সুইচ অফ-সুইচ অন খুব জরুরি

“বিট তো হবিই। পরের বলটা কিন্তু সেটা মাথায় রাখলে চলবেনা।”

আব্দুল মোনায়েম

ভবানীপুর নেটে তখন নেট-প্র্যাক্টিস মগ্ন প্রয়াস রায়বর্মন। বল হাতে ছুটে আসছেন নতুন অলরাউন্ডার অর্ক সরকার, আজহার। ঘূর্ণির অনুশীলন করছেন আমির গনি, অনুপ যাদব। এমন অবস্থায় গনির বেশ কিছু বল প্রয়াস মিস করতেই তা কিপার শুভ্রজিৎ দত্তর হাতে গেলো এবং পেসাররাও বেশ কিছুবার অফস্ট্যাম্পের বাইরে ফেলে বিভ্রান্ত করলেন তাকে। নেট শেষ হতেই বেরিয়ে এলেন প্রয়াস এবং প্রথমাফিক কোচের কাছে পরামর্শ চাওয়ার জন্য যখন এসে দাঁড়ালেন তখনই তিনি বললেন এই কথাটি। কিছুক্ষন পরেই আবার পাশের চেয়ার থেকে আমি জিজ্ঞেস করি কথাটির কারণ। তখন বললেন “দেখো একটা বলে বিট হলে তুমি যদি সেই কথাটা মাথায় রাখো তবে কিন্তু তুমি পরের বলেই আবার আউট হয়ে যেতে পারো। ক্রিকেট এক বলের খেলা। যদি পরের বলে আউট হও কিছু বলার নেই তবে আগের বলটা যেন মাথায় না থাকে।” কথাটির সার্বিক অর্থ তবে দাঁড়ালো এই যে আগে তোমার সাথে হয়ে যাওয়া কোনোরকম পরাজয় যেন মাথায় না থাকে তবে কিন্তু পরবর্তীতেও পরিণতি সমান হওয়ার সম্ভাবনা খুব ভালো মাত্রায় আছে। এক কথায় বললে– সুইচ অফ- সুইচ অন করা জরুরি।

কচিকাঁচাদের সাথে আব্দুল মোনায়েম

“সিনিয়র অনেক হলো। এবার একটু প্লেয়ার তুলবো বুঝলি।” ভবানীপুর ক্লাবের অবিচ্ছেদ্য অংশ দেবাদা তখন মাখন দিয়ে দুটো টোস্ট এবং আদা-চা দিয়ে গেছেন নেটের পাশের টেবিলে। ঠিক তখনই বললেন যে এখন প্লেয়ার তোলার দিকে মন দিতে চান তিনি। জিজ্ঞেস করলাম এতো খেলোয়াড়কে ক্লাব স্তরের বৈতরণী পার করিয়ে খেলিয়ে দিয়েছেন বাংলার দলে তার নতুন করে প্লেয়ার তোলার কি প্রয়োজন? তখন ভুল ধরিয়ে দিলেন এবং বললেন যে জুনিয়র স্তরে বিভিন্ন জেলা এবং অন্যান্য জায়গা থেকে অনেক খেলোয়াড় তুলতে চান এবং দেখালেন ক্লাবের নেটে প্র্যাক্টিস করতে থাকা এক তেরো বছরের ছেলের দিকে যার নাম সৌরভ পোদ্দার। আরো বললেন যে ও সেইরকম একজন ‘ফাইন্ড’ এবং সেই ছেলেটা আমির গনিকে দুবার বিভ্রান্ত করলো বাউন্স দিয়ে।

বীরভূমের সিউড়ি থেকে খুব কম বয়সে চলে আসেন কলকাতায় এবং চেয়েছিলেন ক্রিকেটের মূলস্রোতে থেকে হবেন বাংলা দলের একজন অন্যতম সৈনিক এবং যাবেন অনেক বড়ো জায়গায়। ক্রিকেট কেরিয়ারে মোট ২০ বছর প্রথম ডিভিশনে খেলেছেন যেখানে সাত বছর ইস্টবেঙ্গল এবং আট বছর মোহনবাগান দলে। একদা বোলিং ওপেন করেছেন ইংল্যান্ড গিয়ে ক্লাব ক্রিকেটে খেলেছিলেন কিছু মরসুম এবং একবার তুলেছিলেন প্রাক্তন ইংরেজ অধিনায়ক মাইকেল আর্থারটন এর উইকেট। এতো কিছুর পরেও খেলা হয়নি বাংলা দলে। কিন্তু ওই যে সুইচ অফ-সুইচ অন করা খুব জরুরি- এই কথাটাই যেন সাহায্য করেছে তাকে এগিয়ে যেতে। এরপরে তিনি হয়েছেন কোচ এবং কিছু বছর মোহনবাগান এবং অন্য বড়ো ক্লাবে কোচিং করানোর পরে তিনি সম্পূর্ণ দায়িত্ব পান ভবানীপুর ক্লাবের এবং সেই থেকে আজ প্রায় এক যুগ। এর মধ্যে ক্লাবটি একটি মধ্যবিত্ত ক্লাব থেকে আজ মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে সমানে টক্কর দিয়ে চলছে এবং খেলছে প্রথম ডিভিশনের নকআউট এবং জিতছেও। গতবার ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়ে জে. সি মুখার্জী ট্রফিতে অগ্নিভ পানের লড়াই দেখে অনুমান করা কঠিন ছিলোনা যে ঠিক কতটা মনের জোর সঞ্চার করতে পেরেছেন কোচ। একসময় খেলোয়াড় হিসেবে তিনি মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলকে জিততে সাহায্য করেছেন একাধিক ট্রফি আজ সেই ধারা বয়ে চলেছে তার কোচিং জীবনেও। ভবানীপুর দুবার তার কোচিংয়ে হয়েছে লিগ চ্যাম্পিয়ন। এছাড়াও এ. এন. ঘোষ ট্রফি থেকে শুরু করে আর জে. সি মুখার্জী ট্রফি অবধি কোনো কিছুই নেই অধরা।

আসন্ন ফেব্রুয়ারীতেই শুরু হতে চলেছে ক্লাব ক্রিকেটের লাল বলের প্রতিযোগিতা। আশা করি সেখানেও ভালো প্রদর্শন করবে তার দল এবং প্রতিবারের মতো জিতে যাবেন তিনিও।

জন্মদিনের শুভেচ্ছাসহ নতুন মরশুমের জন্য শুভকামনা আব্দুল মোনায়েম স্যারকে।