জন্মদিনের ক্যালেন্ডার -তৃতীয় পর্ব

জানুয়ারি ৭, ১৯২৮। অমৃতসরে জন্ম জীবনের একমাত্র টেস্টে দুই দফায় ৪-টি স্টাম্পিং করা রাজিন্দরনাথের।

মে ২৪, ১৯৩৩। দুধানিতে জন্ম পাক ইনিংসের প্রথম দফায় আবদুল হাফিজ কারদারের (ঘটনাচক্রে এঁর সম্পর্কেও আসতে হবে আলোচনায়) একটি অসামান্য ক্যাচ ও দ্বিতীয় দফায় নজর মহম্মদের উইকেটটি দখল করা দানির।

ফেব্রুয়ারি ৪, ১৯৪৮। কানপুরে জন্ম সিংহলি ইনিংসের দ্বিতীয় দফায় রয় ডায়াস ও দলীপ মেন্ডিসের উইকেট দু’টি দখল করা রাকেশ শুক্লর।

মজার কথা হল, বোম্বে, হায়দরাবাদ ও মাদ্রাজের প্রতিটি টেস্টেই আর-একজন করে মানুষের অভিষেক হয় যাঁদের নামটি জড়িত হয়নি এই দুর্ভাগ্যজনক নজিরটির সঙ্গে। যথাক্রমে এঁরা হলেন মারাঠি ওপেনার মাধব আপ্তে (পূর্বোক্ত অরবিন্দ আপ্তের অগ্রজ), মাদ্রাজি অলরাউন্ডার কৃপাল সিং (পূর্বোক্ত মিলখা সিং-এর অগ্রজ) ও ঘরোয়া ক্রিকেটের বেশিটাই বাংলায় অতিবাহিত করা ওপেনার অরুণ লাল।

অক্টোবর ৫, ১৯৩২। বোম্বেতে জন্ম ১৯৫২-৫৩ মরশুমের মধ্যেই ৭ টেস্ট খেলে ফেলা মাধব আপ্তের। পাঁচের দশকের সেই প্রথম পর্বে ৪৯.২৭ ব্যাটিং গড় নিয়েও আর কখনও টেস্ট খেলতে না পারা আপ্তের ক্রিকেট প্রেমের আঁচ পাওয়া যাবে একটি তথ্যেই। যদি প্রশ্ন করা হয় বোম্বের ক্লাব ক্রিকেটে কতকাল চলেছিল আপ্তে যুগ, উত্তরটা হবে ১৯৪৮ থেকে ২০০২ অবধি প্রায় চুয়ান্ন বছর। অর্থাৎ সেই যেকালে পথেঘাটে শোনা যেত ‘অনমোল ঘড়ি’-র গান সেপিয়া রঙে ছোপানো বিজয় হাজারের সেই সময়টা থেকে ‘লগান’-এর কলি ভাঁজতে ভাঁজতে অজিঙ্ক রাহানের নেট প্র্যাকটিসে যাওয়ার দিনগুলি অবধি।

অক্টোবর ৫, ১৯৯৯। মাধব আপ্তে তখনও খেলে যাচ্ছেন বোম্বের ক্লাব ক্রিকেটে। চেন্নাইতে জন্ম হল এখনও অবধি ৪ টেস্ট খেলা তামিল অলরাউন্ডার ওয়াশিংটন সুন্দরের। প্রসঙ্গত তিনশো তিনের ভিড়ে মাত্র তিনের জন্ম ১৯৯৯-এ। সুন্দর বাদে বাকি দু’টি নাম যথাক্রমে এখনও অবধি ১০ টেস্ট খেলা পাঞ্জাবি ওপেনার শুভমান গিল (জন্ম সেপ্টেম্বর ৮, ১৯৯৯ ফাজিলকায়) ও ৫ টেস্ট খেলা মুম্বইকর ওপেনার পৃথ্বী শ-র (জন্ম নভেম্বর ৯, ১৯৯৯ থানেতে)। বলে রাখি, ১৯৯৯-পরবর্তী পর্বে জন্মানো কোনও ভারতীয় পুরুষই এই নিবন্ধ রচনার মুহূর্ত অবধি সাদা পোশাকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারেননি দেশের। এবং পৃথ্বীর নামটিই এই তিনশো তিনের ভিড়ে তরুণতম।

অগাস্ট ৬, ১৯৩৩। মাদ্রাজে জন্ম ১৯৫৫-৫৬ থেকে ১৯৬৪-৬৫ অধ্যায়ে ১৪ টেস্ট খেলতে পারা কৃপাল সিং-এর। তৃতীয় ভারতীয় পুরুষ হিসেবে যিনি টেস্ট অভিষেকেই গড়েছিলেন শতরানের নজির।

অগাস্ট ১, ১৯৫৫। মোরাদাবাদে জন্ম ১৯৮২-৮৩ থেকে ১৯৮৮-৮৯ অধ্যায়ে ১৬ টেস্ট খেলা অরুণ লালের। এই তারিখে জন্ম অরুণের আরও দুই পূর্বসূরির। যাঁদের মধ্যে দ্বিতীয় মানুষটি হলেন ১৯৭৬-৭৭ থেকে ১৯৭৯ অধ্যায়ে ৪ টেস্ট খেলা মিডল-অর্ডার ব্যাটার যজুর্বেন্দ্র সিং (জন্ম ১৯৫২-য় রাজকোটে)। প্রথমের কথায় আসা যাবে যথা সময়ে।

লাহোর ও করাচির উভয় টেস্টেই উইকেটশূন্য থাকা এবং করাচিতে ব্যাট হাতে কোনও রান না করে অপরাজিত রয়ে যাওয়া শেখরের জন্ম মার্চ ২৮, ১৯৫৬-য় মাদ্রাজে। যদিও দিনটিকে অত তাৎপর্যহীন ভাবারও উপায় নেই। যেহেতু ১৯২৬-এর এই তারিখেই শোলাপুরে জন্ম ১৯৪৮-৪৯ থেকে ১৯৬১-৬২ অধ্যায়ে দেশের হয়ে ৫৯ টেস্টে ৩,৬৩১ রান করা পলি উমরিগরের। প্রাক্‌-গাভাসকার জমানায় সর্বোচ্চ পর্যায়ের ক্রিকেটের আসর থেকে এত অর্জন আর কোনও ভারতীয় ব্যাটারের ছিল না। বলে রাখা যাক, বল হাতে ৩৫-টি টেস্ট উইকেটের অধীশ্বর অফস্পিনার উমরিগরের সেরা বোলিং-এর খতিয়ানটি ছিল ৬-৭৪।

তিনশো তিনের ভিড়েই আবার খোঁজ মেলে সেই ছয়ের। ইন্ডিয়া ক্যাপ অর্জনের আগে বা পরে সর্বোচ্চ পর্যায়ের ক্রিকেটের আসরে যাঁরা প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন অন্য দলেরও। এঁদের মধ্যে কালানুক্রমে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ নামগুলি উক্ত বিরল নজিরের সঙ্গে জড়িয়ে যাওয়ার নেপথ্যে অবশ্যই ক্রিয়াশীল হয়েছিল দেশভাগের বাস্তবতা। এঁদের প্রত্যেকেরই জন্ম অবিভক্ত পাঞ্জাবের লাহোরে। যথাক্রমে এঁরা ছিলেন বাঁ-হাতি মিডল-অর্ডার ব্যাটার গুল মহম্মদ, ন্যাটা অলরাউন্ডার আবদুল হাফিজ কারদার (দানি প্রসঙ্গে এঁর নামটাই উঠেছিল একটু আগে) ও মিডিয়াম পেসার (তথা লেগস্পিনার) আমির ইলাহি।

সেপ্টেম্বর ১, ১৯০৮। ঊনচল্লিশ পেরিয়ে ১৯৪৭-৪৮ সিডনি টেস্ট (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ২৯১) খেলা আমির ইলাহির জন্ম। ১৯৫২-৫৩ ভারত সফরে এসে যিনি খেলেছিলেন পাক ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম ৫-টি টেস্টও। প্রসঙ্গত, ১৯২১-এর এই তারিখেই নাসিকে জন্ম ১৯৫১-৫২ থেকে ১৯৫৪-৫৫ পর্বে ৪ টেস্টে দেশের প্রতিনিধিত্ব করা মারাঠি উইকেটরক্ষক মাধব মন্ত্রীর। রক্তের সম্পর্কে যিনি হতেন সুনীল গাভাসকারের মাতুল।

অক্টোবর ১৫, ১৯২১। ১৯৪৬ থেকে ১৯৫৬-৫৭ অধ্যায়ে খেলা মোট ৯ টেস্টের প্রথম আটেই ভারতবর্ষের প্রতিনিধিত্ব করা গুল মহম্মদের জন্ম।

জানুয়ারি ১৭, ১৯২৫। জন্ম ১৯৪৬-এর ইংল্যান্ড সফরে ভারতের হয়ে ৩ টেস্ট খেলা আবদুল হাফিজের। নামের সঙ্গে পারিবারিক কারদার পদবি জুড়ে ১৯৫২-৫৩ থেকে ১৯৫৭-৫৮ অধ্যায়ে ২৩ টেস্টে আবার যিনি প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন পাকিস্তানের। প্রসঙ্গত, ১৯১৩-র এই তারিখে পাটিয়ালায় জন্ম ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১৯৩৩-৩৪ মাদ্রাজ (চিপক) টেস্ট (টেস্ট ক্রমাঙ্ক: ২৩২) খেলা মিডল-অর্ডার ব্যাটার পাটিয়ালার যুবরাজ যাদবেন্দ্র সিং-এর।