ম্যাচ শুরুর সামান্য আগে দেখা গেল তাঁকে। হুগলি দলের নামাঙ্কিত নীল জামা এবং একটি শর্টস পরে ওয়ার্ম-আপ করতে নামছেন। সঙ্গে বোলার দুর্গেশ দুবে, রবিকান্ত সিং এবং ওপেনার অভিজিৎ মাল।
টস জেতার পরে ব্যাটিং নিয়ে যখন হুগলির দুই ব্যাটার অভিজিৎ মাল ও সনু নারায়ণ ইনিংসের একটি দর্শনীয় শুরু করেছেন তখনও ইডেন ক্লাব-হাউসের কতিপয় দর্শক আশা করেননি যে হুগলির দ্বিতীয় উইকেট পড়ার পরেই ব্যাট হাতে আসবেন তিনি। তিনি অর্থাৎ হুগলি অধিনায়ক অর্ণব নন্দী।
শুরুর দিকে সনু নারায়ণ বেশ ভাল সামলে দিলেও সৌম্যদীপ বাগচীর একটি ডেলিভারিকে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে খেলতে যাওয়ায় বিদ্যুৎ অধিকারী তাঁর স্টাম্প নড়িয়ে দেওয়ায় ফিরে যেতে হয় তাঁকে। এরপর আসেন সচিন যাদব যিনি আসার পর থেকেই বেদম মার শুরু করেন এবং তাঁর ক্রিজে থাকা এতই কষ্টদায়ক হচ্ছিল নদীয়ার পক্ষে যে সঞ্জয় সাধুখাঁর একটি বল ক্রস হিট করতে গিয়ে যখন ডিপ স্কোয়ারলেগে ক্যাচ উঠল এবং ফিল্ডার তা তালুবন্দি করতে পারলেন না তখন বিরক্তি ঝরে পড়ে অধিনায়ক রাজকুমার পালের বলে।
সচিন যাদবের (৫০) এবং অভিজিৎ মালের (৭১) আউট হওয়ার পরে একটি ছোট বিপর্যয় নামে হুগলির ইনিংসে। দুরন্ত ফর্মে থাকা ঋতম পোড়েল কোনো রান যোগ না করেই ফিরে যান। এরপর দীপক প্রসাদ (৬), কিপার বিদ্যুৎ অধিকারী (০) ফিরে যাওয়ার লাইনে যোগ দেন। তাদের আসা-যাওয়ার মাঝে অবশ্য ফিরেছেন রনিত ঘোষ (১)। একসময় যখন হুগলি দল ২০০ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে বসেছে এবং প্রেসবক্সে বলা চলছে যে অর্ণব নন্দী আউট হলে এই দল ২২০ যাবেনা, সেই সময় যেন জ্বলে উঠলেন স্বয়ং অধিনায়ক এবং রবিকান্ত সিং। অভিজ্ঞ পেসার সায়ন ঘোষের অফ-স্টাম্পের বাইরের খাটো লেংথের একটি ডেলিভারি ঘুরিয়ে মিড উইকেট দিয়ে মারায় একবার ভিভ রিচার্ডস নামেও অভিহিত করা হল রবিকান্তকে। এরপর নিজেদের মধ্যে অতি অল্প সময়ে হাফ-সেঞ্চুরি পার্টনারশিপ পূর্ণ করলেন দুজনে। দুজনের ব্যাট চলছিলো একেবারে সপ্তম সুরে। রবিকান্ত ১৫ বল ব্যাট করার সুযোগ পান এবং ২টি চার ও সমসংখ্যক ছক্কা মেরে ২৮টি রান করে যান। আর অর্ণব? খারাপ বলের সুযোগ নিয়ে নিজের ইনিংসকে ছোট ছোট স্ট্রোকের সাহায্যে এগিয়ে নিয়ে গেলেন এবং একসময় অবস্থা এমন দাঁড়ালো যে শেষ বলে দলকে আড়াইশোর গণ্ডি পার করতে চাই একটি চার ও তার ব্যাক্তিগত হাফ-সেঞ্চুরি হতে বাকি ছয়। এই সময় পেসার সুশান্ত দাসকে শাফল করে লেগ সাইডে তুলে দিলেন অর্ণব এবং দুই অভীষ্টই পূর্ণ হল।
নদীয়া দল ব্যাট করতে নেমেই প্রথম ধাক্কা খায় বিপক্ষ পেসার দুর্গেশ দুবের বলে। ওপেনার অর্ণব সিকদার কোনো রান না করেই লেগ বিফোর হয়ে ফিরে যান প্যাভিলিয়ন অভিমুখে। এরপর অন্য ওপেনার সৌম্যজিৎ রায় এবং কিপার সুপ্রদীপ দেবনাথ পাল্টা লড়াই শুরু করেন এবং বেশ খানিক সময় ধরে জমাট ব্যাটিং করেন দুজনে। একসময় বেশ ভালই ছন্দে থাকা সত্ত্বেও ভুল করে বসেন সৌম্যজিৎ (৩৩)। রনিত ঘোষের বলে কিপারের হাতে ক্যাচ দেন তিনি। এরপরের ব্যাট ছিলেন অয়ন গুপ্ত। নদীয়া জেলার অন্যতম সেরা ওয়ান-ডে ব্যাট অয়ন যখন খেলছিলেন তখন মনে হচ্ছিল এই সাত আস্কিং রেট কোনো ব্যাপারই নয়। তিনি এবং সুপ্রদীপ থাকলে যে কোনো সময়ে রান উঠে যাবে। কিন্তু সৌম্য পাকড়ের একটি বল স্লগ-সুইপ করতে গিয়ে থার্ডম্যান অঞ্চলে সুপ্রদীপ ধরা পড়তেই যেন ভাঙ্গন শুরু হয় নদীয়ার। একে একে আসা যাওয়া করতে থাকেন অরূপ দাস (১২), তনুজিৎ আচার্য (৩)।
শেষ ভরসা ছিল অধিনায়ক রাজকুমার পাল এবং অয়ন গুপ্তর জুটি। কিন্তু অর্ণব নন্দীর একটি আচমকা নিচু হওয়া ডেলিভারি অয়নের (৫২) স্টাম্প ভাঙতেই আশাভঙ্গ হয় নদীয়ার। এরপর শুধু ছিল রাজকুমার পালের পতনের অপেক্ষা এবং অর্ণব অবসান ঘটালেন সেই অপেক্ষারও। ফলস্বরূপ নদীয়া অল-আউট ১৭৭ রানে। হুগলীর যে বোলারের কথা না বললেই নয় তিনি হলেন রনিত ঘোষ। চারটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট তুলে তিনি অন্যতম শ্রেষ্ঠ অবদান রাখলেন আজ।
ম্যাচের পর অধিনায়ক অর্ণব নন্দী বলেন “সুপ্রদীপ আর অয়নের উইকেট ছিল মোড়-ঘোরানো মুহূর্ত। আমরা জানতাম আমাদের যা বোলিং আছে তাতে আট আস্কিং রেটে রান তুলতে গেলে উইকেট পড়বেই এবং তাইই হল।“
ব্যাট হাতে মুল্যবান ৫০ রান এবং গুরুত্বপূর্ণ তিন উইকেট নেওয়া অধিনায়ক অর্ণবই হলেন ম্যাচের সেরা। এবং এতে কোনও দ্বিমত ছিলও না।