চেন্নাই সুপার কিংসের বিরুদ্ধে মরশুমে নিজের প্রথম ম্যাচে করেছিলেন ১৮ বলে ১১। মুকেশ চৌধুরী-মাহেশ তিক্ষানার সামনে সেদিন হতদরিদ্র লাগছিল তাঁর ব্যাটিং।
কলকাতা নাইট রাইডার্স ম্যাচে উমেশ যাদবকে তিনবার বাউন্ডারি লাইন পার করানোর পরেও তাঁর ব্যাটিংয়ে আসেনি চেনা ছন্দ। মনে হয়েছিলো তাঁর কার্যক্ষমতা হয়ে গিয়েছে ‘মরচে ধরা।’
আজ ১৯৬ রানের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে যখন গুজরাট টাইটান্স ব্যাট করতে নামছে তখন নিশ্চয়ই বাঙালিরা খুব আশা নিয়ে বসেননি ‘মরচে পড়া’ বাঙালিকে নিয়ে। হয়তো তৈরী ছিলো ‘ট্রোল পোস্ট’। প্রথম তিনটি বল ভুবনেশ্বর কুমারকে অফসাইডে খেলতে গিয়ে বেশ ব্যর্থ হয়ে চতুর্থ বল তিনি লেগ সাইডে ঠেলে নিলেন একটি রান। ব্যাস এটুকুই ছিলো ম্যাচ প্র্যাক্টিস না থাকা ঋদ্ধিমান সাহার হতশ্রী অবস্থার চিত্ররূপ। এরপর মার্কো জানসেনকে পুল করে চার এবং ফ্লিক করে ছক্কা মেরে শিলিগুড়ির বাঙালি যেন তাদের আনন্দের ফ্লাইট টেক-অফের আগে সিটবেল্ট বাঁধার বার্তা দিলেন।
আজকের ইনিংস যদি খুঁটিয়ে দেখেন তবে দেখবেন উইকেটের শুধুমাত্র থার্ড ম্যান থেকে কভার অঞ্চল বাদ দিলে সব জায়গায় সাবলীল শট খেলেছেন সাহা। এই ইনিংসে যেমন ওয়াশিংটন সুন্দরকে এগিয়ে এসে মিড-উইকেট দিয়ে উড়িয়ে দেওয়া ছিলো তেমনই তাঁর মিডল স্ট্যাম্পে টার্ন করে আসা অফস্পিনকে রুম তৈরী করে মিড-অফ বাউন্ডারিতে পাঠানোও ছিলো। মার্কো ইয়ানসেন ইনিংসের দ্বাদশ ওভারে অফ-স্টাম্পের প্রভূত বাইরে বল করে যেমন হজম করলেন সোজা শটে চার, তেমনই পরের বলটি লেগ-স্টাম্পে করে লফ্টেড অন-ড্রাইভে পড়লেন বাউন্ডারিতে। থাঙ্গারাসু নটরাজন রাউন্ড-দ্য- উইকেট এসে লেগ-স্টাম্পে বল করায় সেই বল গ্লান্সে জমা পড়লো ফাইন-লেগ বাউন্ডারিতে এবং পরের বলেই পুল করে ডিপ স্কোয়ার-লেগে। একবার ঋদ্ধি ইয়ানসেনকে তুলে দিলেন মিড-অফ দিয়েও।
প্রসঙ্গত এই চতুর্দিকে বাউন্ডারি মারার পাশাপাশি আজ তাঁর খেলার একটি উল্লেখ্য দিক ছিলো স্ট্রাইক রোটেশন। কোনোরকম হঠকারিতা না দেখিয়ে বাউন্ডারি মারার পরে সিঙ্গল নিয়ে চলে যাচ্ছিলেন ক্রিজের অপর প্রান্তে এবং সেই যাওয়ার হার ছিলো অন্য দুটি ম্যাচের তুলনায় বেশ বেশি।
দীর্ঘদিন ম্যাচ প্র্যাক্টিস না থাকা এবং দীর্ঘ টানাপোড়েনের মধ্যে থেকে বেরিয়ে এসে আজকের ৬৮ তাঁর প্রায় ফুরিয়ে আসা ক্রিকেট জীবনে ছিলো একটা দমকা হাওয়ার মতো। আজ ঋদ্ধিমান সাহা প্রমাণ করলেন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের তাঁর পারদর্শিতা বরাবরই ছিলো।
মনে পড়ে নেতাজি সুভাষ ইনস্টিটিউটের ক্রিকেটার এবং ঋদ্ধিমানের দীর্ঘদিনের বন্ধু অম্বরীশ মিত্র কালীঘাট ক্লাবে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে ছবি তোলেন এবং কারণ হিসেবে বলেছিলেন “গুজরাট গিয়ে যখন ফাটিয়ে দিবি তখন পোস্ট করতে হবে তো।” আজ সত্যিই সেই ছবি পোস্টের দিন।