করব, লড়ব, জিতব রে ...
মাঠে নেমে কী যে করতে হবে, সেটাই হয়তো ভুলে গেছে সবাই। লড়াই? হচ্ছে কই? দু–একজন যে চেষ্টা করছেন না, তা নয়। কিন্তু দলগত লড়াই? একসঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়া? একজনের অভাব অন্যজনের ঢেকে দেওয়া? এই ছবিগুলো দেখা যাচ্ছে না। লড়াইয়ের ঝাঁঝটাই উধাও। তাই জেতার রাস্তাও অন্ধকারাচ্ছন্ন। কী করলে, কোন পথে হাঁটলে যে জয়ের সরণীতে ওঠা যাবে, সেই উত্তরই খুঁজছে কলকাতা নাইট রাইডার্স।
প্রথম ম্যাচেই গতবারের চ্যাম্পিয়ন চেন্নাই সুপার কিংসকে হারিয়ে শুরুটা দারুণ করেছিল নাইটরা। পরের ম্যাচে বেঙ্গালুরুর কাছে হার। সেই হারের ধাক্কা কাটিয়ে তৃতীয় ও চতুর্থ ম্যাচে আবার দাপুটে জয় পেয়েছিল শ্রেয়স আয়ার ব্রিগেড। তারপর? কী যে হল দলটার! হঠাৎই ছন্দপতন। টানা পাঁচ ম্যাচে কেকে‘হার’। দিল্লির বিরুদ্ধে দু’বার, হায়দরাবাদ, রাজস্থান, গুজরাটের বিরুদ্ধে হারের ভুলভুলাইয়ায় হারিয়ে গেছে নাইটরা। প্লে-অফে যাওয়ার আশা বেশ ক্ষীণ। আশা টিকিয়ে রাখতে হলে বাকি পাঁচ ম্যাচেই জিততে হবে।
আর ঠিক এই পরিস্থিতিতেই উঠে আসছে নানা প্রশ্ন। অস্বস্তি, ক্ষোভ দুই–ই বাড়ছে নাইট সংসারে। চার–পাঁচটা নয়, ন’টা ম্যাচ খেলার পরও দলের সঠিক কম্বিনেশন তৈরি করতে ব্যর্থ টিম ম্যানেজমেন্ট। এই ন’টা ম্যাচে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ১৯ ক্রিকেটারকে খেলিয়েছে নাইটরা! ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে এত পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরেও কম্বিনেশন ঠিক হল না। ফল? হারতে হারতে দলের ভবিষ্যৎই অন্ধকারে। ওপেনিং জুটি নিয়ে নাইট ম্যানেজমেন্টের ভূমিকা হাস্যকর বললেও কম বলা হয়। ইতিমধ্যেই একাধিক আলাদা ওপেনিং জুটি দেখে ফেলেছেন শ্রেয়স, ব্রেন্ডন ম্যাকালামরা। কখনও ফিঞ্চ–নারাইন, কখনও বিলিংস–নারাইন, কখনও আবার ফিঞ্চ–বেঙ্কটেশ। প্রহসন আর নাটক চলছে ওপেনিং নিয়ে। নারাইনকে দিয়ে ওপেনিংয়ে ফল মিলছে না? তাহলে নামিয়ে দাও পাঁচে! বারবার দলের মধ্যে এই পরিবর্তন ভাল চোখে দেখছেন না ক্রিকেটাররাও। মুখ খুলেছেন কিউয়ি জোরে বোলার টিম সাউদি। বলেছেন, ‘টিমে বারবার বদল, প্লেয়ারকে বসিয়ে দেওয়া, এগুলো করে লাভ হয় না।’ অবশ্য এটাও জুড়ে দিয়েছেন, ‘টিম হারতে থাকলে সেটা না করে বিশেষ উপায়ও থাকে না।’ কিন্তু টানা হারে বিধ্বস্ত মুম্বই বা চেন্নাইও কি এভাবে বারবার দল পরিবর্তনের রাস্তায় হেঁটেছে? তিন ম্যাচে তিন রকম ওপেনিং জুটি! নাইটদের এমন রকমসকম দেখে অবাক হচ্ছেন, ভ্রু কোঁচকাচ্ছেন প্রাক্তন ক্রিকেটাররাও। সুনীল গাভাসকার যেমন বলেছেন, ‘ভাল ব্যাট করছে নীতীশ রানা। কিন্তু ওকে নামানো হচ্ছে পাঁচে অথবা ছয়ে। ওকে হয়তো ফিনিশারের ভূমিকায় ভাবা হচ্ছে। কিন্তু যেখানে আন্দ্রে রাসেলের মতো ফিনিশার আছে, তাহলে কেন এই কাজ রানাকে করতে বলা হবে? রানাকে আরও আগে নামানো দরকার। ও ভাল ফর্মে আছে। তাই ওর আরও বেশি বল খেলার সুযোগ পাওয়া উচিত।’ তোপ দেগেছেন যুবরাজ সিং-ও, ‘প্যাট কামিন্সকে বসে থাকতে দেখে অবাকই লাগছে। বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। কেন ওকে বাইরে রাখা হবে? কেউ যদি দু–তিনটি ম্যাচ খারাপ খেলে, তার ওপর থেকে আস্থা চলে যেতে পারে নাকি?’
নিলামে নাইট ম্যানেজমেন্টের ভূমিকাও প্রশ্নের মুখে। দূরদর্শিতার ছাপ রাখতে পারেননি কর্তারা। সবাইকে অবাক করে নেওয়া হয়েছিল অজিঙ্ক্য রাহানেকে। ফাটকা খেলার চেষ্টা? কাজে লাগেনি। দীনেশ কার্তিককে ছেড়ে দেওয়ার ফল টের পাচ্ছে নাইটরা। গতবার নাইট সংসারে ব্রাত্য কুলদীপ যাদব এবার অন্য দলে গিয়ে অবজ্ঞার জবাব দিচ্ছেন। প্রসিদ্ধ কৃষ্ণকে ছেড়ে দেওয়াও বিরাট ভুল নাইট কর্তাদের। আর নয়া অধিনায়ক শ্রেয়সকেও এবার ‘মেজাজে’ পাওয়া যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে নাইটদের অবস্থা তথৈবচ। তবুও আমরা আশায় আছি। দুটো প্লে-অফ হবে ইডেনে। অনেক দিন পর ঘরের মাঠে কলকাতা নাইট রাইডার্স আবার খেলবে, উদ্বেল হবে ক্রিকেটের নন্দনকানন, সাউন্ড সিস্টেমে বেজে উঠবে ‘করব, লড়ব, জিতব রে ...’, এই ছবি কি দেখতে পাব আমরা? উত্তরগুলো লুকিয়ে আছে ভবিষ্যতের গর্ভে।