বাউন্ডারি নাই বা পেরোলো, পেরিয়ে যাক অন্তত তিরিশ গজ।


মুকেশ চৌধুরীকে প্রথম চারটি বলে কষ্টার্জিত দুটি বাউন্ডারি পাওয়ার পরে তাঁর ইনিংস যে হাইওয়ে ধরেছিলো তার বীজমন্ত্র ছিলো একটাই। যদি বাউন্ডারি সীমানা না পার করতে পারো তবে অবশ্যই পার কোরো তিরিশ গজের বৃত্ত।
মুকেশ চৌধুরীকে একটি সূক্ষ্ম প্লেসমেন্ট করে থার্ড-ম্যান অঞ্চল দিয়ে যখন বাউন্ডারিতে পাঠালেন, তারপরের ওভারে আবার মুকেশকে দু’বার মিড-অফ অঞ্চল দিয়ে সোজা লফ্টেড খেলা অন্তত তার প্রমাণ। এছাড়া সিমরজিৎ সিংকে যে পুলটা মিড-উইকেট দিয়ে একটা মাটি-ছোঁয়া ছক্কা হলো সেটার হলমার্ক যেন শুধুই প্রাপ্য ঋদ্ধিমান সাহার। এর আগে এই আইপিএলেই একইভাবে ছয় হজম করেছেন উমেশ যাদব, জাসপ্রিত বুমরাহ, আজ আবার পুলটা ছিলো একইরকম ভঙ্গিমার। আজ পাওয়ার-প্লের সময় তাঁর স্ট্রাইক রেট ছিলো ১৬১! এই ২৩ বল খেলে ৩৭ রানের পাওয়ার-প্লে ইনিংস এই নিয়ে দ্বিতীয়বার খেললেন ঋদ্ধি, যদিও এবার সঙ্গে ছিলো সামান্য ভাগ্য-ফ্যাক্টর।


আজ গুজরাট টাইটান্স ইনিংসের প্রথম পাঁচটি ওভার শেষে রান দাঁড়ায় ৪৫ এবং শুভমান গিলের তাতে অবদান ছিলো মাত্র ৭। একটি ক্রিকেট ওয়েব-সাইটের আর্টিকেল বলছিলো গিল একজন স্লো স্টার্টটার হওয়ার কারণে তার পরিপূরক হিসেবে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় হলেন ঋদ্ধির মতো একজন ব্যাটার। গত মুম্বাই ম্যাচে ঠিক এই একই জিনিস দেখা গিয়েছিলো। পাওয়ার-প্লেতে বেধড়ক ঠেঙিয়ে ঋদ্ধি যখন ৪০ তারপরে খেলা শুরু করে গিল দ্রুততার সাথে রান তোলেন। আজ শুধু ব্যতিক্রম হয়ে দাঁড়ান মাথাসা পাঠিরানা। তিনি এসে শুভমান গিলকে হঠাৎ তুলে নেওয়ায় সামান্য ভাঙন হয় গুজরাট ইনিংসে। ক্রিজে এসে ম্যাথিউ ওয়েড ঝোড়ো ২০ রান তুললেও তা যথেষ্ট ছিলোনা, লফ্টেড খেলতে গিয়ে তিনি আউট হলে ক্রিজে আসা হার্দিকও পাঠিরানার বল বুঝতে না পেরে যখন লোপ্পা ক্যাচ দেন তখনও গুজরাট দল জয়ের থেকে কিছু দূরে।


এরপরে কাজ ছিল শুধু অ্যাঙ্করিং এবং সেই জায়গায় যেন আশি শতাংশ নম্বর নিয়ে পাস ঋদ্ধি। ইনিংসের নেতিবাচক দিক একটাই এবং তা হলো প্রথম ছয় ওভারের পরে সাহার ব্যাট থেকে কোনো বাউন্ডারি না আসা। ইনিংসে তাঁর একমাত্র বাউন্ডারি আসে ইনিংসের শেষ বলে জয়সূচক রান হিসেবে, এছাড়া সাহা আজ অ্যাঙ্কর হিসেবে অন্তত আজ ভালোই করেছেন।
আজকের ৫৭ বলে ৬৭ নিয়ে তাঁর ঝুলিতে ২৮১ রান এসেছে এবং গড় ৪০। মোট তিনি মেরেছেন ৩৫টি চার এবং ছয়টি ছক্কা। এই আইপিএলের সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহকদের লিস্টে তিনি রয়েছেন ২৮ নম্বরে। এখন ঋদ্ধিপ্রেমীদের আফসোস একটাই, যদি পাঁচটা ম্যাচ আরো আগে পেতেন তবে হয়তো এই লিস্টে আরো এগিয়ে থাকতেন এবং টিটোয়েন্টি ক্রিকেটে ৪,০০০ রান পূর্ণ হতে যে ৭০ রান এখনও বাকি তা হয়তো হয়ে যেত অনেক আগেই। এই মরশুম তো কিপার-ব্যাটার ঋদ্ধিমান সাহার সেরা আইপিএল অবশ্যই।
চলতি আইপিএল শুরুর দুই মাস আগেও যাঁর খেলা নিয়ে প্রশ্ন ছিলো, বাদ পড়তে হয়েছিলো ভারতীয় দল থেকে শুধুমাত্র বয়সজনিত কারণে, সেই তিনি আজ নিজের সেরা ফর্মে ম্যাচ বার করছেন এবং প্রশংসা পাচ্ছেন সকলের। ২০২২ শুরুর পর থেকে তাঁর জীবনে এসেছে অনেক টানাপোড়েন। হোয়াটস-অ্যাপ চ্যাট কেলেঙ্কারি থেকে শুরু করে রঞ্জি খেলতে না চাওয়ায় বিভিন্ন নেতিবাচক কমেন্ট আসা বা কিছু শ্রেণীর মানুষ তো অবসরের জল্পনা শুরু করে দিয়েছিলেন অক্লেশে। আজ এই ২৮১ রান যেন তাঁর সেইসকল মানুষকে দেওয়া সর্বশ্রেষ্ঠ জবাব। ঋদ্ধিমান এই ৩৮-এও যেন দেখাচ্ছেন কিভাবে শুধুমাত্র হার্ড ওয়ার্ক ও খেলার প্রতি ভালোবাসা একজনকে করে তুলতে পারে অদ্বিতীয়।
ঋদ্ধিশুভানুধ্যায়ীদের তরফ থেকে থাকতে পারে একটাই দাবি। অন্তত গুজরাটকে আইপিএল জেতানোয় প্লে-অফ স্তরেও অগ্রণী হন ঋদ্ধি। তবেই তো সম্পূর্ণ হবে সব জবাব দেওয়া।