১৯৫২ সালে লীডস টেস্টের সেই বীভৎস গল্পটা আমরা সবাই জানি। ইংল্যান্ডের তরুণ ফাস্ট বোলার ফ্রেডি ট্রুম্যানের ভয়ঙ্কর পেস-তান্ডবে ভারতীয় ইনিংস শুরুতেই ৪ উইকেট হারায় ‘শূন্য’ রানে। ভারত সেবার পঙ্কজ রায়, মাধব মন্ত্রী, দত্তাজিরাও গায়কোয়াড় ও বিজয় মঞ্জরেকরের উইকেট খোয়ায় স্কোরবোর্ডে কোনও রান ওঠার আগেই। ভারতীয় ক্রিকেটে সেটা এক লজ্জার ইতিহাস নিঃসন্দেহে।এ’জ়ন্য একদা প্রয়াত পঙ্কজ রায়কে পিছনে নানা টিপ্পুনি শুনতে হয়েছে (যেন সব দোষ একাই এই বঙ্গ সন্তানের)। এখন এমন একটা ঘটনার কথা জানাবো, যাতে তার চেয়েও বড় লজ্জার কাহিনি আজও রয়ে গিয়েছে ক্রিকেট ইতিহাসে।
গোড়াতেই বলে রাখি, ঘটনাটা টেস্ট নয়, প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটের। কিন্তু উল্লেখ করছি কারণ সেই ম্যাচে খেলেছিলেন ‘ক্রিকেটের জনক’ বিখ্যাত ডব্লিউ জি গ্রেস। ১৮৭২ সালের আজকের তারিখে (১৪ মে) খোদ লর্ডসে সারে কাউন্টির বিরুদ্ধে গ্রেস-সমৃদ্ধ এমসিসি প্রথমে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ১৮ ওভারে (তখন ৪ বলের ওভার ছিল) ১৬ রানে অলআউট হয়ে যায়। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ রান আর্থার বেচারের ৮। অন্তত ৮ জন ব্যাটার ‘শূন্য’ কাটাতে পারেননি। স্বয়ং গ্রেস সাহেবের ব্যাটও ছিল ‘রানহীন’। কিন্তু সেই ইনিংসের শুরুটা হয়েছিল গোটা মাঠকে চমকে দিয়ে। শুধু ‘আসা-যাওয়া’-র এমন জঘন্য নজির খুব কমই ঘটেছে।ওপেনার গ্রেস ‘০’ রানে সাজঘরে ফেরার পর থেকেই যেন লাইন দিয়ে ঘরমুখী পথ ধরেন সবাই!স্কোরবোর্ডে কোনও রান ওঠার আগেই এক-দুই-তিন করে সাত-সাতজন ব্যাটার আউট হয়ে যাওয়ায় একসময় এমসিসি-র রান দাঁড়ায় ০ রানে ৭ উইকেট! জেমস সাদারটন ৯ ওভারে ৬ টি মেডেনসহ ৪ উইকেট পান ৫ রানে। আর তাঁর বোলিং পার্টনার উইলিয়াম মার্টেন সম-সংখ্যক ওভারে ৫ মেডেনসহ ৬ উইকেট তোলেন মাত্র ১১ রানে। খামখেয়ালি পিচে সারেও অবশ্য প্রথম ইনিংস শেষ করে মাত্র ৪৯ রানে। সর্বোচ্চ ১২ রান আসে টেড পুলের ব্যাট থেকে। বলার কথা এই যে, দলের কেউ কিন্তু ‘শূন্য’ করেননি!এমসিসি দ্বিতীয় দফায় কোনওক্রমে ৭১ রানে পৌঁছায়। গ্রেস ১১ এবং জন স্মিথ ১৯ দলের পক্ষে ছিলেন সেরা রান সংগ্রাহক। দ্বিতীয় ইনিংসে আরও মারাত্মক ত্রাস সৃষ্টি করে সাদারটন নেন ৩৮ রানে ৭ উইকেট (দু’ইনিংসে ১১ উইকেট)। ৩৯ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে লো-স্কোরিং ম্যাচে শেষ পর্যন্ত সারে জিতে যায় ৫ উইকেটে। তবে এমসিসি-কে এমন লজ্জায় আগেও পড়তে হয়েছে। এবং সেটাও খোদ লর্ডসে আর ওই একই কাউন্টি সারের বিরুদ্ধেই! ১৮৩৯ সালে সারের বিপক্ষে এমসিসি অলআউট হয়েছিল ১৫ রানে। সেই ম্যাচে সারে জিতেছিল ইনিংস ও ৮৭ রানে ।
তবে ‘শূন্য’ করার ক্ষেত্রে সবাইকে ছাপিয়ে গিয়েছিল চিলড্রেন্স ওয়েলফেয়ার সেন্টার। মুম্বইতে হ্যারিস শিল্ডের অনূর্ধ-১৬-র এক ম্যাচে স্বামী বিবেকানন্দ স্কুলের বিরুদ্ধে খেলতে নেমে গোটা সিডব্লিউসি টিমটাই মুড়িয়ে যায় ‘৭’ রানে। আশ্চর্য এটাই, দলের কোনও ক্রিকেটারই ‘শূন্য’ কাটাতে পারেনি! এই সাত রানের মধ্যে ওয়াইড-৬ আর বাই-১ রান ছিল। এর আগে বিবেকানন্দ স্কুল ইনিংস ডিক্লেয়ার করে ৭৬১/৪। মিত মায়েকার ১৩৮ বলে সাতটি ছক্কা, আর ৫৬ টি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে করে অপরাজিত ৩৩৮। সম্ভবত, এই বিশাল রানের চাপে নার্ভাস হয়েই চিলড্রেন্স ওয়েলফেয়ার সেন্টার স্কুল দুমড়ে যায় ‘০’ রানে।