কোভিডের কালো ছায়া আবার ঢেকে ফেলতে শুরু করল আইপিএল-আকাশ!
দিল্লি ক্যাপিটালস-এর ম্যাচ ছিল পাঞ্জাব কিংস-এর, পুনেতে, ২০ এপ্রিল। সেই ম্যাচ পুনে থেকে দেড়শতাধিক কিলোমিটার সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হল মুম্বই-এর ব্র্যাবোর্ন স্টেডিয়ামে। সঙ্গে চলল সারা দিনের টালবাহানা।
কারণ সেই কোভিড। দিল্লি শিবিরে ছ’জন আক্রান্ত। মিচেল মার্শ হাসপাতালে। বাকি ক্রিকেটারদের আরটিপিসিআর নেগেটিভ। সুতরাং, ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের সিদ্ধান্ত, ম্যাচ হবে। এবং মুম্বইতে। কারণ, এই মুহূর্তে মুম্বই-এর তাজ হোটেলে রয়েছে দিল্লি। দলের বাকি সবাইকে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা বাসে করে পুনেতে নিয়ে এসে খেলানো কঠিন। যেহেতু নিভৃতাবাসে রয়েছেন ক্রিকেটাররা, তাঁদের সেখান থেকে বের করে আনা এবং নতুন একটি শহরের নতুন কোনও হোটেলে এনে সেই সুরক্ষা বলয়ে রাখার ব্যবস্থা করা প্রায় অসম্ভব। তা ছাড়াও, পুনের হোটেল কোভিড-এর ছোঁয়া পেয়ে-যাওয়া দলকে জায়গা দিলে সেখানে আগে থেকেই যে দলের ক্রিকেটাররা আছেন, আপত্তি করতেই পারেন।
বিসিসিআই তাই সহজ সমাধান বেছে নিল, পাঞ্জাবকেই নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল মুম্বইতে। ম্যাচ সেখানে পূর্ব নির্ধারিত দিন এবং সময়েই হতে পারবে। সাংবাদিকদের নতুন করে ব্র্যাবোর্ন-ম্যাচ কভার করতে যাওয়ার জন্য অ্যাক্রিডিটেশন উইনডো খোলা হল। আপাতত সব ঠিকঠাক।
মুশকিল হল, ২২ এপ্রিল পুনে-তে আরও একটি ম্যাচ আছে দিল্লির। সেই ম্যাচ কিন্তু সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি এবং যা খবর, হবেও না। অর্থাৎ, ২২ এপ্রিলের ম্যাচ পুনেতেই খেলবে দিল্লি। প্রশ্ন তা হলে, এখন যে যে কারণগুলি দেখিয়ে ম্যাচ স্থানান্তরিত হল, ২০ এপ্রিলের ম্যাচের পরই সেই পরিস্থিতি কি করে আমূল বদলে যাবে যে, দিল্লির ক্রিকেটারদের সুরক্ষা বলয় ছেড়ে পুনেতে নিয়ে আসা সম্ভব হবে, পুনের হোটেলেও কোনও সমস্যা হবে না, অন্য দলও আপত্তি জানাবে না?
মনে রাখা যাতে পারে, গতবারও আইপিএল-এ এভাবেই থাবা বসিয়েছিল কোভিড যার ফলে শেষ পর্যন্ত বিসিসিআই বাধ্য হয়েছিল প্রতিযোগিতা বন্ধ করে দ্বিতীয় পর্ব আবার দুবাই নিয়ে যেতে। এবার যদিও সবে শুরু, তবে ভারতজুড়ে আবারও কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে, আবারও একই পথে গেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। মঙ্গলবার তো দিনের শুরু থেকেই হ্যাশট্যাগযুক্ত আইপিএল-ক্যানসেল ট্রেন্ড হয়ে গিয়েছিল টুইটারে!
সেই হিসাবে তাই আইপিএল-এ নতুন শুরু ব্র্যাবোর্ন স্টেডিয়ামে বুধবার, বলাই যায়। বিসিসিআই আরও একটি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে। ‘সেলিব্রেশন’ বন্ধ। মানে উইকেট নেওয়ার পর বোলারকে জড়িয়ে ধরে সতীর্থদের পারস্পরিক ছোঁয়াছুঁয়ি বন্ধ করার ব্যাপারেও নির্দেশ এসেছে। ‘হাডল’-ও বন্ধই হয়ে যাবে, আশা করা যায় এই নিয়মের পর।
ক্রিকেট কি তা হলে আবার ফিরে যাচ্ছে ছয়-সাত-আটের দশকে আবার? কোভিডের কারণেই দেশ-নিরপেক্ষ আম্পায়ারদের দিয়ে ম্যাচ পরিচালনা অনেকাংশে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কয়েকটি ক্ষেত্রে শুরু হয়েছে আবার, তবে বাধ্যতামূলক এখন আর নয়। সেই পুরাতন ক্রিকেট যুগের মতো ভারতের আম্পায়াররা ভারতের ম্যাচ পরিচালনা করছেন বা অস্ট্রেলিয়ার আম্পায়াররা অস্ট্রেলিয়ার। আধুনিক ক্রিকেট এই দৃশ্যও দেখে ফেলেছে। এবার উৎসব বন্ধ মানে সেই যে কপিলদেবের উনআশি সালে উইকেট নিয়ে নিজের ডান হাত উঁচু করে ছোট্ট একটা ‘সেলিব্রেশন’, আর তারপরই বল হাতে নিজের বোলিং মার্কে ফিরে-যাওয়া, তেমনও দেখতে চলেছে আইপিএল বোধহয় এবার!
সেই সময়ের ক্রিকেট ক্লিপিংস দেখুন। ফাইন লেগ থেকে ফিল্ডারের বোলারের কাছে আসার তো কোনও প্রশ্নই নেই, বেশিরভাগ সময়ই স্লিপ বা উইকেটরক্ষকও আউটের আবেদনে আম্পায়ার সাড়া দেওয়ার পর কাছাকাছি দাঁড়ানো ফিল্ডারদের সঙ্গে সামান্য কথাবার্তার মধ্যেই সীমিত রাখতেন তাঁদের উচ্ছ্বাস। এখন দেখলে সত্যিই কেমন যেন মনে হয়। ভিভ রিচার্ডসের উইকেট নিয়েও মাঠের এগারোজন একত্রিত হতেন না, এমন দৃশ্য সুলভ ছিল তখন।
বিসিসিআই-এর এই ‘হাই ফাইভ’ ও পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে আনন্দপ্রকাশ বন্ধ করার নির্দেশের পর আইপিএল-ও বোধহয় তেমনই দেখবে আবার।
আজকের উৎসবপ্রধান আইপিএল দেখতে অভ্যস্ত দর্শকের চোখে ব্যাপারটা কেমন ম্যাড়মেড়ে মনে হবে না?