“রয়”-সাহেবের পরলোকগমন

ঠোঁটভর্তি জিঙ্ক ক্রিম মেখে মাঠে নামা সেই লোকটা বিখ্যাত ছিলেন তাঁর উদ্ধত স্বভাবের জন্য। ব্যাট হাতে প্রতিপক্ষকে দূরমুশ করে দেওয়া বা মাঝে মাঝে বল হাতেও সমানতালে অবদান রেখে যাওয়ার মধ্যে দিয়ে মাঠে তাঁর উপস্থিতিকে উপেক্ষা করতে পারতোনা কোনো দলই।
তাঁর উপস্থিতিকে ব্যাখ্যা করতে ২৬ টেস্টে ৪০ ব্যাটিং গড়ে ১,৪৬২ রান বা ১৯৮টি ওডিআইতে ৩৯.৭৫ গড়ে ৫,০৮৮ রান এবং ১৩৩ উইকেটের দলিল যথেষ্ট নয়, বরং আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায় তার ক্রিকেটের বাইরের ঘটনাসমূহ। সেটা হরভজন সিংয়ের সাথে ‘মাঙ্কিগেট’ ঘটনাই হোক বা “বিগ বস” সেটে পূজা মিশ্রকে ফুল দেওয়া – সবক্ষেত্রেই তিনি ছিলেন বিরাজমান।


কভার বা মিড-উইকেট পজিশনে তাঁর দুরন্ত ফিল্ডিংয়ের জন্য তাঁর প্রাক্তন অধিনায়ক রিকি পন্টিং তাঁর নাম দিয়েছিলেন ‘টাইগার শার্ক’। সেই ‘টাইগার শার্কের মৃত্যুই যেন হলো একেবারে আকস্মিকভাবে। মাত্র ৪৬ বছর বয়সে একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করলেন সাইমন্ডস।
সূত্রের খবর অনুযায়ী টাউনসভিলের হার্ভে রেঞ্জ রোডে ১৪ই মে রাত্রি ১১টার সময়ে নিজের গাড়ি নিজেই চালাচ্ছিলেন সাইমন্ডস এবং গাড়ির মধ্যে তিনিই ছিলেন একমাত্র সওয়ারী। হার্ভে রেঞ্জ রোড পেরিয়ে যখন গাড়ি অ্যালিস ব্রিজের কাছে যাচ্ছে তখন হঠাৎই উল্টে যায় গাড়িটি। ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট টিম এগিয়ে এসে তাঁকে উদ্ধার করলেও তার শরীরে যে ভয়ানক চোট হয়েছিল তার কারণেই আর ফেরানো যায়নি ‘রয়’কে।
সাইমন্ডসের এই মৃত্যুতে গভীর শোকাহত ক্রিকেটমহল। অ্যাডাম গিলক্রিস্ট টুইট করেছেন ” খুব বিশ্বাসী এবং আনন্দপ্রেমী বন্ধুর কথা মনে পড়ছে যে সব কিছু করতে পারতো বন্ধুর জন্য। এটাই রয়।” ২০০৮ সালের সিডনি টেস্টের পরে শত্রুতা হয় হরভজন সিংয়ের সঙ্গে। প্রাক্তন ভারতীয় স্পিনার লেখেন “অ্যান্ড্রু সাইমন্ডসের মৃত্যুতে আমি হতভম্ব। খুব তাড়াতাড়ি চলে গেলে। ওর পরিবার ও বন্ধুদের সমবেদনা জানাই। আত্মার শান্তি কামনা করি।” অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট এর চেয়ারম্যান ল্যাচলান হেন্ডেরসন বলেছেন “অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট তার আরো একজন সেরাকে হারালো।”
আদতে একজন ক্যারিবিয়ান হলেও সাইমন্ডসকে দত্তক নেন এক ব্রিটিশ দম্পতি। ১৯৭৬ সালে তাঁর জন্ম হয় ইংল্যান্ডের বার্মিংহ্যাম শহরে এবং তারপরে পরিবারের সঙ্গে তিনি চলে আসেন অস্ট্রেলিয়ায়। যদিও কেন্ট, ল্যাঙ্কাশায়ার, সারে, গ্লস্টারশায়ার দলের হয়ে চুটিয়ে কাউন্টি খেলেন তিনি। এছাড়া কুইন্সল্যান্ডের হয়ে শেফিল্ড শিল্ড খেলতেন সাইমন্ডস। এক সময়ে মাত্র ২০ বছর বয়সে গ্লস্টারশয়ারের হয়ে এক ইনিংসে ১৬টি ছয় মারেন তিনি এবং সেটি একটি রেকর্ড ছিল। আইপিএলেও তিনি প্রতিনিধিত্ব করেছেন ডেকান চার্জাস এবং মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স দলের হয়ে।
“উইলোর উইল” তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করছে।