জন্মদিনের ক্যালেন্ডার – অষ্টম পর্ব

ঘটনাচক্রে ক্যালেন্ডারের পাতায় সৌরভের জন্মদিনটির লাগোয়াই আবির্ভাব আরও দুই স্বনামধন্য পুরুষের। একজনকে যদি পরিসংখ্যানের নিরিখে (২০০৫-০৬ থেকে ২০১৪-১৫ পর্বে ৯০ টেস্টে ২৫৬ ক্যাচ ও ৩৮ স্টাম্পিং) বলতে হয় দেশের শ্রেষ্ঠতম উইকেটরক্ষক, আর-একজনও সাদা পোশাকের ক্রিকেটে বিশ্বের প্রথম মনীষী হিসেবে ১০,০০০ রানের মাইলফলকে পৌঁছনোর (১৯৭০-৭১ থেকে ১৯৮৬-৮৭ পর্বে ১২৫ টেস্টে ১০,১২২ রান) কৃতিত্বের অধিপতি। আর বলে দিতে হবে এঁদের পরিচয়? যথাক্রমে জুলাই ৭, ১৯৮১ ও জুলাই ১০, ১৯৪৯-এ রাঁচি ও বোম্বেতে জন্ম মহেন্দ্র সিং ধোনি ও সুনীল গাভাসকারের। বিশেষ করে জুলাইয়ের দশম তারিখটিকে দেশীয় ক্রিকেট ক্যালেন্ডারের পাতায় লাল কালিতে না রাঙানোর সাধ্য কার?

    হরভজন, ধোনি, গাঙ্গুলী বা গাভাসকারের মাপের নক্ষত্রদের আবির্ভাবের ফাঁকে ফাঁকেই জুলাইয়ের পাতায় বিরাজ করছেন জনাকয় অখ্যাত বা অল্পখ্যাত মানুষ। এঁরা হলেন, অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ১৯৫৯-৬০ মাদ্রাজ (কর্পোরেশন) টেস্ট খেলা মিডল-অর্ডার ব্যাটার মনমোহন সুদ (জন্ম জুলাই ৬, ১৯৩৯-এ অবিভক্ত পাঞ্জাবের লাহোরে) এবং ১৯৮৯-৯০ থেকে ২০০০-০১ পর্বে ২৮ টেস্ট খেলা অর্থোডক্স বেঙ্কটপতি রাজু (জন্ম জুলাই ৯, ১৯৬৯-এ হায়দরাবাদে)।

    হায়দরাবাদি উইকেটরক্ষক পোচিয়া কৃষ্ণমূর্তির জন্ম (জুলাই ১২, ১৯৪৭-এ হায়দরাবাদে) ঠিক দু’ দিন আগে হলেই ১৯৪৭-৪৮ অস্ট্রেলিয়া সফরে গোগুমাল কিষেনচাঁদ ও কমান্দুর রঙ্গচারীর যৌথ ভাবে নির্মিত নজিরটি স্পর্শ করতে পারত আর-একটি ভারতীয় জুটি। যেহেতু ১৯৭০-৭১ ক্যারিবিয়ান সফরে গাভাসকারের মতোই ইন্ডিয়া ক্যাপ অর্জন করা পাঁচবার (উক্ত সফরেই) দেশের জার্সি গায়ে চাপানো কৃষ্ণমূর্তিরও। বস্তুত কিংস্টন টেস্টেই (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ৬৮০) তাঁর অভিষেক। বোম্বের লিটল মাস্টারকেই বরং ক্যাপ দেওয়া হয় সফরের দ্বিতীয় টেস্টে পোর্ট অফ স্পেনে (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ৬৮৩)। আবিদ আলির সঙ্গে কিংস্টনে ভারতীয় ইনিংসের সূচনা করেছিলেন আর-এক নবাগত (তথা ওই একবারই দেশের জার্সি গায়ে চাপাতে পারা) হায়দরাবাদি ওপেনার কেনিয়া জয়ন্তীলাল (জন্ম জানুয়ারি ১৩, ১৯৪৮-এ হায়দরাবাদে)।

প্রসঙ্গত, কিংস্টন টেস্টকে ভারতীয় ক্রিকেট-রসিক মনে রাখবেন আর-এক মুম্বইকরের চওড়া ব্যাটের দৌলতে। বলাই যায় ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের মাটিতে সেবারের সফরের মূলসুর বাঁধা পড়েছিল প্রথম টেস্টেই তাঁর লড়াকু ২১২-য়। বলছি ১৯৬১-৬২ থেকে ১৯৭২-৭৩ পর্বে ৩০ টেস্ট খেলা দিলীপ সারদেশাইয়ের কথা। অগাস্ট ৮, ১৯৪০-এ মারগাঁওতে জন্ম এই মিডল-অর্ডার ব্যাটারের।

    বলে রাখি, পোচিয়া কৃষ্ণমূর্তির জন্মদিনে ভূমিষ্ঠ হয়েছিলেন তিনশো তিনের ভিড়ে ভাবীকালের আরও দুই ভারতীয় পুরুষ।

    জুলাই ১২, ১৯৬৫। ম্যাঙ্গালোরে জন্ম ১৯৮৭-৮৮ থেকে ১৯৯৬-৯৭ অধ্যায়ে ৩৭ টেস্ট খেলা মুম্বইকর মিডল-অর্ডার ব্যাটার সঞ্জয় মঞ্জরেকরের। একদা ভাবী ভারত অধিনায়ক হিসেবে চিহ্নিত সঞ্জয়ের প্রতিভার পরিপূর্ণ বিকাশ হয়নি কোনওদিনই। খেলা পড়ে যেতে শুরু করে দ্রাবিড়, গাঙ্গুলী বা লক্ষণদের উত্থানের প্রায় সমান্তরালেই।

    জুলাই ১২, ১৯৮৩। ইখারে জন্ম ২০০৫-০৬ থেকে ২০১১ পর্বে ১৩ টেস্ট খেলা পেসার মুনাফ পটেলের। শুরুর দিনগুলিতে যাঁর বলের গতি ছিল ঈর্ষণীয়।

    সঞ্জয় মঞ্জরেকরের সূত্রেই বলে নেওয়া যাক তাঁর পিতার বিষয়েও দু’-চার কথা। যদিও আরও অনেক বড় পরিসরই প্রাপ্য পাঁচের দশকের মুম্বই ঘরানার এই ধ্রুপদী মিডল-অর্ডার ব্যাটারের। ১৯৫১-৫২ থেকে ১৯৬৪-৬৫ পর্বে ৫৫ টেস্ট খেলা তো ছিলই না মুখের কথা। উপরন্তু ৩৯.১২ গড়ে ৩,২০৮ টেস্ট রানও সেকালের নিরিখে বেশ সাক্ষ্য দেয় দত্তারামের ভাগনের শক্তিমত্তার। এবং শেষ নয় এখানেও। দলীয় প্রয়োজনে ভদ্রস্থ অফস্পিন থেকে দস্তানা হাতে তেকাঠির পাহারায় দাঁড়িয়ে পড়ার মতো কিছু করতেই বাকি রাখেননি সেপ্টেম্বর ২৬, ১৯৩১-এ বোম্বেতে জন্মানো বিজয় মঞ্জরেকর।

    বলে রাখি পূর্বোক্ত তিনশো তিনের ভিড়ে মাত্র দু’জনের নজির রয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায়ের ক্রিকেটের আসরে বল হাতে অন্তত একটি উইকেট দখল ও দস্তানা হাতে অন্তত একটি স্টাম্পিং-এর। প্রথম নামটি অবশ্যই বিজয় মঞ্জরেকরের। দ্বিতীয়টি? খতিয়ানকে মুলতুবি রেখে (যেহেতু উইকেটরক্ষকের শিকারের সম্ভাবনা বহুলাংশেই নির্ভর করে দলীয় বোলিং শক্তির সুযোগ তৈরি করতে পারার দক্ষতার উপর) নিছক দক্ষতার প্রশ্নে হয়তো আজও সর্বকালের শ্রেষ্ঠতম ভারতীয় উইকেটরক্ষক হিসেবেই বিবেচিত হতে পারা সৈয়দ কিরমানির। ডিসেম্বর ২৯, ১৯৪৯-এ মাদ্রাজে জন্ম ১৯৭৫-৭৬ থেকে ১৯৮৫-৮৬ পর্বে ৮৮ টেস্ট খেলা এই ভদ্রলোকের।

জানুয়ারির প্রথম তারিখে দত্তারাম ও ছোট রবিনের আবির্ভাবের সূত্রে তো সূত্রপাত বর্তমান নিবন্ধেরই। ফেব্রুয়ারি, এপ্রিল, অগাস্ট, সেপ্টেম্বর ও নভেম্বর পয়লার খতিয়ানও ইতিমধ্যে পেয়েছি আমরা। জেনেছি মে, জুলাই ও অক্টোবরের প্রথম তারিখগুলির আজও নিষ্ফলা রয়ে যাওয়ার ইতিবৃত্তও। বাকি তিনটি মাসপয়লায় কারা কারা দেখেছিলেন পৃথিবীর আলো?

    মার্চ ১, ১৯৩০। মাদ্রাজে জন্ম ১৯৫১-৫২ থেকে ১৯৫৯-৬০ পর্বে দেশের হয়ে ৮ টেস্ট খেলা মাদ্রাজি মিডল-অর্ডার ব্যাটার কোয়েম্বাতারাও গোপীনাথের।

    মার্চ ১, ১৯৬৮। শোলাপুরে জন্ম ১৯৮৯-৯০ করাচি টেস্ট (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ১,১২৭) খেলা প্রতিভাবান মুম্বইকর পেসার সলিল আঙ্কোলার। প্রসঙ্গত, এই টেস্টেই অভিষেক ঘটে শচীন তেন্ডুলকরের।

    জুন ১, ১৯৬৪। সবরকণ্ঠে জন্ম নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১৯৮৮-৮৯ বোম্বে (ওয়াংখেড়ে) টেস্ট (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ১,১০৯) খেলা বরোদার বাঁ-হাতি পেসার রশিদ পটেলের। খেলার প্রথম দিন নরেন্দ্র হিরওয়ানির বলে রিচার্ড হ্যাডলির ক্যাচটি তালুবন্দি না করতে পারলে যিনি নিশ্চিত নাম লেখাতেন স্বামী ও শেখরদের সেই ‘হ্যাভ নটস’ ক্লাবেই।