ইয়ান বিশপের মতে, রোহিত শর্মার মন ভেঙে গিয়েছে। যাওয়ারই কথা। টানা আট ম্যাচ হেরেছিল পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নরা। অধিনায়কের মন যদি তাতেও না ভেঙে যায়, আর কীসেই বা ভাঙবে!
তবে, মনের এই ভেঙে-যাওয়ার পেছনে রোহিতের নিজের অবদানও কম নয়। সবে ভারত-অধিনায়ক হয়েছেন। বিরাট দায়িত্ব। তারপরই যদি ব্যাটে এমন খরা আসে তাঁর সবচেয়ে প্রিয় প্রতিযোগিতাতেই, নিজেকে দুষবেন না কেন?
সেই রানখরা কাটল না ৩৫তম জন্মদিনেও। এবার তাঁর রান ২। এবারের টাটা আইপিএল-এর হিসাব এমন — ৪১, ১০, ৩, ২৬, ২৮, ৬, ০, ৩৯, ২। টানা নয় ম্যাচে রোহিত একবারও পঞ্চাশ পেরননি । ৯ ইনিংসে মোট রান ১৫৫, গড় ১৭ পেরিয়েছে কোনও রকমে। খেলা হচ্ছে মুম্বই ও তার আশেপাশে। ব্র্যাবোর্ন, ওয়াংখেড়ে, ডিওয়াই পাটিল বলুন বা পুনে, সবই তাঁর ঘরের মাঠ ধরে নিতে কোনও অসুবিধেই হওয়ার কথা নয়। সেখানে এমন পারফরম্যান্স পরপর, কী করেই বা মেনে নেবেন তাঁর অতি বড় সমর্থকও? মুম্বইতেই তো ডিওয়াই পাটিল স্টেডিয়ামে মুম্বই-এর সাংবাদিককেই বলতে শুনে এলাম সে দিন, ‘মুকেশ চৌধুরির বলেও দিশা পাচ্ছেন না মুম্বই-অধিনায়ক! দেশের দায়িত্ব নিয়ে আন্তর্জাতিক বোলারদের বিরুদ্ধে দাপট দেখাবেন কী করে?’
সেই দিনের পর সমাজ-মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল প্রশ্নোত্তর। ‘অক্সিজেনের ফর্মূলা কী? স্কোরবোর্ডে রোহিত শর্মার নামের পাশে তাকান!’ দু-বলে শূন্য করেছিলেন রোহিত। স্কোরবোর্ডে দেখানো হচ্ছিল ০(২)। অক্সিজনের ‘ও-টু’ বোঝাতে সেদিকেই তাকানোর নির্দেশ হোয়াটস্অ্যাপ ট্রোলে। নিঃসন্দেহে খুব খারাপ। কোনও খেলোয়াড়কেই এমন ট্রোল করা উচিত নয়, বিশ্বাস দৃঢ়। তার ওপর রোহিত যিনি মুম্বই ইন্ডিয়ানস-কে যা যা দিয়েছেন, তারপর এমন ট্রোল তো ভাবাই যায় না। রীতিমতো অশালীন মনে হয়েছিল। কিন্তু আজকের সোশ্যাল মিডিয়া-অধ্যুষিত দুনিয়া তো এই সব নিয়েই ব্যস্ত সারা দিন। কাকে কীভাবে ট্রোল করা যায় বা যাবে, ভাবনাতেই কেটে যায় দিন।
তবে, রোহিতের এই খারাপ সময় চলার জন্য ঈশান কিষাণের সোয়া পনের কোটি টাকা পাওয়াকে দায়ী করাও সমান অর্থহীন। সোয়া পনের কোটি টাকা ঈশান নিজের দর হিসাবে ধার্য করেননি। আইপিএল-এ তেমন বন্দোবস্ত নেই। ক্রিকেটারদের দর ঠিক হয় নীলামে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে। সেই সময় যাঁরা ঈশানের জন্য এত টাকা দিতে রাজি হয়েছিলেন, সমস্যাটা তাঁদের। তরুণ ঈশান নিশ্চিতভাবেই সম্ভাবনাময়। তিনি পারছেন না যেমন, সূর্যকুমার যাদব ছাড়া তাঁর দলের আর কে-ই বা পারছেন! প্রায় পুরো দলই ছন্দহীন যেখানে, বিশেষ করে অধিনায়ক নিজেই, তরুণ কাউকে দলের এই দিশেহারা অবস্থার জন্য দায়ী করাও চূড়ান্ত অক্রিকেটীয়।
ঠিক কী হয়েছে রোহিতের? ব্যাড-প্যাচ, নিশ্চিত। তিনি ফ্লিক করতে গিয়ে ব্যাট আগে বাড়িয়ে দিচ্ছেন, বল পরে এসে মিড-অনে লোপ্পা ক্যাচ হয়ে যাচ্ছে — এমন দৃশ্য ক্রিকেটের পক্ষে ভাল নয়। তিনি নিজেই ভুল করছেন। যেমন রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বলের বাউন্স বুঝতে ভুল করে সুইপ করতে গিয়ে আউট হলেন রাজস্থানের বিরুদ্ধে শনিবার। ফ্লিক, সুইপ এই স্ট্রোকগুলো রোহিতের জলভাত। নিখুঁত শব্দটার সংজ্ঞাসহ উদাহরণ বোঝাতে রোহিতের ফ্লিক দেখানো যেতেই পারে। সেখানে এমন আউট নিশ্চিতভাবেই বলে দেয় ছন্দহীনতার কথা। রাতারাতি এত খারাপ হয়ে যেতে পারেন নাকি রোহিত? কখনও নয়। আসলে ব্যাড-প্যাচ ব্যাপারটাই এমন, অভিজ্ঞরা বলে থাকেন, সহজতম কাজটাও কঠিন হয়ে যায়। আরও যা সবচেয়ে খারাপ, ভাগ্য ব্যাপারটা একেবারেই সঙ্গ দেয় না। দুরন্ত ক্যাচ, সরাসরি থ্রো উইকেটে, খেলা-অসম্ভব এমন একটা বল — এই সবই হয়ে চলে পরপর ব্যাড-প্যাচ আক্রান্ত ব্যাটসম্যানের। হয় প্রথম ভুলেই আউট, নয় বিপক্ষের কারও দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে।
সূর্যকুমার ও তিলক বর্মার পর টিম ডেভিডের ঝোড়ো ব্যাটে এবারের আইপিএল-এ শেষ পর্যন্ত প্রথম জয় পেল মুম্বই। স্বস্তির নিঃশ্বাস শিবিরে। দল একটা জয় পেলেই রোহিতের স্ট্রোকগুলো আবার জায়গায় ফিরবে হয়ত, ভাবছিলেন যাঁরা, এই মুহূর্তে আরও আশাবাদী হবেন নিশ্চিত। হয়ত, পরের ম্যাচেই, স্বাভাবিক ছন্দে দেখতে পাওয়া যাবে রোহিতকে। যে কোনও ধরনের ক্রিকেটেই রোহিতের মতো ব্যাটসম্যানকে বারবার এমন অস্বস্তিতে পড়তে দেখাটাও যে একেবারেই দৃষ্টিসুখকর নয়!