অবিশ্বাস্য ড্র ছিনিয়ে নিলো পাকিস্তান, সৌজন্যে বাবর

স্কোরবোর্ডে ৫০৬ রান তখনও অধরা। ব্যাট করতে হবে ১৭২ ওভার। ১৭২ ওভার প্রকৃত অর্থে ১০৩২ বল। প্রতিপক্ষের দরকার ১০টা ভালো বল বা আনপ্লেয়াবল ডেলিভারি।

এই সময় আপনার জন্য অত্যন্ত কঠিন হয়ে দাঁড়ানোর একটি অন্যতম কারণ আপনার দল প্রথম ইনিংসে ১৪৮ রানে প্যাভিলিয়নে ফিরেছে প্রতিপক্ষকে ৪০৮ রানের লিড দিয়ে।

এখান থেকে ব্যাট করতে নেমে দলের দুই নির্ভরযোগ্য ব্যাট ইমাম-উল-হক এবং আজহার আলি ফিরে গিয়েছেন। দল তখন ২১-২ এবং ঠিক এইখান থেকেই যে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই করা যায় তা দেখালেন এক অভিজ্ঞ-অনভিজ্ঞ জুড়ি। অনভিজ্ঞ টেস্ট ওপেনার আব্দুল্লাহ শফিক যেমন নিজের ৩০০ বল খেলা ইনিংসে ছিলেন প্রত্যয়ী তেমনই মাঝে মাঝে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই ভালোই করছিলেন বাবর আজম।

আব্দুল্লাহ শফিক তাঁর ৩০৫ বলে ৬টি চার ও একটি ছয় মেরে করলেন ৯৬ রান এবং অধিনায়কের সঙ্গে তার দুরন্ত ২২৮ রানের পার্টনারশিপ পাকিস্তানকে দিয়েছিলো বাড়তি অক্সিজেন। এর মাঝেই একটি ছোট্ট ব্যর্থতা গ্রাস করে পাকিস্তানকে। ভরসাযোগ্য মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান ফাওয়াদ আলম মাত্র ৯ রান করে ফিরে যান প্যাট কামিন্স-এর বলে।

এরপর আবার শুরু ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই। সৌজন্যে টিটোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতকে ধ্বংস করা জুটি বাবর আজম এবং মহম্মদ রিজওয়ান। ১৯৬ রানের অসাধারণ একটি ইনিংস খেলে বাবর আজম ফিরে যাওয়ার আগে অবধি তাদের মধ্যে যে ৪১ ওভার ব্যাপী ১১৫ রানের পার্টনারশিপ হলো তাতে অন্তত পাকিস্তানের হেরে যাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ হলো কিছুটা।

কিন্তু ম্যাচভাগ্য সারাদিন পেন্ডুলামের মতো দোলার ইঙ্গিত আবার দিলো যখন পরের বলেই আবার ফিরলেন নতুন ব্যাটার ফাহিম আশরাফ। এরপর চারটি ওভার লড়াই করেছিলেন সাজিদ খান। কিন্তু ন্যাথথন লিয়ঁ-র একটি বলে ৯ রান করে ফিরে গেলেন তিনিও। এরপর বাকি ৯ ওভারে ৮৮ রান তাড়া করে জয় ছিলো অসম্ভব। সুতরাং ড্রয়ের রাস্তাই একমাত্র খোলা ছিলো পাক বাহিনীর জন্য এবং মহম্মদ রিজওয়ান ও নৌমান আলী করলেন সেই কাজই। বাকি ৫২টি বলের ১৮টি বল ক্রিজ কামড়ে পড়ে থাকলেন নৌমান। কোনো রান না পেলেও এই মাটি কামড়ে থাকাই তার ইনিংসকে করে দিলো মূল্যবান। এবং অন্য ব্যাটসম্যান মহম্মদ রিজওয়ান অষ্টম উইকেটের পার্টনারশিপে ২৯ রান যোগ করে পূর্ণ করলেন নিজের টেস্ট কেরিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরি (১০৪*)।

তবুও আজ সব কিছু ছাপিয়ে যেন উঠে আসছে একটাই নাম। তিনি মহম্মদ বাবর আজম। অনায়াসে হতে পারতেন চতুর্থ ইনিংসে ডাবল সেঞ্চুরি করা সপ্তম খেলোয়াড়। কিন্তু ভাগ্যের ফেরে মাত্র ৪ রানের জন্য অধরা রইলো। তবুও আজ ৪২৫ বল খেলে তিনিই হলেন চতুর্থ ব্যাটসম্যান যিনি চতুর্থ ইনিংসে ৪০০ এর বেশি বল খেলেছেন। এবং পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান হিসেবে করলেন চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ রান (১৯৬)।ফিরে আসার এক অনন্য নজির আজ সম্পূর্ণ পৃথিবী দেখলো। তারা দেখলো যে বিশ্বের তাবড় তাবড় বোলারদের সামনেও মাথা উঁচু করে লড়াই করা যায়। এবং নিশ্চিত হার থেকে জয়ের সম্ভাবনা তৈরী করে এমন সুন্দর ড্র তো টেস্ট ক্রিকেটকে করে তোলে আরো রোমাঞ্চকর।