গলি থেকে রাজপথে

কোলাঘাট অঞ্চলটি একটি অন্যতম পর্যটনক্ষেত্র বলেই পরিচিত। কোনোরকম বিশেষ দিন বা ছুটির দিন পেলেই গাড়ি নিয়ে লং ড্রাইভে যাওয়ার কথা যদি ওঠে তবে যে নাম একেবারে প্রথম সারিতে আসবে তা হলো কোলাঘাট।

কিন্তু কজনই বা জানেন কোলাঘাটের পাশের খাঞ্জাদাপুর গ্রামকে? নাম হয়তো শোনেননি বিশেষ কেউ। ঠিক এরকমই একটা জায়গা থেকে আজ মুম্বাইয়ে পাঞ্জাব কিংস দলের অন্দর – এই রাস্তায় হাঁটার যে যাত্রাপথ তাকে বিশেষিত করার একমাত্র বাক্য হয়তো উপরের হেডলাইনটাই।

লোকটির নাম দুর্জয় বেরা। ছোট থেকেই তাঁর ঝোঁক ছিলো পেস বোলার হওয়ার দিকে। কিন্তু আর্থিক টানাপোড়েন এবং অন্যান্য কারণে ১৪ বছর বয়স অবধি টেনিস বল ছাড়া খেলা হয়নি। অনেক পরে কোলাঘাট ক্রিকেট ক্লাব ৮০-তে লাল বলে হাতেখড়ি।

এরপর পাড়ি কলকাতায়। দ্বিতীয় ডিভিশন দল তালতলা একতায় ট্রায়াল দিয়ে সুযোগ পেয়ে সেখানে খেলেন কিছু বছর। এরপর ডাক আসে প্রথম ডিভিশনে। সুযোগ পান মিলন সমিতিতে। এরপর দ্বিতীয় ক্লাব নেতাজি সুভাষ ইনস্টিটিউট। এরপর খেলেন পোর্ট ট্রাস্ট, বালিগঞ্জ ইউনাইটেড এবং সবশেষে কালীঘাট ক্লাব। কালীঘাট ক্লাব যে বছর কলকাতা লিগ বিজয়ী হয় সেই বছর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন দুর্জয় বেরা।

অনেক চেষ্টা করেও চাকরি পাননি এবং বয়স বেড়ে যাওয়ায় খেলা চালানোও হচ্ছিলো কঠিন। ফলে খেলা ছেড়ে চাকরির খোঁজ শুরু করেন দুর্জয়। একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি হলেও বেশিদিন মন টেকেনি। এরপর তিনি যান ব্যাঙ্গালোরে। সেখানকার ‘জাস্ট ক্রিকেট অ্যাকাডেমি’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানে থ্রো-ডাউন স্পেশালিস্ট ও ম্যাসাজ থেরাপিস্ট হিসেবে নেন ট্রেনিং। আর সেই সুবাদেই ২০২২ আইপিএল মরশুমের জন্য থ্রো-ডাউন স্পেশালিস্ট ও ম্যাসাজ থেরাপিস্ট হিসেবে পাঞ্জাব কিংস দলে অন্তর্ভুক্ত হলেন দুর্জয়।

পাথেয় ছিলো দুর্জয় সাহস এবং অদম্য জেদ। আজ সেই পাথেয় নিয়েই কোলাঘাট থেকে কলকাতা এবং তারপরে আরো দূরে। স্থানীয় লোকেরাও করেন দুর্জয়ের ভূয়সী প্রশংসা। খুব বেশি কথা না বললেও তার মনে যে একটা অদম্য জেদ আছে তা বারবার বলছিলেন তারা।

দুর্জয়ের যাত্রাপথ খুব মসৃণ নয়, কিন্তু সব বাধাবিপত্তির দুর্গম পথকে জয় করে দুর্জয় যে পার হবেন অনেকটা পথ এই আশায় মুখর সবাই।