পাঠ-প্রতিক্রিয়া – “বিষের জালে বাইশ গজ”

মাস-দেড়েক আগে প্রকাশিত বইটা পড়লাম, সব মিলিয়ে ভালই লাগল। ক্রিকেট-মাঠের জীবন, ক্রিকেটের ভাগ্যনিয়ন্তাদের কারিকুরি ও প্রায় দু’দশকের ব্যবধানের ঘটনাপ্রবাহকে নিয়ে প্লট-টা নতুন ধরণের, তবে মাঝেমধ্যে একটু বিক্ষিপ্ত লেগেছে, মনে হয় খানিকটা যেন ‘ফিল্মি জাম্প-কাট’-এর বাড়তি ব্যবহারের কারণে। ‘কহানি মে ট্যুইস্ট’ আছে বইকি, যদিও এই প্রতিক্রিয়ায় সেটা উহ্যই থাক আগ্রহী পাঠকদের জন্য, নইলে ‘সাসপেন্স অ্যাকাউন্ট’-এ কমতি পড়বে!

বিল বোস চরিত্রটিকে আমার অবশ্য ক্রীড়া সাংবাদিকের থেকে অনুসন্ধানকারী সাংবাদিক বলেই বেশি মনে হয়েছে। তাঁর নিজের ক্যুইজ মাস্টারসুলভ ব্যাপক তথ্যভান্ডারের জন্য, হয়ত সাংবাদিক বলেই, তাঁর কোনও ‘সিধুজ্যাঠা’ বা ‘মাইক্রফ্ট হোমস’-এর দরকার পড়েনি। 

আমার চরিত্রগত বদস্বভাব অনুযায়ী কয়েকটা প্রশ্ন / মন্তব্য মনে এসেছে, করেই ফেলি। লেখক নিজগুণে ক্ষমা করে দেবেন, এই আশা রাখি। এতে অবশ্য সাহিত্যরসের কোনও হানি হয়নি বলেই আমি মনে করি।

  • পৃষ্ঠা-১০৪: জ্যাক ফিঙ্গলটন-এর “Brightly Fades the Don” বইয়ের নামটা ভুল লেখা হয়েছে।
  • পৃষ্ঠা-১২৯: “ঢপের চপ” ও “কেলাকেলি” এই শব্দগুলো ষাটের দশকের মাঝামাঝি প্রচলিত ছিল কিনা, এই ব্যাপারে অবশ্য বাংলাভাষার এইদিকটা নিয়ে যাঁরা চর্চা করেন বা করেছেন তাঁরা হয়ত আলোকপাত করতে পারবেন। আমি এইগুলো প্রথম শুনি সত্তরের দশকের দ্বিতীয়ার্ধে, তবে সেটা তো কোনভাবেই প্রামাণিক তথ্য হতে পারেনা। 
  • পৃষ্ঠা-১৩০: “ক্লাব হাউস” কথাটা মনে হয় প্যাভিলিয়ন ও সংলগ্ন দর্শকাসন অর্থেই ব্যবহৃত। ১৯৬৪ সাল থেকে ইডেনের গ্যালারিতে [১৯৭৩-১৯৭৪-১৯৭৫ বছরগুলোতে স্কুল-ক্রিকেট খেলবার দৌলতে বারদশেক পুরনো প্যাভিলিয়নেও বটে] যাওয়ার সূত্রে যতদূর জানি বি সি রায় ক্লাব হাউস খুব সম্ভবত ১৯৭৬-৭৭ এম সি সি সফর থেকে ব্যবহার করা শুরু হয়। ইডেনের ইতিহাস নিয়ে আগ্রহী পাঠকরা শ্রীযুক্ত রাজু মুখোপাধ্যায়ের “Eden Gardens – Legend & Romance” বইটা দেখতে পারেন।
  • পৃষ্ঠা-১৩১: আগুন থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান পতাকা চিত্র-সাংবদিকের বাঁচানোটা খুব সম্ভবত কাহিনিরই খাতিরে, তবে এই ব্যাপারটা লেখকের “আমার কৈফিয়ত” অধ্যায়ে উল্লেখ করলে ভাল হ’ত। কারণ এই ঘটনার চাক্ষুষ সাক্ষী, ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান দলের তৎকালীন সহ-অধিনায়ক ও ওপেনিং ব্যাটার, কনরাড হান্ট তাঁর আত্মজীবনী “Playing to Win” বইতে লিখেছেন যে ঐ পতাকা-বাচাঁনো ব্যক্তিটি নাকি স্থানীয় পুলিস (বা ‘হোম-গার্ড’ ধরণের) কর্মচারি ছিলেন।
  • পৃষ্ঠা-২০৭: ১৯৬৬-৬৭ মরসুমে টেস্ট-ক্রিকেটে ‘ম্যাচের শেষ দিনের শেষ ঘন্টায় বাধ্যতামূলক ২০ ওভার’ নিয়ম খুব সম্ভবত চালু হয়নি। এই ব্যাপারটাও হয়ত কাহিনিরই খাতিরে, তবে সেটা লেখকের “আমার কৈফিয়ত” অধ্যায়ে উল্লেখ করলে ভাল হ’ত। কারণ ইংল্যান্ডের কাউন্টি ক্রিকেটে কিন্তু এই নিয়মটা ১৯৬৮ মরসুম থেকে লাগু করা হয় বলেই জানা যায় – টেস্ট-ক্রিকেটে তার আগেই সেটা চালু হওয়াটা বেশ কিছুটা অস্বাভাবিক।

সবশেষে বলি বইয়ের কাগজ-ছাপাই-বাঁধাই-অলঙ্করণ ইত্যাদি ভাল। সওয়া-দুশো পৃষ্ঠার বইতে মুদ্রণ-প্রমাদ ও বানান-ভুল সংখ্যায় নেহাতই নগণ্য। অর্থাৎ সম্পাদনা ও প্রুফ-রিডিংয়ের কাজে যত্নের ছাপ আছে। ছবিগুলো বেশ মূল্যবান – বহু আগেকার (সংবাদপত্রে বা পত্রিকায় প্রকাশিত) সাদা-কালো ছবিগুলির মধ্যে অল্প কয়েকটার ছাপা বিশেষ ভাল আসেনি, কারণটা অন্তত আমার কাছে সহজবোধ্য তাই অনুযোগ করছি না।