যে স্টেন ‘ডিলিট’ হবে না 

ভারতের ১৯৮৩ বিশ্বকাপ জেতার ২ দিন পরে ফালাবোরা-তে জন্মেছিলেন ডেল স্টেন। আজ থেকে ৩৯ বছর আগে। প্রিটোরিয়াতে গিয়ে ক্রিকেটপ্রেমিক হন, তার আগে স্কেটবোর্ডিংই ছিল তাঁর প্যাশন। তখন কেউ জানত না, তাঁর বোলিং অ্যাকশন আর সংহারক বোলিংয়ের জন্য বিশ্ব একদিন কটা চোখের এই ভদ্রলোককে সেলাম করবে!

মাত্র ৭টা ১ম শ্রেণীর ম্যাচ খেলেই ২১ বছর বয়সে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ২০০৪ সালে পোর্ট এলিজাবেথে টেস্ট অভিষেক হয় তাঁর, ঐ ম্যাচে এবিডি-রও অভিষেক। তারপর প্রায় দেড় দশক বিশ্বের তাবড় ব্যাটসম্যানরা তাঁর বলে “ব্যতিব্যস্ত” ছিলেন। অনেকে অ্যালান ডোনাল্ড-এরও উপরে রাখেন তাঁকে, দক্ষিণ আফ্রিকার পেস-বোলিং সাম্রাজ্যের টেকনিক্যাল বিশ্লেষণে। ২টো বিশ্বকাপ খেলেছিলেন, ২০১১ আর ২০১৫-তে। দুবারই নিউজিল্যান্ড ছিটকে দিয়েছিল তাঁর দলকে, যথাক্রমে কোয়ার্টার-ফাইনাল আর সেমি-ফাইনালে। ১৪টি বিশ্বকাপ ম্যাচে ২৩টি উইকেট নিয়েছেন তিনি, ২৩.৩৯ গড়ে। ২০১৯ বিশ্বকাপে তিনি টিমে থেকেও খেলতে পারেন নি, কাঁধের চোটের জন্য দেশে ফিরে যেতে হয়েছিল বলে।

সাদা পোষাকে আর লাল বলেই ছিল যার আসল চাঁদমারি, সেই ডেল স্টেইন সবরকম ধরণের ক্রিকেট-মঞ্চের উপর আনুষ্ঠানিকভাবে পর্দা ফেলে দিয়েছিলেন, ৩১ আগস্ট ২০২১ তারিখে। শেষ টেস্ট খেলেছিলেন ২০১৯-এর ফেব্রুয়ারিতে, শেষ ওডিআই ২০১৯-এর মার্চে আর শেষ টি২০আই ২০২০-র ফেব্রুয়ারিতে। কেরিয়ারের বেশির ভাগ সময় দক্ষিণ আফ্রিকার বোলিংকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ডেল স্টেন।

কিন্তু তিনি বিশ্বক্রিকেটের মহাফেজখানায় ও প্রতিপক্ষর মননে রেখে গেলেন Del(ete) করা যাবেনা, এমন কিছু Stain – তারই কয়েকটি রইলো এখানে:

১)

১৫ বছরে দেশের হয়ে টেস্টে ৯৩ ম্যাচে তিনি নিয়েছেন ৪৩৯টি উইকেট। তাঁর ইনিংস-সেরা পারফর্ম্যান্স ৭/৫১। ২৬ বার ইনিংসে ৫ উইকেট ও পাঁচ বার ম্যাচে ১০ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব আছে তাঁর। শন পোলকের পর  দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয়  বোলার হিসেবে টেস্টে ৪০০-র বেশি উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব রয়েছে তাঁর, যা স্বয়ং অ্যালান ডোনাল্ডেরও অধরা থেকে গিয়েছে। দুশো-বা-তার-বেশি  টেস্ট-উইকেট আছে এমন বোলারদের মধ্যে  স্ট্রাইক রেটের (৪২.৩) মাপকাঠিতে  তিনি দ্বিতীয় (কাগিসো রাবাডা-র পরেই)। অর্থাৎ প্রায় প্রতি সাত ওভারে একটি করে উইকেট নিয়েছেন তিনি। ব্যাট হাতে টেস্টে তাঁর সর্বোচ্চ স্কোর ৭৬। টেস্টে ১৩.৫৯ গড়ে করেছেন ১,২৫১ রান।

২)

ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে কম, মাত্র ১৬,৬৩৪ টি বল করে টেস্টে ৪০০ উইকেটের মালিক হয়েছিলেন স্টেইন। একমাত্র ইংল্যান্ড বাদে সব টিমের বিপক্ষে তাঁর বোলিং গড় ৩০-এর কম।

৩)

২০০৭-এর অক্টোবর থেকে ২০১৫-এর জুলাই পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকা দেশের বাইরে ১৪টি  সিরিজে অপরাজিত ছিল, যার মধ্যে ৭টি সিরিজে সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক ছিলেন স্টেইন।

৪)

(যুগ্ম)-তৃতীয়, স্যার রিচার্ড হ্যাডলির সঙ্গে,  দ্রুততম বোলার হিসেবে টেস্টে ৪০০ উইকেট (৮০টি টেস্টে) নিয়েছেন তিনি।  সামনে শুধু শ্রীলঙ্কার মুথাইয়া মুরলীধরণ (৭২টি টেস্টে) ও ভারতের রবিচন্দ্রন অশ্বিন (৭৭ টি টেস্ট)।টেস্টে যেসব পেস-বোলাররা ৪০০+ উইকেট নিয়েছেন, স্টেইন তাদের মধ্যে গড়ের হিসেবে চতুর্থ (২২.৯৫)। আগে আছেন কেবল কার্টলি আমব্রোজ, গ্লেন ম্যাকগ্রা ও স্যার হ্যাডলি।

৫)

পাঁচ উইকেট ও টেস্ট সংখ্যার আনুপাতিক হারে (০.২৮) দ্বিতীয়। সামনে শুধু স্যার রিচার্ড হ্যাডলি (০.৪২)।

৬)

ইনিংস পিছু উইকেট নিয়েছেন ২.৫৭টি, যা এই মুহূর্তে বিশ্বে তৃতীয়। এ ব্যাপারে তাঁর আগে আছেন শুধু রিচার্ড হ্যাডলি ও ডেনিস লিলি।

৭)

এশিয়ার মাটিতে সবচেয়ে বেশি উইকেট (২২ টেস্টে ৯২ উইকেট) নেওয়ার রেকর্ড স্টেনেরই।গড় ছিল ২৪.১১।

৮)

তিনি ২০১০ সালের জানুয়ারিতে আইসিসি টেস্ট মাপকাঠিতে বোলারদের শীর্ষস্থানে উঠেছিলেন।প্রায় সাত বছর ওই মাপকাঠিতে এক নম্বর বোলার ছিলেন তিনি।

৯)

টেস্টের পাশাপাশি ওডিআই এবং টি২০ তেও বল হাতে সফল ছিলেন তিনি।১৪ বছরে ওডিআইতে ১২৫ ম্যাচ খেলে নিয়েছেন ১৯৬ টি উইকেট, সেরা ৬/৩৯।ওডিআই ম্যাচে তিনি ৩ বার ৫-বা-তার বেশি উইকেট নেওয়ার নজির দেখিয়েছেন।ওডিআইতে ব্যাট হাতে তাঁর সর্বোচ্চ স্কোর ৬০। ওডিআইতে ৯.৩৫ গড়ে করেছেন ৩৬৫ রান। ১৩ বছরে টি২০ তে ৪৭ ম্যাচ খেলে তাঁর ঝুলিতে রয়েছে ৬৪ উইকেট, সেরা ৪/৯।

১০)

ওডিআই-তে পরাজিত দলের হয়ে ইনিংস-সেরা পারফর্মেন্স তাঁরই। ২০১৩ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পোর্ট এলিজাবথ ম্যাচে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি।

১১)

অবসরের সময়ে তাঁর ঝুলিতে ছিল ৬৯৯টি আন্তর্জাতিক উইকেট। মাত্র ১টি উইকেটের জন্য ৭০০ উইকেটের মাইল-স্টোন অধরা থেকে গেছে তাঁর, “সব পেলে নষ্ট জীবন”-র মতন।

কিছু দাগ ভালো হয়, তেমনই কিছু দাগ তিনি রেখে গেছেন বিশ্বের ক্রিকেট সাম্রাজ্যে। তাই নিয়ে ভালো আছি আমরা। তাঁর অভাব অনুভূত হবেই বিশ্ব ক্রিকেটে।ডেল স্টেইন, আপনিও ভালো থাকবেন জীবনের ২য় ইনিংসে।

শুভ জন্মদিন, বিশ্ব ক্রিকেটে ‘ডিলিট’ না হওয়া দাগ।