পাকিস্তানকে হারিয়ে বিরাট আশার সঞ্চার হয়েছিল। শুরু হয়েছিল স্বপ্ন দেখা। কিন্তু শেষপর্যন্ত এভাবে মুখ থুবড়ে পড়বে ভারত, কে ভেবেছিল! বুধবার রাতে শারজায় রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে আফগানিস্তানকে হারিয়ে ফাইনালে গেল পাকিস্তান। সামান্য আশায় থাকা ভারতীয় শিবিরে ধুপ করে নেমে এল ব্যর্থতার নিকষ অন্ধকার। সুপার ফোরে পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কার কাছে হারই বিপর্যয় ডেকে এনেছে। তবুও চিন্তিত নন টিম ইন্ডিয়ার অধিনায়ক রোহিত শর্মা। তিনি বলছেন, ‘দুটো ম্যাচ হেরেছি মানে বিরাট সমস্যা হয়ে গিয়েছে বা চিন্তায় পড়ে গিয়েছি, এমনটা মোটেই নয়। এরকম হতেই পারে। তাছাড়া এই হার নিয়ে আমাদের ড্রেসিংরুমে কোনও নেতিবাচক আলোচনা হয় না। গত বিশ্বকাপের পর আমরা ভাল খেলেছি, অনেক ম্যাচ জিতেছি। আগামী টি২০ বিশ্বকাপের আগে আমাদের সামনে আরও দুটো সিরিজ আছে। সেখানেও পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলবে। আমাদের দল ৯৫ শতাংশ তৈরি। যতক্ষণ না বিশ্বকাপের দল ঘোষণা হচ্ছে, কয়েকজনকে দেখে নিতেই হবে।’
রোহিত হয়তো অধিনায়কের চেয়ারে বসে ঠিকই বলছেন। কিন্তু টি২০ বিশ্বকাপের আগে প্রস্তুতির সবথেকে বড় মঞ্চে এই ব্যর্থতার কিছু নেতিবাচক দিক অবশ্যই আছে। ভারতীয় দলে কে ছিলেন, কে নেই, এটা কেউ দেখবে না। বরং সবাই মনে রাখবে এই ভারতীয় দলকে পাকিস্তান তো বটেই, শ্রীলঙ্কাও হারাতে পারে। কোনও সন্দেহ নেই, এশিয়া কাপে ভারতকে হারিয়ে মনোবল অনেকটাই বাড়িয়ে নিল এই দুই দল।
টি২০ বিশ্বকাপে ভারতের প্রথম একাদশ কী হবে, সেই ছবিটা এখনও স্পষ্ট নয়। কিন্তু এশিয়া কাপে ব্যর্থতার ময়নাতদন্তে বেরিয়ে আসছে কয়েকটা দিক। রোটেশনের মতো সবাইকে দেখতে গিয়ে মূল সমস্যা হয়েছে দল নির্বাচনে। প্রথম পাকিস্তান ম্যাচে ঋষভ পন্থকে বসিয়ে খেলানো হল দীনেশ কার্তিককে। উইকেটের পেছনে একাধিক ক্যাচ ধরলেন। কিন্তু সেদিন ব্যাট হাতে বিরাট কিছু করার সুযোগ ছিল না তাঁর। পরবর্তী সময়ে কার্তিককে বসিয়ে ফিরিয়ে আনা হল ঋষভকে। ব্যাটে আহামরি কিছুই করতে পারেননি। কার্তিককে না খেলিয়ে কেন মিডল অর্ডারে দীপক হুডা? তাঁকে দিয়ে বল করানো হল না, ব্যাট হাতে দুই ম্যাচে চরম ব্যর্থ। তাছাড়া ফিনিশার হিসেবে খেলানোর জন্যই তো কার্তিককে নেওয়া হয়েছিল দলে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যাটে–বলে ম্যাচ জেতানো হার্দিক পান্ডিয়াকে বসিয়ে দেওয়া হল পরের ম্যাচেই। রোটেশন? তাঁর ছন্দ কি বিঘ্নিত হল না? অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন কেন এশিয়া কাপের দলে রাখা হয়নি মহম্মদ সামিকে। ছিলেন না যশপ্রীত বুমরাও। তাহলে কেন উমরান মালিকের মতো বোলারকে বাইরে রাখা হল? কেন নিয়ে যাওয়া হল না দীপক চাহারকে? ভুবনেশ্বর কুমারের ধার কমেছে, পরিষ্কার। ডেথ ওভারে তাঁর ঝাঁঝ উধাও। বিশ্বকাপে অবশ্য বুমরা এবং হর্ষাল প্যাটেল থাকবেন। ফিরবেন সামি, থাকতে পারেন চাহারও। তাই কিছুটা আশ্বস্ত হওয়া যেতে পারে। কিন্তু বড় চিন্তা ব্যাটিং। এশিয়া কাপে টপ অর্ডারে একমাত্র ভরসা জুগিয়েছে রোহিতের ব্যাট। আশা জাগিয়েও বিরাটের ব্যাটে ধারাবাহিকতার অভাব। শ্রীলঙ্কার মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ভেতরে ঢুকে আসা বলে যেভাবে বোল্ড হলেন, তাতেই স্পষ্ট এখনও পুরো ছন্দে ফেরেননি বিরাট। চিন্তা লোকেশ রাহুলের ফর্ম নিয়েও। বিশ্বকাপে যদি টপ-অর্ডার ভাল রান করতে না পারে, বিপদ অবশ্যম্ভাবী।
সামনে ঘরের মাঠে দুটো সিরিজ। অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে। যা পরীক্ষা করার করে নিতে হবে ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টকে। রোহিতের হাতে সময় কম। তবু আমাদের আশা থাকবে প্রতিটা বিভাগে সেরা অস্ত্র নিয়েই টি২০ বিশ্বকাপে যাবে ভারত।