জোড়া মৃত্যুতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট শোকাহত

বুধবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ছিল শোকের আবহাওয়া। পঞ্চাশ থেকে সত্তর দশকের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের দুই জনপ্রিয় টেস্ট ক্রিকেটার চলে গেছেন – ৩০শে মে ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্পিনার-অলরাউন্ডার ডেভিড হলফোর্ড এবং ৩১শে মে ইংল্যান্ডের  উইকেটরক্ষক-ব্যাটার জিম পার্কস

ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ২৪টি টেস্ট খেলেছিলেন ৮২ বছরের হলফোর্ড, আর ইংল্যান্ড হারিয়েছে তাদের সবচেয়ে বেশি-বয়সী জীবিত প্রাক্তন টেস্ট ক্রিকেটারকে – ৯০ বছর  বয়সে মারা গেছেন ইংল্যান্ডের জিম পার্কস।

ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজ বুধবার হলফোর্ডের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছে। ১৯৬৬ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলেন ৫১টা উইকেট নেওয়া এই লেগ-স্পিনার। তিনি ছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি অলরাউন্ডার গ্যারি সোবার্সের কাজিন।

অভিষেক টেস্টেই চমক দেখিয়েছিলেন হলফোর্ড। ইংল্যান্ডের ওল্ড ট্রাফোর্ডে সোবার্সের সঙ্গে জুটিতে ষষ্ঠ উইকেটে ১২৭ রান তুলতে সাহায্য করেছিলেন। জুটি গড়ার পথে ১১৬ বলে ৩২ রান করে আউট হন তিনি। শুধু তাই নয়, অভিষেক টেস্টে মোট ৪ উইকেটও নিয়ে দলের ইনিংস জয়ে অবদান রেখেছিলেন তিনি।

তবে সেই সিরিজে লর্ডসের পরের টেস্টেই তৃতীয় ইনিংসে তাঁর ম্যাচ-বাঁচানো ১০৫* রানের ইনিংসটি অনেক বেশি স্মরণীয়। ৮৪ রানে পিছিয়ে-থাকা দল ৯৫ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর ষষ্ঠ উইকেটে সেই সোবার্সের সঙ্গেই ২৭৪ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েছিলেন হলফোর্ড। প্রথম ইনিংসেও করেছিলেন ২৬ রান। ১৯৬৬-৬৭ মরসুমে ভারত সফরে এসে বম্বে টেস্টে ৮০ রান করে ও ম্যাচে মোট ৫টা উইকেট নিয়ে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। 

১৯৭৬ সালে বার্বাডোজ টেস্টের প্রথম দিনেই স্পিন খেলতে ওস্তাদ ভারতীয় দলকে ১৭৭ রানে নিকেশ করতে ৮.১-১-২৩-৫ ছিল তাঁর টেস্ট-জীবনের সেরা। দ্বিতীয় ইনিংসেও ১টা উইকেট নেন। ১৯৭৭ সালে কিছুটা বিস্ময়করভাবেই তাঁকে কেরি প্যাকারের World Series Cricket (WSC) দলে নেওয়া হয়। 

ঘরোয়া ক্রিকেটে বার্বাডোজের অধিনায়ক ছিলেন হলফোর্ড। খেলেছেন ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগোর হয়েও। অবসর নেওয়ার পর নির্বাচক ও ম্যানেজারের দায়িত্বও নিয়েছিলেন জাতীয় দলের। 

ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজ তাঁর মৃত্যুতে শোকাহত। ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজের সভাপতি রিকি স্কেরিট বলেছেন: “খেলোয়াড় হিসেবে তিনি ছিলেন উঁচুমানের অল-রাউন্ডার। অধিনায়ক হিসেবে মাঠে নিজের সবকিছু ঢেলে দিতেন। প্রশাসক, টিম ম্যানেজার ও পিচ কিউরেটর হিসেবে খেলাটার প্রতি তাঁর ভালোবাসাই প্রকাশ পেয়েছে।“ টেস্টে একটি সেঞ্চুরিসহ ৭৬৮ রান করেছেন ও ১৮টা ক্যাচ নিয়েছেন হলফোর্ড।

জিম পার্কসের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে তাঁর কাউন্টি দল সাসেক্স। ১৯৫৪ থেকে ১৯৬৮ সালের মধ্যে ইংল্যান্ডের হয়ে ৪৬ টেস্ট খেলছেন প্রাক্তন এই উইকেটকিপার-ব্যাটার।

বুধবার সাসেক্স এক বিবৃতিতে জানিয়েছে: “সাসেক্স ক্রিকেট দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছে, ৯০ বছর বয়সে মারা গেছেন জিম পার্কস। গত সপ্তাহে তিনি অসুস্থ হওয়ার পর বুধবার হাসপাতালে মারা গেছেন।“

ক্রিকেটার পরিবার থেকে উঠে আসা পার্কস – তাঁর বাবা জিমও সাসেক্সে খেলতেন এবং ইংল্যান্ডের হয়ে একটা টেস্টও খেলেছিলেন – ১৯৪৯ সালে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে তাঁর শুরু ব্যাটার ও অফ-স্পিন বোলার হিসেবে, দারুণ ফিল্ডিংও করতেন। তাঁর টেস্ট অভিষেক ঘটে, ব্যাটার হিসেবে, ১৯৫৪ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে, কিন্তু ঐ ম্যাচের পর অনেকদিন জাতীয় দলে ডাক পাননি। চার বছর পর নিজেকে রূপান্তরিত করেন উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান হিসেবে। 

একটা দুর্ঘটনা থেকেই তাঁর উইকেট-কিপার হওয়া। এক সময় সাসেক্সের এক ম্যাচে উইকেট-কিপার রুপার্ট ওয়েব চোট পান। সেই সময় সাসেক্স অধিনায়ক রবিন মার্লার তাঁকে উইকেট-কিপিং করতে বলেছিলেন। সেই থেকেই তিনি উইকেট-কিপার হয়ে ওঠেন। এর ফল ভালই হয়েছিল – দেড় বছরের মধ্যেই ইংল্যান্ড দলে স্থান পান, এবং ষাটের দশকের অনেকটা জুড়েই তিনি ছলেন দলের এক ভরসাস্থল।

(ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে করা) ২টি শতক এবং মোট ৯টা অর্ধশতক সমেত ৪৬ টেস্টে ১,৯৬২ রান করেন পার্কস, আর উইকেটের পেছনে তাঁর আছে ১১৪টা (১০৩ ক্যাচ ও ১১ স্টাম্পিং) শিকার। 

জিম পার্কস মারা যাওয়ার পর এই মুহূর্তে ইংল্যান্ডের সবচেয়ে বেশি বয়সী জীবিত টেস্ট ক্রিকেটার হলেন (৯০ বছর ৪ মাস বয়সী) রমন সুব্বা রো।

[প্রথম ছবিটি কলরব রায়ের ব্যক্তিগত পুস্তক-সংগ্রহ থেকে, বাকি দু’টি ইন্টারনেট থেকে]