হাল ছেড়ো না বন্ধু, বরং ব্যাটটা ধরো জোরে।

শুধুমাত্র একটি সামান্য ভুল এবং তা বদলে দিতে পারে একজনের জীবন। তার জীবনকে মূলস্রোত থেকে সরিয়ে গহীন অন্ধকারে পাঠিয়ে দিতে পারে।
তেমনই ছিল ফুলিয়ার অভিজিৎ বিশ্বাসের জীবন। নদীয়া জেলার ফুলিয়া শহরে জন্ম এবং বেড়ে ওঠা। তাঁর মামার বাড়ি ছিলো নদীয়া জেলারই মালিপোতা গ্রামে। মাত্র তিন বছর বয়েসে যখন মামার বাড়ি যান তখন খেলতে গিয়ে একটি গাছ থেকে পড়ে গিয়ে হাতে চোট পান প্রবলভাবে। ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হলে তিনি এক্স-রে করার পরামর্শ দেন এবং সেই এক্স-রে রিপোর্টে দেখা যায় তার বাঁ-হাত ভেঙ্গে গিয়েছে। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী হাত প্লাস্টার করা হয়, তবুও কিছু চিকিৎসাজনিত গাফিলতির কারণে পচন ধরতে শুরু করে বাঁহাতে। ফলে বাদ দিতে হয় বাঁহাতের কনুই থেকে আঙ্গুল পর্যন্ত।


হতাশায় তাঁর মা একদিন বলেন “এক হাত না থাকার চেয়ে ছেলে না থাকাই ভালো।” এরপরে অনেক টানাপোড়েনের পরে অভিজিৎ প্লাস্টিক সার্জারি করিয়ে তাঁর হাত ঠিক করলেও আঙ্গুল ঠিক করাতে পারেননি। আঙ্গুল গুটিয়ে যাওয়ায় গ্রিপ করার সমস্যা ছিল।
এরপরে শুধুমাত্র ক্রিকেটকে ভালোবেসে আবার শুরু করেন খেলা এবং নির্বাচিত হন মোহনবাগান দলে। কিন্তু কোনো ম্যাচ পাননি। এরপরে ২০১১ সালে ‘ইন্ডিয়া ক্রিকেট ফেডারেশন ফর দ্য ডিসেবল্ড’ সংস্থা থেকে একটি ক্যাম্প করে ভারতীয় দলে টেস্ট, ওডিআই এবং টিটোয়েন্টি খেলার ছাড়পত্র পান। ওই বছরেই তিনি খেলেন বিশেষ ভাবে সক্ষম ক্রিকেটারদের ইস্ট জোন দলের হয়ে।
ভারতীয় দলের হয়ে তিনি খেলেছেন আফগানিস্তান ম্যাচে। এতো কিছু সম্ভব হতোনা যদি না পাশে থাকতেন রানাঘাটের ক্রিকেট কোচ সমরেশ বিশ্বাস। সমরেশ বাবুর তত্ত্বাবধানে আর পাঁচটা ছেলের মতোই ক্রিকেট ক্যারিয়ার শুরু হয় তাঁর এবং পরবর্তীতে সমরেশ বাবুই তাঁকে দিকনির্দেশ করে দেন বিশেষভাবে সক্ষম ক্রিকেটে উন্নতির।


আজ সেই অভিজিৎ বিশ্বাস তৈরী করেছেন দিব্যাঙ্গ ক্রিকেট টিম। সেই ক্রিকেট টিম তৈরী হয়েছে সমস্ত বিশেষভাবে সক্ষম ক্রিকেটারদের নিয়ে এবং সেই দলের সঙ্গে ম্যাচ খেলার জন্য আহ্বান গ্রহণ করেছিল বাংলাদেশ। ২০১৯ সালে তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বেশ কিছু ম্যাচ খেলে। বর্তমানে এই দলে রয়েছেন বাংলা থেকে ৩০ জন ক্রিকেটার এবং সারা ভারত জুড়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে আসছে তারা সব টুর্নামেন্টে।
অনেক শুভেচ্ছা রইলো অভিজিৎ বিশ্বাসের জন্য। আশা রাখি এইভাবেই এগিয়ে যাবে দিব্যাঙ্গ ক্রিকেট দল এবং আরো অনেক উচ্চতায় পাড়ি দেবে।