ভারতীয় বায়ু সেনার প্রাক্তন কম্যান্ডার শাহিদ আলী খান দুরানীকে মনে আছে? না থাকারই কথা। আর এই কুড়ি-বিশের ক্রিকেটের ঋষভ কাণ্ডের সঙ্গে আপাত দৃষ্টিতে তাঁর সম্পর্কই বা কি? হ্যাঁ, কপিলদেবের পাশাপাশি এই মানুষটাই হয়তো পরোক্ষভাবে একাশির মেলবোর্ন টেস্ট জয়ের অন্যতম কারিগর।
পরপর বেশ কিছু টেস্টে রান-না-পাওয়া সুনীল গাভাসকার ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসে তখন ৭০ রানে ব্যাট করছেন। লিলির একটা বল প্যাডে লাগায় অস্ট্রেলিয়ানদের জোরালো আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার। আউটের সিদ্ধান্তে ক্ষোভে ফেটে পড়েন সানি, মাঠেই হয় লিলির সঙ্গে তর্কাতর্কি এবং মাঠ থেকে বেরোনোর সময়ে অধিনায়ক সানি অপর ওপেনিং পার্টনার চেতন চৌহানকে নিয়ে মাঠ থেকে বেরিয়ে যেতে চান।
ঠিক এখানেই আদর্শ ম্যানেজারের ভূমিকা পালন করেন দুরানী। উইকেট থেকে বাউন্ডারী, মেলবোর্নের এই লম্বা পথ সানি-চেতন পেরোনোর আগেই তিনি পরবর্তী ব্যাটার দিলীপ বেঙ্গসরকারকে নিয়ে বাউন্ডারীর কাছে চলে যান (মাঠের ভিতর প্রবেশ করেননি) এবং একপ্রকার তাঁর নির্দেশেই চেতন মাঠে থেকে যান ও দিলীপ প্রবেশ করেন। খেলা পুনরায় শুরু হয়। পরবর্তীতে কি হয়েছিল সেই প্রসঙ্গে না ঢুকে এইকথা বলাই যায় যে দুরানীর বক্তব্য অনুযায়ী সেদিন সুনীলের সঙ্গে চেতন বাইরে বেরিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে যদি ধূর্ত অস্ট্রেলিয়ানরা একবার আম্পায়ারের কাছে আবেদন করতো, সেই টেস্টের জয়ী দল হিসেবে অস্ট্রেলিয়াকে ঘোষণা করা হতো এবং এক বিরাট কলঙ্কের ভাগীদার হতো ভারতীয় ক্রিকেট।
দ্বিধাহীনভাবে বলা যায়, সেদিনের সানি, হাল আমলের ধোনি বা কালকের ঋষভ, প্রত্যেকেই প্রায় সমান দোষে দুষ্ট সংশ্লিষ্ট ঘটনাগুলির জন্য। এঁদের মধ্যে কে পরে দুঃখপ্রকাশ করেছেন বা করেননি সেটাও ভিন্ন বিষয়। কোন কোন মহল থেকে এই বক্তব্যও উঠে আসছে যে খেলার উত্তেজনায়, অ্যাড্রিনালিন-এর প্রভাবে এই ধরনণর ঘটনা ঘটে যায় বা গেছে। তর্কের খাতিরে সংশ্লিষ্ট খেলোয়াড়দের জন্য সেটাও না হয় মেনে নিলাম কিন্তু কালকে প্রবীণ আমরের ভূমিকা?
কোচ, ম্যানেজার এঁরা থাকেন তো যে কোনরকম প্রতিকূল পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। সেখানে তিনি একজন প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার হয়ে নিজের ড্রেসিংরুম বা ডাগ-আউটের পরিস্থিতি সামাল না দিয়ে, নিয়মবহির্ভূত ভাবে মাঠে ঢুকে গেলেন আগুনে ঘি ঢালতে! কোনভাবেই এহেন আচরণ সমর্থন করা যায় না। আমরে, আপনার কাল দুরানী হয়ে ওঠা উচিত ছিল। তার বদলে যা করলেন, সেটা ক্ষমাহীন অপরাধ।
আর ঋষভ! আগামী কয়েক ঘন্টা পরেই আসমুদ্রহিমাচলের প্রায় সমস্ত ক্রিকেটপ্রেমী মানুষ একজনের পঞ্চাশতম জন্মদিন পালনে মেতে উঠবে। আপনার যা বয়স, হিসেব করলে হয়তো দেখা যাবে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সেই মানুষটা তার থেকেও বেশিবার আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্ত মাথায় নিয়ে মাঠ ছেড়েছেন। কিন্তু তাঁর অতি বড় সমালোচকও একটা ছবি বা ভিডিও দেখাতে পারবেন না যেখানে তিনি সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রকাশ্যে একবারও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ক্রিকেট নামক এই মহান প্রতিষ্ঠানের এই শিক্ষাটার নামই সম্ভবত শচীন তেন্ডুলকার।