জন্মদিনের ক্যালেন্ডার – সপ্তদশ পর্ব

১৯৮০-৮১ ওয়েলিংটন টেস্ট (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ৮৯৭) খেলা যোগরাজ সিং। হরিয়ানা ও পাঞ্জাবের হয়ে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলা এই পেসারের জন্ম মার্চ ২৫, ১৯৫৮-য় চণ্ডীগড়ে। এঁর পুত্র যুবরাজ সিং-এর কথা বলা হয়েছে আগেই। প্রসঙ্গত, ১৯৭১-এর এই তারিখে মাদ্রাজে জন্ম ১৯৯৪-৯৫ থেকে ১৯৯৬-৯৭ অধ্যায়ে ৪ টেস্ট খেলা পাঞ্জাবি অফস্পিনার আশিস কাপুরেরও।

১৯৮৪-৮৫ থেকে ১৯৮৮-৮৯ পর্বে ২৩ টেস্ট খেলা হরিয়ানভি চেতন শর্মা। অধুনা জাতীয় নির্বাচকমণ্ডলীর প্রধানের পদে আসীন এই প্রাক্তন পেসারের জন্ম জানুয়ারি ৩, ১৯৬৬-তে লুধিয়ানায়।

১৯৮৪-৮৫ থেকে ১৯৯৫-৯৬ পর্বে ৩৯ টেস্ট খেলা মনোজ প্রভাকর। নিয়মিত ভাবে ব্যাট ও বল হাতে ইনিংসের সূচনা করে যাওয়া এমন খাঁটি অলরাউন্ডারের হদিস পরে আর পায়নি দেশ। ঘরোয়া ক্রিকেটে দিল্লির প্রতিনিধিত্ব করা মানুষটির জন্ম এপ্রিল ১৫, ১৯৬৩-তে গাজিয়াবাদে।

শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ১৯৮৬-৮৭ ঘরোয়া সিরিজে ২ টেস্ট খেলা তামিল মিডিয়াম পেসার ভরত অরুণ। কোহলির অধিনায়কত্বে শাস্ত্রী জমানায় বোলিং কোচ হিসেবে বেশি সুনাম কুড়ানো এই মানুষটির জন্ম ডিসেম্বর ১৪, ১৯৬২-তে বিজয়ওয়াড়ায়। খানিক বিশিষ্ট বোধহয় বলাই যায় তারিখটিকে। যেহেতু ১৯৯৪-এর এই তারিখেই কানপুরে জন্ম ২০১৬-১৭ থেকে শুরু করে এখনও অবধি ৭ টেস্ট খেলা উত্তরপ্রদেশের কুলদীপ যাদবের। যে উৎসাহ জেগেছিল এঁর উত্থানকে ঘিরে সেই অনুপাতে সাফল্য না এলেও দেশীয় ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম চায়নাম্যান বলে কথা।

১৯৮৮-৮৯ থেকে ১৯৯০ পর্বে ২ টেস্ট খেলা অলরাউন্ডার সঞ্জীব শর্মা। ঘরোয়া স্তরে ১৯৮৩-৮৪ থেকে সুদীর্ঘ ২০০৩-০৪ অধ্যায় অবধি দিল্লি, রাজস্থান ও রেলওয়েজের প্রতিনিধিত্ব করে চলা বল হাতে মধ্যম গতির এই পেসারের জন্ম অগাস্ট ২৫, ১৯৬৫-তে দিল্লিতে।

অগাস্ট ২৫, ১৯৬৯। দিল্লিতে জন্ম এই পর্বের আরও এক পেসারের। মাদ্রাজের এমআরএফ পেস ফাউন্ডেশনে ছাত্রাবস্থায় একটি দাঁত খোয়ানো মানুষটি দেশের হয়ে মাত্র দু’টি ইনিংসে বল করার সুযোগ পেয়ে একটিতে খতিয়ান রেখেছিলেন ৫-৭৯। বলছি ১৯৮৯-৯০ পাকিস্তান সফরে ২ টেস্ট খেলা বিবেক রাজদানের কথা।

১৯৮৯-৯০ থেকে ১৯৯০ পর্বে ৪ টেস্ট খেলা অতুল ওয়াসন। ঘরোয়া ক্রিকেটে দিল্লির প্রতিনিধিত্ব করা এই পেসারের জন্ম মার্চ ২৩, ১৯৬৮-তে দিল্লিতে।

দেখা যাচ্ছে দীর্ঘ কেরিয়ারে উইকেটের অপর প্রান্ত থেকে সেই অর্থে দীর্ঘস্থায়ী সহযোগিতা সেভাবে কখনও পাননি কপিল। অবশ্যই শতাধিক টেস্ট খেলা চরিত্র কোনও দেশের ক্রিকেট ইতিহাসেই আসে না আকছার। তবে সমকালে কপিলের এক তৃতীয়াংশ পথও কি হাঁটতে পেরেছিলেন কেউই?

না পারার কারণটা সম্ভবত নিহিত আছে ভারতীয় খাদ্যাভ্যাসে। পর্যাপ্ত মাংস ভক্ষণের যে ঐতিহ্যই নির্মিত হয়ে থাক বৈদিক যুগের ভারতবর্ষে (স্মরণ করা চলে খাণ্ডবদাহের মহাভারতীয় পটভূমিও), ইতিহাসের একটা বিশেষ কালপর্বের পর পাঞ্জাব ব্যতিরেকে অবশিষ্ট আর্যাবর্তে সামাজিক ভাবে যতি পড়ে আমিষ আহারে। লক্ষ করলে দেখা যায় অল্প আগেই উল্লিখিত কপিলের সাঙ্গোপাঙ্গদের অনেকেরই পারিবারিক শিকড় নিহিত ছিল উত্তর ভারতেই। এরই সমান্তরালে চোখ রাখা যাক কিছু সামাজিক ঘটনায়।

দেশভাগের পর মুসলিম পেসারদের স্বাভাবিক গন্তব্য হয় পাকিস্তান। মহম্মদ নিসারও পাড়ি জমিয়েছিলেন যেখানে।

ভারতবর্ষের যে প্রদেশে ঐতিহাসিক ভাবেই যথেষ্ট চল আমিষ ভক্ষণের, সেই আলোকপ্রাপ্ত বাংলার বাসিন্দাদের গড়পরতা স্বাস্থ্য আবার প্রাকৃতিক ভাবেই দুর্বল উত্তর ভারতীয়দের তুলনায়। পেলব সৌন্দর্যের প্রতি যতখানি অনুরাগ এই সংস্কৃতিপ্রেমী জাতির, মজবুত স্বাস্থ্যের (তথা শরীরচর্চার) প্রতি ততটা নয়। তর্কের খাতিরে অনেকেই হয়তো ফুটবলের ময়দানে বাংলার একদা আধিপত্যের প্রসঙ্গ টেনে আনতে পারেন এই স্থলে। তবে সম্ভ্রান্ত পরিবারগুলি থেকে কি সেই অনুপাতেও আগমন ঘটেছিল ফুটবলারদের?

সংস্কৃতিতে ঋদ্ধ আর-এক আলোকপ্রাপ্ত ভারতীয় জাতি মারাঠাদের মধ্যে আবার ঐতিহাসিক ভাবেই ব্যাটারদেরই রমরমা।

এই যাবতীয় সমীকরণের ফলাফল?

অনুশীলন কেন্দ্রে দেওয়া নৈশভোজের পাতে দু’টি রুটি বেশি চাওয়ায় নিজেকে ফাস্ট বোলার হিসেবে দাবি করা তরুণ কপিলের প্রতি কেকি তারাপোরের সেই বিখ্যাত উক্তি— ‘ভারতে কোনও ফাস্ট বোলার নেই’। যদিও টেস্ট ক্রিকেটের ময়দানে ফাস্ট বল করার চেষ্টাও করেননি কপিলদেব। রয়ে গিয়েছিলেন ফাস্ট-মিডিয়াম গোত্রেই। পরবর্তীকালে ব্যাখ্যা করেছিলেন কারণটা। গতি আরও বাড়ানোর সামর্থ্য অবশ্যই ছিল। তবে দেশীয় পাটা পিচে (যেখানে খেলতে হত রণজি, দলীপ বা ইরানির ঘরোয়া খেলাগুলি) হিতে বিপরীত হয়ে হাঁটুর সমস্যায় কমে যেতেই পারত কেরিয়ারের দীর্ঘতাও। তবে ভারতীয় ক্রিকেটে তারাপোরের সব চাইতে বড় অবদানটা হয়তো অজান্তেই নির্মিত হয়েছিল সেই রাতে। সেই উক্তিটা, যা পরোক্ষে চাগিয়ে তোলে কপিলকে।

ডিসেম্বর ১৭, ১৯১০। বোম্বেতে জন্ম একটু বেশি বয়সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ১৯৪৮-৪৯ দিল্লি টেস্টটি (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ৩০৪) খেলা অর্থোডক্স তারাপোরের। দেশীয় ক্রিকেট ক্যালেন্ডারের পাতায় তারিখটি যদিও বেশি স্মরণীয় হয়ে আছে তিনের দশকেই ব্যাটিং-এ রোশনাই জ্বেলে দেওয়া জনৈক টপ-অর্ডারের দৌলতে। মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র ও গুজরাট ব্যতিরেকেও অধুনালুপ্ত হোলকার ও মুসলিমদের হয়ে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলা যে মানুষটির জন্য উত্তাল হয়েছিল কলকাতা। হাতে ‘নো মুস্তাক নো টেস্ট’ প্ল্যাকার্ড ধরে। ডিসেম্বর ১৭, ১৯১৪। ইন্দোরে জন্ম কলকাতার প্রিয় মুস্তাক আলির।