‘মহেন্দ্র’ক্ষণ

লোকটি নিজের টেস্ট কেরিয়ারে ইতি টেনেছেন বত্রিশে পৌছেই। আপামর ক্রিকেটপ্রেমীকে এবছর চমকে দিয়ে ত্যাগ করেছেন আইপিএলে অধিনায়কত্বের মায়া। লোকটা রোজ বাইশ গজের দুনিয়া থেকে একটু একটু করে বিচ্ছিন্ন করছেন নিজেকে। মানুষের তো তাঁর থেকে আর কিছু পাওয়ার প্রত্যাশা থাকার কথা নয়। তবুও তিনি স্ট্রাইকে থাকলে চোখ সরাতে পারেন না তাঁর কঠোরতম সমালোচকও। 

আইপিএলের এল ক্লাসিকোয় টসে জিতে বল করার সিদ্ধান্ত নেন রবীন্দ্র জাদেজা।

বাঁ-হাতি মিডিয়াম পেসার মুকেশ চৌধুরীর ব্যাতিক্রমী স্পেলে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে মুম্বাইয়ের ওপেনিং জুটি। শূন্য রানে ফিরে যান রোহিত শর্মা এবং ঈশান কিশান। এরপর মাত্র চার রান করে আউট হন ‘বেবি এবি’-ও। টানা ছয় ম্যাচ হেরে এক রাজকীয় কামব্যাকের আশায় বুক বাঁধতে থাকা এমআই পল্টনের এমন অবস্থা দেখেই মনে হয় মহাশ্বেতা দেবী লিখেছিলেন “এমন দুর্যোগের দিনে ভগবানও কাঁথামুড়ি দিয়ে ঘুমান বোধ করি।”

যাইহোক তিলক ভার্মা এবং সূর্যকুমারের ইনিংসের ওপর ভর করে ভদ্রস্থ স্কোরে ফিরতে থাকে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। 

ফিনিশিং-এ পোলার্ড টাচ-ও ঠিকমতো ক্লিক করে না। মনে পড়ে ২০১৭ আইপিএলের ফাইনালে ঠিক বাউন্ডারি লাইনের সামনে ধোনির সাজানো ফিল্ডিং এর হাতে ধরা দিয়েছিলেন পোলার্ড। ঠিক একইভাবে আজও। সমাপতনের আলো সত্যিই বড়ো অদ্ভুত হয়। 

মুম্বাইয়ের ব্যাটিং বিপর্যয় তাদের থামিয়ে দেয় মাত্র ১৫৫ রানে। আপাতদৃষ্টিতে ব্যাট-সহায়ক পিচে এই সামান্য রান জাদেজাবাহিনীর ‘বাঁয়ে হাত কা খেল’ মনে হলেও চিত্রনাট্যে টুইস্টের অভাব থাকেনি। তরুণ ঋতুরাজের প্রথম বলেই উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে আসা থেকে শুরু করে স্যান্টনারের হতাশাজনক ইনিংস আস্তে আস্তে চিন্তার পারদ চড়াচ্ছিল হলুদ শিবিরে। তবে যুদ্ধ-সহায়ক রঙ্গমঞ্চ তৈরী করে দিয়েছিল উত্থাপ্পা এবং রায়ুডুর লড়াকু ইনিংস। মাঝে দুবেও ফিরে যান ‘আনলাকি থার্টিন’-এ। চেন্নাই মাত্র ৮৮ রানে হারিয়ে বসে চার-চারখানা উইকেট। রবীন্দ্র জাদেজারও আর ‘কাপ্তান ইনিংস’ খেলা হয় না। 

এরপরই ঘটনার ঘনঘটা প্রবেশ করে ক্লাইম্যাক্সে। ফিনিশিং এর চিত্রনাট্য আর মুখ্যচরিত্রে মহেন্দ্র সিং ধোনি থাকবেন না তা কখনো হয়? 

১২ বলে দরকার ২৮। প্রিটোরিয়াস যে ধোনিকে সাথে নিয়ে আঁকাবাঁকা-বন্ধুর পথ অনেকখানি সুগম করে দিয়েছিলেন তা অস্বীকার করার উপায় নেই। ঊনিশতম ওভারে ডেথ-ওভার স্পেশালিস্ট বুমরাহের কাছ থেকে দুটি চার সহযোগে সর্বসাকুল্যে এগারো রান আদায় করে নেন প্রিটোরিয়াস।

৬ বলে এবার দরকার ১৭ রান।

পেনাল্টিমেট ওভারে উনাদকাটের প্রথম বলে এল-বি-ডব্লিউ এর আবেদনে আম্পায়ার সাড়া না দিলে অব্যবহৃত রিভিউ ব্যবহার করে প্রিটোরিয়াসকে প্যাভিলিয়নে পাঠান উনাদকাট। হঠাৎ যেন তবলার তাল কাটল। 

ধোনি যখন হাল ধরলেন তখন দরকার ৪ বলে ১৬ রান।  খেলা তখন প্রবেশ করেছে ধোনিস্ফিয়ারে। ম্যাচের বয়স লাস্ট ওভারে প্রবেশ করার আগে ধোনির ব্যাট থেকে বাউন্ডারি বলতে বেরিয়েছিল একটিমাত্র চার। এরপর শুরু হয় ধোনি-উনাদকাট অমর চিত্রকথা।

প্রথম বলেই লং-অফের ওপর দিয়ে ছক্কা হাঁকালেন অতিপরিচিত ভঙ্গিমায়। তারপর চার এবং পরের বলে দৌড়ে ২ রান নিয়ে শেষ বলের গুরুদায়িত্ব রাখলেন নিজের কাঁধে। বলাবাহুল্য শেষ বলে চার মেরে চিরাচরিত প্রথায় আরও একবার মনে করিয়ে দিলেন কেন তিনি ‘পল দো পল কা শায়র’!

ক্রমাগত পরিবর্তনশীল এই সময়রেখায় নিজেকে ধ্রুবক রাখার ফর্মুলাটা বারবার বাতলে দিয়ে যান মাহি।