এক ওভারের খেল: চাহাল-চালে মাত কেকেআর।

কথায় বলে ক্রিকেট খেলার ভোল বদলে যেতে পারে খুবই সামান্য সময়ে। একটি বল, দুটি বল কিংবা একটি ওভারেই বদলে যেতে পারে খেলা। তা সম্পূর্ণভাবে একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে যেতে পারে এক প্রতিপক্ষ থেকে অপর প্রতিপক্ষে।

যখন ৪ ওভারে ৪০ বাকি এবং ক্রিজে দুরন্ত সেট সেঞ্চুরির মুখাপেক্ষী শ্রেয়স আইয়ার ও তাঁর সঙ্গী ক্রিজে নবাগত ভেঙ্কটেশ আইয়ার ব্যাট করছেন, এবং তাঁদের পরে রয়েছেন শেলডন জ্যাকসন, দুই জোরে হিটার প্যাট কামিন্স ও শিবম মাভি – সেই অবস্থায় হয়তো অতি বড়ো রাজস্থান সমর্থকও ভাবতে পারেননি যে আর ছয়টি বলের মধ্যেই চিত্র যাবে পুরোপুরি পাল্টে।

ষোলোতম ওভারের প্রথম বলে বাঁ-হাতি ব্যাটার ভেঙ্কটেশ আইয়ারকে নিজের গুগলিতে সম্পূর্ণ পরাস্ত করে প্যাভিলিয়নে ফেরৎ পাঠালেন চাহাল। লেগ সাইডে ফিল্ডার থাকায় এবং বাউন্ডারি বড়ো হওয়ায় এগিয়ে এসে সোজা ব্যাটে খেলতে চান ভেঙ্কটেশ এবং সেখানেই হলেন ব্যর্থ। পরের দুটি বলে শেলডন জ্যাকসন এবং শ্রেয়স আইয়ার নিজেদের মধ্যে করেন ৩টি রান। এরপরই লেগ-মিডলে রাখা ফ্ল্যাট ড্রিফ্টের একটি বলে লেগ-সাইডে শট খেলতে গিয়ে লেগ-বিফোর হন দুরন্ত ছন্দে থাকা কেকেআর অধিনায়ক শ্রেয়স আইয়ার।

এরপরে শিবম মাভির ক্রিজে আসা নিয়ে বেশ ধোঁয়াশা রয়েছে। কেন প্যাট কামিন্স-এর মতো একজন বড়ো হিটারের আগে যাবেন শিবম মাভি? উত্তর অতি সহজ। স্পিনের বিরুদ্ধে কামিন্সের স্ট্রাইক রেট ৮৭ এবং তাঁর আউট হওয়ার প্রবণতা বেশী হওয়ায় শিবম মাভি তার আগে যান ওভারের দুটি বল কাটিয়ে দিতে। কিন্তু চাহালের একটি ‘জুসি’ ফ্লাইট দেখে নিজের কর্মোদ্দেশ্য ভুলে মাভি করে দেন স্লগ। অফ-স্টাম্পের বাইরের বল মিড-অন বাউন্ডারি দিয়ে ছক্কায় পাঠানো সম্ভব ছিল না মাভির পক্ষে এবং তা হয়ওনি। ডিপ মিড-উইকেটে ধরা দেন রিয়ান পরাগের হাতে। এরপরে নামতে হয় প্যাট কামিন্সকে। মুম্বাই ম্যাচের বিগ হিটিং স্মৃতিতে উজ্জ্বল থাকায় ১৩ বলে ৩৮ তখনও দূরের নীহারিকা মনে হচ্ছে না কারোর কাছেই। ঠিক এখানে আবার বাজিমাত চাহালের। কামিন্স একটি রং-ওয়ান ডেলিভারি আশা করবেন বুঝতে পেরে তাকে সামান্য একটি লেগস্পিন করান চাহাল এবং ডিফেন্ড করতে গিয়ে ব্যাটের কোণা লাগিয়ে সঞ্জু স্যামসনের হাতে ধরা পড়েন কামিন্স এবং চাহাল পান আইপিএলে তার প্রথম হ্যাটট্রিক এবং পাঁচ উইকেট।

ঠিক এর আগের রাজস্থান ইনিংসে কেকেআর বোলার সুনীল নারিনকে নিজের ইনিংসে মোট ৯ বল খেলেন বিধ্বংসী জস বাটলার। তার এই ৯টি ডেলিভারিতে কখনোই ছিল না কোন আক্রমণ করার চেষ্টা বরং শুধু সিঙ্গল নিয়ে মাত্র ৫ রান করেন। নিজের ৬১ বলের ইনিংসে নারিন বাদে বাকি বোলারদের বেধড়ক মেরে ৫২ বলে করেন ৯৮। ঠিক এখানেই কি হেরে গেলেন শ্রেয়স আইয়ার? এখানেই পারল না কেকেআর? পারা যেত না চাহালের শেষ ওভার একটু ধরে খেলতে? পরের দিকে তো ট্রেন্ট বোল্ট আর ওবেদ ম্যাকয় ছিলেন যাঁরা প্রায় ১২ ও ১১.৮৮ ইকোনমিতে বল করেছেন। চাহালকে একটু দেখে খেললে যদি আস্কিং রেট ১০ থেকে ১১ হতো, ক্ষতিই বা কী ছিলো? শ্রেয়স তো দুর্দান্ত ছন্দে ছিলেন।