শচীনের প্রথম রঞ্জি ম্যাচ. রায়-পরিবারের ক্র্রিকেট-সংস্কৃতি, রবীন্দ্র-রচনায় বা ইংরিজি সাহিত্যে ক্রিকেট, রমণী ও ক্রিকেট, ক্রিকেট-ম্যাচের শ্রেণীবিভাগের বিতর্ক, বিশ্ব-ক্রিকেটে বাংলা, বাঙালির ক্রিকেট-সাধনা – ‘বাংলা ক’রে’ জানতে-বুঝতে ইচ্ছে করলে আপনাকে পড়তে হবে প্রথম বইটা।
ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যুবির উত্থান, কাম্বলির অপচয়িত প্রতিভা, বাংলার প্রথম বা দ্বিতীয় রঞ্জি জয়, বিশ্বকাপের আদিপর্ব, পূর্ব-পাকিস্তান ও বাংলাদেশের ক্রিকেট-কাহিনি, বাংলা কিশোর সাহিত্যে ক্রিকেট, লর্ডসে ভিনুর গৌরবগাথা বা পঙ্কজের অধিনায়কত্ব, পোর্ট-অফ-স্পেনের পেহলওয়ান পলি, ইডেনে গিলির বিরুদ্ধে পঙ্কজ-শ্যামু-অমরা-চুনী এঁদের লড়াই – জানতে চাইলে পড়ুন দ্বিতীয় বইটা।
যথাক্রমে জানুয়ারি-২০২০ ও জানুয়ারি-২০২১ নাগাদ প্রকাশিত এই বই দুটির জন্য লেখক, প্রকাশক ও প্রকাশনার সঙ্গে জড়িত সকলকে সাধুবাদ জানাই। “পড়তে হয় নইলে পিছিয়ে পড়তে হয়” কথাটা নিছকই ‘আনন্দদায়ক’ বিজ্ঞাপনী ট্যাগ-লাইন নয়, এটা আমার ‘জীবন থেকে নেওয়া’ ব্যক্তিগত বিশ্বাস। আগ্রহী পাঠক না হ’লে সাহিত্য যে সমৃদ্ধ হয়না।
বাংলায় লেখা ক্রিকেটীয় ইতিহাসের বিভিন্ন পর্ব নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছেন তরুণ ইতিহাসবিদ সুমিত গঙ্গোপাধ্যায়, যাঁর ইতিহাস-চর্চার অন্যতম প্রধান বিষয় হচ্ছে ভারতের ও ভারতীয়দের ক্রিকেট, বিশেষ করে অবিভক্ত বাংলা ও স্বাধীনতা-উত্তর পশ্চিমবাংলার ক্রিকেট।
এই বিষয়গুলো নিয়ে অল্পসংখ্যক লোকই মাথা ঘামান। বেশির ভাগ বাংলাভাষী মানুষই বাংলার ক্রমাগত ক্রিকেট-ব্যর্থতায় বিরক্ত হন, হয়ত বা বম্বের বিশাল ক্রিকেট-ঐতিহ্যের কথা স্মরণ করে আফশোস করেন, আর বাংলার ক্রিকেটের দুর্ভাগ্য নিয়ে হাহুতাশ-দোষারোপ করেন। অন্যান্য অনেক কিছুর সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা ভুলে যান বম্বের ক্রিকেটীয় ইতিহাস নিয়ে লেখা বেশ কয়েকটা আকর্ষণীয় বইয়ের কথা। আর ইতিহাস তো মানুষকে জানতে, বুঝতে, পরিণত হতে শেখায়।
কয়েকটা ছোটখাট ভুলত্রুটি চোখে পড়েছে – উল্লেখ করি – আশা করি এইজাতীয় ‘বাকি দু’আনা’ পরবর্তী সংস্করণে শুধরে নেওয়া হবে।
- প্রথম বই / পৃষ্ঠা-১২: বসন্ত রঞ্জনে, এককালের ভারতীয় টেস্ট খেলোয়াড় পেসার ভি বি রঞ্জনে, ১৯৬৪ সালে শেষ টেস্ট-ম্যাচ আর ১৯৭০-৭১ সালে শেষ প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলেন। এইখানে উল্লিখিত বসন্ত রঞ্জনে সম্ভবত অন্য কেউ।
- প্রথম বই / পৃষ্ঠা-১১৬: অলক ভট্টাচার্য বোধহয় ভারতীয় দলে খেলেননি, সম্ভবত ১৯৭৯-৮০ মরসুমে কোনও এক টেস্টে দ্বাদশ ব্যক্তি ছিলেন, যদিও পূর্বাঞ্চল বা বোর্ড সভাপতির একাদশের হয়ে সফরকারী বিদেশি দলের বিরুদ্ধে খেলেছেন। আর উনি পেসার ছিলেন না, যতদূর মনে পড়ে লেগস্পিন-গুগলি বোলার ছিলেন।
- দ্বিতীয় বই / পৃষ্ঠা-৪৩: কালীচরণের লিলি-ধোলাই পর্বটা থাকলে হয়ত আরেকটু মজা বাড়ত – লিলিকে অমন মার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৯৭১-৭২ মরসুমে মেলবোর্নে সোবার্সের পর বোধহয় কালীই দেন, পরবর্তী কালে অবশ্য ভিভও দিয়েছেন।
- দ্বিতীয় বই / পৃষ্ঠা-৪৪: ওয়েস্ট ইন্ডিজের বার্নার্ড জুলিয়েন হবে, ব্র্যান্ডেন জুলিয়ান অনেক পরে খেলেন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে।
- দ্বিতীয় বই / পৃষ্ঠা-৬৩: উনি বব কাউপার (কুপার নয়), আর উনি স্টর্ক (স্ট্রড নয়) হেন্ড্রি – বোধহয় মুদ্রণ প্রমাদ হবে।
সবশেষে বলি বইয়ের কাগজ-ছাপাই-বাঁধাই-অলঙ্করণ ইত্যাদি ভাল। পৌনে-দুশো (প্রথমটা) ও দেড়শো (দ্বিতীয়টা) পৃষ্ঠার বই দুটিতে মুদ্রণ-প্রমাদ ও বানান-ভুল সংখ্যায় খুবই কম। অর্থাৎ সম্পাদনা ও প্রুফ-রিডিংয়ের কাজে যত্নের ছাপ আছে। প্রথমটায় ছবি নেই, তবে দ্বিতীয়টায় আছে – ছবিগুলো বেশ মূল্যবান, বিশেষত নব্য-প্রজন্মদের জ্ঞাতার্থে। বহু আগেকার (সংবাদপত্রে বা পত্রিকায় প্রকাশিত) সাদা-কালো ছবিগুলির মধ্যে কয়েকটার ছাপা বিশেষ ভাল আসেনি, কারণটা অন্তত আমার কাছে সহজবোধ্য তাই অনুযোগ করছি না।