বালি ক্রিকেট অ্যাকাডেমি এবং অভিজ্ঞ গুরু কল্যাণ ঘোষাল

বালিহল্ট স্টেশনে অটো বা বাস থেকে নেমে আপনাকে যেতে হবে ব্রিজের ওপারে। সেইখান থেকে একবার ডানদিকে বেঁকে অনেকটা ভেতরে গেলে আপনি দেখতে পাবেন দু’টো ক্রিকেট প্র্যাক্টিস নেট এবং তার পার্শ্ববর্তী মাঠে কিছু ছোট ছেলে/মেয়ে নকিং করছে, কেউ বা স্লিপ ক্যাচিং করতে মগ্ন।
এই সেই জায়গা। যা বাংলা ক্রিকেটকে দিয়েছে লক্ষ্মীরতন শুক্লা, শ্রীবৎস গোস্বামী, রবিকান্ত সিং, অনির্বাণ গুপ্ত, দীপক প্রসাদ এবং প্রমুখ আরো অনেক খেলোয়াড়। ক্রিকেটার তৈরির এই আঁতুড়ঘর মূল কলকাতা শহর থেকে অনেক দূরে। সেইখানেই বিগত ৩২ বছর ধরে ক্রিকেট সাধনায় মগ্ন শিক্ষক কল্যাণ ঘোষাল।


প্রায় ছ’ফুট উচ্চতার এবং বলিষ্ঠ চেহারার এক ভদ্রলোক তিনি। যখন কোচিং করাচ্ছেন তখন সামনে দাঁড়িয়ে প্রায় জনাপনেরো বাচ্চা ছেলে। একের পর এক ব্যাট হাতে সামনে আসছে তারা এবং প্রত্যেককে প্রায় ১০ মিনিট ধরে বল ছুঁড়ে যাচ্ছেন তিনি। কোনো ছেলের যদি ভুল হয় নিজে সামনে এসে তাকে দেখিয়ে দিচ্ছেন যে হাঁটু কোথায় থাকবে বা ড্রাইভ করার সময়ে কনুই কোথায় থাকবে।


কল্যাণবাবু যখন ব্যস্ত ছোটদের নিয়ে তখনই বড়োদের কোচিং করাতে ব্যস্ত অভিজ্ঞ কোচ জয় সমাদ্দার। রাশভারী সেই ভদ্রলোকের কাছে ছোট থেকে বড়ো কারোর নিস্তার নেই। কোনো লেগ-স্পিনার এসে একদিনের চেষ্টায় সম্পূর্ণ বল ঘোরানো আয়ত্তে আনতে পারছেনা দেখে তাঁর হুশিয়ারি আসছে, “বেঙ্গলে ২৬,০০০ লেগ স্পিনার আছে, খেলছে দু’জন। তুই একদিনে খেলবি!”, ঠিক তেমনই একজন ব্যাটার জোরে ব্যাট ঘুরিয়ে বল মিস করলে তিনি রসিকতার সুরে ধমক দিয়ে বলছেন “উইকেটকিপারের ঠান্ডা লেগে যাবে রে ওই হাওয়ায়।”
সব মিলিয়ে কেমন চলছে অ্যাকাডেমি? প্রশ্নের উত্তরে কল্যাণবাবু বললেন “করোনার পরে একটু খারাপ চলছিল তবে এখন আবার ভালোভাবেই চলছে।” সব মিলিয়ে সেইখানে প্র্যাক্টিস করে মোট ১৪০ জন। তাদের ভাগ করা হয়েছে বিভিন্ন বয়সভিত্তিক গ্রুপে। অনুর্দ্ধ-১৩, অনুর্দ্ধ-১৫ সব ধরণের বয়সের ছেলেই প্র্যাক্টিস করে এখানে। এই এতো বড়ো অ্যাকাডেমি সামলাতে কতটা দায়িত্ব এসে পড়ছে তাঁর ওপর? কল্যাণবাবুর কথায় “এখানে আমি ছাড়াও আরো পাঁচজন কোচ আছেন এবং সবাই কোচিংয়ের বিভিন্ন পরীক্ষা পাস করে এবং বাংলার ভালো স্তরে খেলেই কোচিং করাতে এসেছেন।”
কল্যাণ ঘোষালের কাছে মাঠ একটি প্রাণাধিক প্ৰিয় জায়গা। বলছিলেন পা ভেঙ্গে যাওয়ার পরেও এসে কোচিং করিয়েছেন, এমনকি বাবা মারা যাওয়ার পরেও ছুটি নেননি, ক্যাম্প চালিয়েছেন সমানভাবে। ছাত্রদের কাছেও সমান সম্মান পান তিনি। কোন ছাত্রের খিদে পেয়েছে, তাকে বললেন সামনের হোটেলে তাঁর নাম করে ডিম-ভাত খেয়ে আসতে। কোনো ছাত্রের মানিব্যাগ খোয়া গিয়েছে, তাকে গাড়ি ভাড়া দিচ্ছেন নিজেই।

কল্যাণবাবুর ছেলে কৌস্তভ ঘোষাল বলছিলেন “পুরো কলকাতা ময়দানে বাবার তৈরী ক্রিকেটার ভর্তি।” অবশ্য যে নাম প্রথমে করেছি তার আনুসঙ্গিক আরো নাম করতে গেলে এই লেখা হয়তো আরো অনেক বড় হবে। আশা করা যায় ভবিষ্যতে আরো সমৃদ্ধ হবে ক্যাম্প এবং ময়দানকেও আরো সমৃদ্ধ করবে।