের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানেন না। বাইরে থেকে একটা মন্তব্য করে দিলেই হল না কি। আর তাছাড়া আমরা একটা প্রসেসের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। অনেকগুলো বিষয় কাজ করে। ছেলেদের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। টিম প্রত্যেকের পাশে রয়েছে।” 

রোহিত বিরাটের পাশে দাঁড়ালেও বিরাটের ওপর কিন্তু চাপ বাড়ছেই। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের স্কোয়াডে ঢোকার জন্য নিজেকে এখন প্রমাণ করতেই হবে। আর তার জন্য হাতে মাত্র পাচটি ওয়ান ডে রয়েছে। বোর্ড সূত্রে খবর, আসন্ন সিরিজে বিরাটের পারফরম্যান্স নজরকাড়া না হলে তাঁকে বাদও দেওয়া হতে পারে বিশ্বকাপের স্কোয়াড থেকে। তার ওপর সূর্যকুমার যাদব ও দীপক হুডা আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে শতরান হাঁকানোয় দলে জায়গা পাওয়া বেশ কঠিন হতে চলেছে প্রাক্তন ভারত অধিনায়কের। অন্তত এই টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে।

সুতরাং আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য দল গঠন এখনো করা গেল না। বোর্ডের ফাইনাল পরীক্ষা হবে ওয়েস্ট ইন্ডিজে। পরীক্ষার দিন ধার্য হয়েছে ২২ জুলাই থেকে ৭ আগষ্ট। এই সিরিজেই নির্ধারিত হয়ে যাবে আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দল সেই সঙ্গে ঠিক ঠিক হয়ে যাবে বিরাটের ভাগ্যও!