কাউন্টিতে শুদ্ধিকরণ বাঁচাতে পারে ইংল্যান্ডের স্লো-পয়জন

শিখর ছুঁলে যেমন নেমে আসাই নিয়ম, তেমন নিম্নগামী কোনও কিছুর পথও বাঁধা। একটা পর্যায়ে এসে সময়ের দাবি মেনে তাকেও উঠতে হয়। ইংলিশ ক্রিকেটে আশা-ভরসা বলতে এই সব জ্ঞানের তত্ত্ব। হাত বদল হয়ে সম্প্রতি জো রুটের জায়গায় টেস্ট অধিনায়কত্ব সঁপা হয়েছে বেন স্টোকসকে। দায়িত্ব নেওয়ার পর তাঁর মুখ থেকেও শোনা গিয়েছে, ‘আমরা শুধু এটুকুই বলতে পারি যে, এখান থেকে ওপরে ওঠা ছাড়া দ্বিতীয় পথ নেই।’

বিশ্বক্রিকেটে নিজেদের যে অবনমন দেখেছে ইংল্যান্ড, বাস্তবেই এত নিচ থেকে ওঠা ছাড়া বিকল্প খোলা নেই। বিগত কিছু বছরে প্রতিদিন লজ্জায় আয়না এড়িয়েছেন ইংলিশ ক্রিকেটাররা। কিন্তু পরিসংখ্যান যে অসত্য বলতেই শেখেনি। এবং সাম্প্রতিকতম পরিসংখ্যান ইংল্যান্ডকে নজিরবিহীন লজ্জার দিকে ঠেলে দিয়েছে। ১৯৯৫ সালের পর এই প্রথম এত জঘন্য টেস্ট রেটিং পেয়েছে তারা। সাকুল্যে ৮৮ পয়েন্ট আদায় করে আইসিসি টেস্ট র‍্যাঙ্কিংয়ে ষষ্ঠ স্থানে তারা। গত ১৭টি টেস্ট খেলে জয় এসেছে একটিতে। কফিনে শেষ পেরেক পুঁতেছে চিরশত্রু অস্ট্রেলিয়ানরা। অ্যাশেজে ০-৪ হারের পর ঠাট্টার পাত্রে পরিণত হয়েছিল ইংল্যান্ড। ছাড়েনি ওয়েস্ট ইন্ডিজও। ইংল্যান্ডের ব্যর্থতা খুঁজতে গিয়ে কেউ কেউ তো উইচ হান্ট-এ নেমে এই পরিণামে পৌঁছেছেন যে, ও-দেশের জনপ্রিয় ১০০ বলের ক্রিকেট প্রতিযোগিতা ‘দ্য হানড্রেড’-ই মূল ষড়যন্ত্রী। অ্যাশেজ ব্যর্থতার আগেই ইংল্যান্ড কোচের দায়িত্ব সামলানো ক্রিস সিলভারউডের চাকরি সুতোয় ঝুলছিল। শোচনীয় পরাজয়ের পর ছাঁটাই নিয়ে আর সংশয় ছিল না সামান্যতম। 

অ্যাশেজে আত্মসমর্পণের পর দুই ইংলিশ নেতাকে ভিন্ন মত পোষণ করতে দেখা যায়। ইংল্যান্ডের তৎকালীন টেস্ট নেতা জো রুট দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের মানোন্নয়নের কথা বলে বর্তমান ঘরোয়া ক্রিকেটের পরিকাঠামো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। রুটের বক্তব্যে সুস্পষ্ট ইঙ্গিত ছিল, ইসিবি ছোট ফরম্যাটকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে ফেলায় ডুবছে টেস্ট। সেই সময় ইংল্যান্ডকে বিশ্বকাপ দেওয়া অধিনায়ক ইওয়িন মরগ্যান রুটের এই তত্ত্বের প্রবল সমালোচনা করে বলেছিলেন, ‘যারা হানড্রেডকে অজুহাত হিসেবে দেখছেন, তাদের উচিত ক্রিকেটটাই না দেখা। সবসময় টেস্ট ক্রিকেটকেই আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিই। আজ ফরম্যাটটা সমস্ত সেরা ক্রিকেটাররা খেলে।’

মরগ্যান সমালোচনা করলেও রুটের তত্ত্ব কিন্তু শোনা গিয়েছিল ইংল্যান্ডের প্রাক্তন অধিনায়ক কেভিন পিটারসেনের গলায়। অ্যাশেজে ১৪৭ রানে ইংল্যান্ড গুটিয়ে যাওয়ার পর কেপি টুইটারে লিখেছিলেন, ‘১৪৭ অল আউট। ভালো খেলতে না পারার জন্য দয়া করে ক্রিকেটারদের দোষারোপ করবেন না খামোখা। পদ্ধতিতে শুদ্ধিকরণ আনুন বরং। কাউন্টি ক্রিকেট পদ্ধতিগতভাবে সম্পূর্ণ ত্রুটিপূর্ণ এবং এই পদ্ধতিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভালো মানের ব্যাটার কোনওভাবেই উঠে আসতে পারে না। এই কথাটা আজ বেশ কয়েক বছর ধরে বলে আসছি।’ ইংলিশ সামারে কাউন্টির মাদকতা ভুলছে ‘একশো’-র যৌবনে। জুলাই-আগস্ট ইংলিশ সামারের সেরা ক্রিকেটীয় সময়। এই দু’মাস গুরুত্ব পাচ্ছে সাদা বলের ক্রিকেট।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ বদল ঘটেছে টেস্টকে বাঁচাতে। বেন স্টোকস তাঁর নিজের দর্শন দিয়ে ইংল্যান্ড ক্রিকেটে কতটা পরিবর্তন আনতে পারেন, ইসিবি সেদিকেই চেয়ে রয়েছে। স্টোকস দায়িত্ব নেওয়ার পরেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, ‘আমি দায়িত্ব নিলাম আর ইংল্যান্ড শীর্ষে জায়গা করে নিল একটা স্পর্শেই, এমনটা সম্ভব নয়। ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডে ক্রিকেট ডিরেক্টর পদে সাময়িকভাবে অ্যাশলি জাইলসের স্থানাভিষিক্ত হয়েছেন প্রাক্তন নেতা অ্যান্ড্রু স্ট্রস। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর ঘরোয়া ক্রিকেটের হাল হকিকত নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ রিভিউ চেয়েছেন। মনে করা হচ্ছে, এই রিভিউ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেবে কোথায় ঘাটতি থাকছে। যদিও পূর্ণাঙ্গ রিভিউ বেশ সময়সাপেক্ষ বিষয়। আর ভয়টা সেখানেই। অনেকেরই আশঙ্কা, ইংল্যান্ডের গলদ বের করে আনতে যে সময় প্রয়োজন, তাতে আরও কিছু নতুন লজ্জার নজির দেখবে না তো দেশের ক্রিকেট!

বিশ্ব ফুটবলে বেশ কিছু বছর আগে ইতালির হারিয়ে যাওয়ার কারণ খুঁজতে গিয়ে অনেক ফুটবল পণ্ডিতই ইতালিয়ান সিরি আ-র পরিকাঠামোয় গলদ দেখেছিলেন। একটা দেশের ঘরোয়া লিগের মান নামলে সে দেশের সার্বিক ফুটবল কোথায় নামাতে পারে, তার জ্বলন্ত উদাহরণ আজুরিরা। ইসিবি লাল বল নিয়ে তাদের উদাসীনতা ঝেড়ে বেরিয়ে না এলে ইতালির মতোই হবে না তো?