বাংলার মহিলা ক্রিকেটে যে বৈপ্লবিক পদক্ষেপ শুরু হয়েছিলো তার কথা আগেই বলেছি একটি রিপোর্টে। আজ ছিলো সেই মহাযজ্ঞের শেষ দিন, অর্থাৎ বাইজুস্ বেঙ্গল উইমেন্স টিটোয়েন্টি ব্লাস্টের ফাইনাল।
বাংলার মহিলা টিটোয়েন্টি ক্রিকেটে একটি প্রচলিত কথা আছে এবং তা হলো এখানে খেলা বড়ো বেশিই বোলারকেন্দ্রিক। এই টুর্নামেন্টের সামগ্রিক চিত্রেও খুব একটা বদল নেই শুধুমাত্র একটি ম্যাচ বাদে। এখানে প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই ব্যাটিং দলের রানরেট থেকেছে ৬ এর কম এবং উইকেট হারানোর গতিও ছিলো পাল্লা দিয়ে। প্রতিটি ম্যাচেই প্রায় দেখা গেছে যে প্রথম ব্যাটিং করা দল ১০০ তুলতে হিমশিম খেয়েছে।
কিন্তু সেমিফাইনালের ইস্টবেঙ্গল এবং রাজস্থান ক্লাবের ম্যাচ দেখে মনে হচ্ছিলো হয়তো ফাইনাল হবে ধুন্ধুমার এবং হাই-স্কোরিং। কিন্তু দর্শকদের হতাশ করে একই চিত্রনাট্য ফিরে এলো ফাইনালে। কল্যাণীর বেঙ্গল ক্রিকেট একাডেমির মাঠে আগের দিন ১৭৬ তাড়া করে জেতা রাজস্থান ক্লাব মুখ থুবড়ে পড়লো। রাজস্থান দলের অধিনায়িকা ছিলেন ধারা গুজ্জার। তিনি প্রায় একার হাতে বিগত সেমিফাইনালে হারিয়েছিলেন ইস্টবেঙ্গলকে।
ফাইনালে আগে ব্যাট করতে নেমে মহামেডান বোলার বিদিশা দে এবং অনুষ্কা পালের দাপটে রাজস্থানের তিন টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান সংস্থিতা বিশ্বাস (৮), সাইকা ঈশাক (০) এবং ধারা গুজ্জার (১) ফিরে যান দলগত ১৭ রানের মধ্যে। এবং এর পরের ওভারেই রানের খাতা না খুলে ফেরেন প্রীতি মন্ডল। রূপা দত্ত ৫৫ বলে ৪২ রান না করলে হয়তো ম্যাচ আরো একপেশে হতে পারতো। এছাড়া রাজস্থান ক্লাবের হয়ে দুই অংকের রান করেন একমাত্র সুমনা মন্ডল (১২)। মহামেডান ক্লাবের হয়ে তিতাস সাধু এবং পায়েল ভাকারিয়া ২ উইকেট নেন। রাজস্থানের ইনিংস ৯৪ রানে সব ক’টি উইকেট হারিয়ে শেষ হয়।
ব্যাট করতে নেমে খুব একটা চাপে পড়তে কখনোই দেখা যায়নি মহামেডান ক্লাবের ব্যাটারদের। শুরুতে অধিনায়িকা মিতা পালকে (৭) হারালেও উইকেটরক্ষক প্রিয়াঙ্কা বালার দাপট রাজস্থান ক্লাবকে কখনোই সফলতার ডানা মেলতে দেয়নি। প্রিয়াঙ্কা শেষ অবধি ৪৩ বলে ১২টি চার মেরে ৫৯ রান করেন এবং তাকে যোগ্য সঙ্গত দেন ওপেনার শ্রাবণী পাল। শ্রাবণী ২৫ রান করে যখন রান আউট হয়ে ফিরছেন তখন তার সঙ্গে প্রিয়াঙ্কা বালার পার্টনারশীপের স্কোরবোর্ড বলছে ১০ ওভারে ৭৫! এবং এখানেই ট্রফির দিক নির্ণয় হয়ে গেছিলো। এরপরে তিতাস সাধু গোল্ডেন ডাকে ফিরলেও খুব একটা সমস্যা হয়নি মহামেডান দলের। ৯৫ রানের লক্ষ্যমাত্রা তিন উইকেট হারিয়ে ৩৯ বল বাকি থাকতেই তুলে নেয় তারা। রাজস্থানের হয়ে ধারা গুজ্জর দুটি উইকেট নেন। এইভাবেই সমাপ্তি ঘটলো প্রথম উইমেন্স টিটোয়েন্টি ব্লাস্টের। এবং এই টুর্নামেন্টের শুরু এবং সফলতার জন্য অবশ্যই সাধুবাদ প্রাপ্য ক্রিকেট এসোসিয়েশন অফ বেঙ্গলের। আশা রাখি এরকম টুর্নামেন্ট প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হবে এবং পরিকাঠামো টুর্নামেন্টের আয়োজকদের অভিজ্ঞতার সাথে বৃদ্ধি পাবে এবং বাংলার মহিলা ক্রিকেটে পরিবর্তন হবে এরই সঙ্গে সমানুপাতিক।