There are two great days in a person’s life— the day we are born and the day we discover why
চতুর্থ ইনিংসে অ্যালেক বেডসারের তাণ্ডব (৭-৫২) সামলেও ১৯৪৬-এর ম্যাঞ্চেস্টার টেস্ট (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ২৭৭) বাঁচিয়ে ফেলেছিল ভারত। সৌজন্যে রঙ্গ সোহনির সঙ্গে শেষ উইকেটে দত্তারাম হিন্দলেকরের শেষ তেরো মিনিট উতরে দেওয়া। বিশ্বযুদ্ধের আগুপিছু দুই ইংল্যান্ড সফরে উইকেটরক্ষক হিসেবে যাওয়া মানুষটাই আবার রক্তের সম্পর্কে ছিলেন বিজয় মঞ্জরেকরের মাতুল। তবে এসবের কিছুই আর অধুনা তত গুরুত্বপূর্ণ নয় তাঁর সম্পর্কে। ভারতীয় ক্রিকেট ক্যালেন্ডারে অন্য এক সূত্রে বরং প্রাতঃস্মরণীয় হয়ে আছেন দত্তারাম। বছরের শুরু হয় তাঁর জন্মদিনেই। জানুয়ারি ১, ১৯০৯ তারিখে তৎকালীন বোম্বেতে (অধুনা মুম্বই) জন্ম দেশের হয়ে চারবার টেস্ট ক্রিকেটের আসরে অবতীর্ণ মানুষটির। জানুয়ারি ১, ১৯৯৯ অবধি যে নজিরে ছিল না আর দ্বিতীয় কারও অংশীদারিত্ব।
মরশুম ১৯৯৮-৯৯। তিরিশতম জন্মদিনের ঠিক পরবর্তী সকালেই জীবনের সেরা বার্থডে গিফটটা হাতে পান দিল্লির পেসার রবিন সিং জুনিয়র (জন্ম জানুয়ারি ১, ১৯৭০)। ইন্ডিয়া টেস্ট ক্যাপ। রাহুল দ্রাবিড়ের জোড়া শতরানে (১৯০ ও অপরাজিত ১০৩) স্মরণীয় সেই হ্যামিলটন টেস্টে (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ১,৪৩৮) বল হাতে তেমন দাগ না কাটতে পারলেও (২-৭৪ ও ১-১০২) দত্তারামের সহচর হয়ে সেই থেকে ফি বছরের ভারতীয় ক্রিকেট ক্যালেন্ডারের প্রথম তারিখটায় বিরাজ করছেন ছোট রবিন।
বছরের শুরুটা যদি হয় দুই ভিন্ন ভিন্ন যুগের দুই ভারতীয় টেস্ট ক্রিকেটারের জন্মদিনে শেষটাও তাই। কাঁটায় কাঁটায় ঠিক চব্বিশ ক্রিসমাসের ব্যবধানে দুই ৩১ ডিসেম্বর (যথাক্রমে ১৯৪১ ও ১৯৬৫) শহর মাদ্রাজের (অধুনা চেন্নাই) মাটিতে জন্ম মিডল-অর্ডার ব্যাটার মিলখা সিং ও লেগস্পিনার লক্ষণ শিবরামকৃষ্ণনের। অকালপ্রয়াত দত্তারামের (মৃত্যু মার্চ ৩০, ১৯৪৯) সঙ্গে ছোট রবিনের দেখা হওয়া সম্ভব ছিল না বাস্তবে। কিন্তু দুই বিভিন্ন প্রজন্মের ভারতীয় ক্রিকেটের প্রতিনিধিত্ব সত্ত্বেও (যথাক্রমে ১৯৫৯-৬০ থেকে ১৯৬১-৬২ ও ১৯৮৩ থেকে ১৯৮৫-৮৬ অধ্যায়ে ৪ ও ৯ টেস্টের সংক্ষিপ্ত কেরিয়ার অতিবাহিত হয় মিলখা ও শিবরামকৃষ্ণনের) নভেম্বর ১০, ২০১৭ অবধি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল থেকে একই সঙ্গে শ্বাস নিয়েছেন মিলখা ও শিবরামকৃষ্ণন।
টেস্ট ক্রিকেটের আসরে আজ অবধি ভারতবর্ষের প্রতিনিধিত্বের সুযোগ ঘটেছে তিনশো তিন ভাগ্যবান পুরুষের বরাতে। লিপ ইয়ারগুলি বাদ দিলে ক্যালেন্ডারের পাতায় অন্তত বাষট্টিটি তারিখের সেই সূত্রে নিষ্ফলা রয়ে যাওয়ার কথাই ছিল অঙ্কের নিয়মে। বাস্তবে সংখ্যাটা একশো তেষট্টি। পঞ্জিকামতে বাকি দুশো দু’টি গ্রেগরিয়ান তারিখে পৃথিবীর আলো দেখেছেন তিনশো তিনের কেউ না কেউ। এবং, ২৯ ফেব্রুয়ারি জন্মানো কোনও ভারতীয় পুরুষই সাদা পোশাকের খেলায় আজ অবধি প্রতিনিধিত্ব করেননি দেশের।
তারিখগুলির দিকে তাকালে চোখে পড়বে বহু বিচিত্র তথ্যই। প্রুডেনশিয়াল কাপ হাতে লর্ডসের ব্যালকনিতে কপিলদেবের সেই অমর ছবিতে উজ্জ্বল জুনের পঁচিশতম তারিখটিতেই যেমন আজ অবধি জন্ম হয়নি তিনশো তিনের কারও। দেশীয় ক্রিকেট ক্যালেন্ডারের এমন লাল কালিতে রাঙানো একটি তারিখকেও সেই নিরিখে বলতেই হয় নিষ্ফলা।
মরশুম ১৯৯৯-০০। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে মোহালি টেস্টে (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ১,৪৬২) অভিষেক কর্ণাটকি অলরাউন্ডার বিজয় ভরদ্বাজের। টেস্ট ক্রিকেটের ময়দান থেকে যাঁর অর্জন সামান্যই। তিনবারের চেষ্টায় মোটে ২৮ রান, ৩-টি ক্যাচ ও অভিষেক টেস্টে শ্যেন ও’ কনরের উইকেটটি। কিন্তু এঁর জন্ম বছরের এমনই এক মাহাত্ম্যপূর্ণ তারিখে যার সামাজিক তাৎপর্য যে কোনও ভারতবাসীর কাছেই অপরিসীম। অগাস্ট ১৫, ১৯৭৫-এ ব্যাঙ্গালোরে জন্ম ভরদ্বাজের। প্রসঙ্গত, ইন্ডিয়া টেস্ট ক্যাপের অধিপতি আর কোনও পুরুষই এমন মহিমাময় দিনে আলো দেখেননি পৃথিবীর।
ঘটনাচক্রে ভরদ্বাজের সঙ্গেই ইন্ডিয়া ক্যাপ পাওয়া ৬ টেস্ট খেলা অন্ধ্র উইকেটরক্ষক মান্নাভা প্রসাদের জন্মও (এপ্রিল ২৪, ১৯৭৫ গুন্টুরে) দেশীয় ক্রিকেট ক্যালেন্ডারের এক লাল কালিতে রাঙানো তারিখে। যেহেতু এপ্রিল ২৪, ১৯৭৩-এ তৎকালীন বোম্বেতে জন্ম ১৫,৯২১ টেস্ট রানের অধীশ্বর আধুনিক ক্রিকেটের ডন শচীন তেন্ডুলকরের। গোটা ক্রিকেট বিশ্বের প্রথম মনীষী হিসেবে ২০০ টেস্ট খেলতে পারা এই ভারতরত্নের কেরিয়ার দীর্ঘায়িত হয় ১৯৮৯-৯০ থেকে ২০১৩-১৪ অবধি এক সুদীর্ঘ অধ্যায় জুড়ে। বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী পর্বের ইতিহাসে ইংল্যান্ডের ব্রায়ান ক্লোজ (১৯৪৯—১৯৭৬) ব্যতিরেকে এত দীর্ঘ প্রহর আর কেউ হাজির থাকতে পারেননি টেস্ট ক্রিকেটের ময়দানে। এবং কাউন্টি স্তরে সমারসেট ও ইয়র্কশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করা ক্লোজও সেই সুদীর্ঘ ২৬ বছর ৩৫৬ দিনে খেলতে পেরেছিলেন মোটে ২২ টেস্টই। এপ্রিলের এই বিশেষ তারিখটিতে জন্ম বস্তুত তিন ভারতীয় টেস্ট ক্রিকেটারের। ১৯৮৮-৮৯ ক্যারিবিয়ান সফরে কিংস্টন টেস্ট (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ১,১২০) খেলা তামিল অফস্পিনার মার্গা বেঙ্কটরামানা-ও ১৯৬৬-র এই বিশেষ দিনেই জন্মেছিলেন সেকেন্দ্রাবাদে।
বলে রাখি, বিজয় ভরদ্বাজ ও মান্নাভা প্রসাদের সঙ্গেই উক্ত মোহালি টেস্টে ইন্ডিয়া ক্যাপ পাওয়া জনৈক ওপেনারেরও। জন্ম গুজরাটের ভাবনগরে হলেও ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে যিনি বরাবর প্রতিনিধিত্ব করেছেন বাংলার। বলছি সেপ্টেম্বর ৬, ১৯৭১-এ জন্মানো ৪ টেস্ট খেলা দেবাং গান্ধির কথা।
বাংলার কথাটা যখন উঠেই পড়েছে, জানিয়ে রাখি তথ্যটা।