রোহিত শর্মার বয়স এখন পঁয়ত্রিশ। জন্ম ১৯৮৭ সালের ৩০ এপ্রিল। কত দিনই বা দেশের অধিনায়কত্ব করবেন?
বিরাট কোহলির অধিনায়কত্ব অধ্যায় শেষ। ব্যাটার হিসাবে ছন্দে ফিরুন, সবার আশা। নেতৃত্বে? ভবিষ্যৎ নিশ্চিতভাবে বলা না গেলেও, মনে হয় না, আর ফিরতে পারবেন ভারতের নেতা হয়ে।
তা হলে, এক-দুবছর পর দেশের হয়ে টেস্ট এবং একদিনের ম্যাচে টস করতে যাবেন কে?
এবারের আইপিএল-এ কয়েকজন বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজির নেতৃত্বে যাঁরা আগামী বেশ কিছু বছর ভারতের হয়ে আন্তর্জাতিক আসরে দাপটে খেলতে পারেন।
প্রথমে দেখে নেওয়া যাক তাঁদের বয়স। গুজরাতের নেতৃত্বে হার্দিক পাণ্ড্য, বয়স ২৮। তিরিশের লোকেশ রাহুলের হাতে লখনউ সুপার জায়েন্টস। কলকাতার হয়ে টস করছেন শ্রেয়স আইয়ার, ২৭। ময়াঙ্ক আগরওয়ালের ৩১ হয়ে গিয়েছে, পাঞ্জাবের ক্যাপ্টেন এখন। সঞ্জু স্যামসনও সবে ২৭, রাজস্থানের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ঋষভ পন্থের বয়স সবচেয়ে কম, মাত্র ২৪, দিল্লির দায়িত্বে।
গুজরাত প্লে-অফে পৌঁছেছে, লখনউও পৌঁছবে আর একটি ম্যাচ জিতলে। রাজস্থানও এগিয়ে রয়েছে। দিল্লি-পাঞ্জাব-কলকাতা দৌড়ে আছে, হয়ত কোনও একটি দল পৌঁছতেও পারে প্লে-অফে।
যারা ছিটকে গিয়েছে তাদের দুই অধিনায়ক যথাক্রমে রোহিত শর্মা এবং মহেন্দ্র সিং ধোনি। রবীন্দ্র জাডেজা চেন্নাই-এর দায়িত্বপালনেই ব্যর্থ, বয়সও ৩৩। দল ভাল খেলেনি, দায়িত্ব ছেড়েছেন। ধোনির সঙ্গে অ-বনিবনার কথা উঠে এসেছে সংবাদমাধ্যমে। আরও একটি দল যাদের আশা ক্ষীণ, সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। তাদের অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দক্ষ নেতা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত। আইপিএল-এ একটি মরসুমের পারফরম্যান্স তাঁর আন্তর্জাতিক পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলবে না। বাকি যে দল প্লে-অফের দৌড়ে আছে সেই বেঙ্গালুরুর অধিনায়ক ফাফ দুপ্লেসিও সেরা সময় পেছনে ফেলে এসেছেন। কিন্তু, বিদেশিরা নন, আমাদের আলোচ্য তরুণ ভারতীয়রা।
টেস্ট দলে জায়গা নিয়ে ভাবনা নেই, বয়স কম (২৮) হলেও যশপ্রীত বুমরাকে অধিনায়ক হিসাবে কোনওভাবেই আলোচনায় আনা হয় না বলে তাঁকে বাদ রাখা যেতেই পারে। তালিকায় তাই লোকেশ-শ্রেয়স-ঋষভ-হার্দিক-ময়াঙ্ক-সঞ্জু। ভাবী ভারত-অধিনায়ক হিসাবে এই ছ’জনকেই ভাবা যেতে পারে, অগ্রাধিকার তালিকায় অবশ্যই প্রথম তিনজন। টেস্টে লোকেশ এবং শ্রেয়স এখনও প্রথম এগারোয় জায়গা পাকা করে ফেলতে পারেননি। হার্দিকের ক্ষেত্রেও একই কথা। অলরাউন্ডার যিনি বলই করেন না, এমনকি নির্বাচকরা সাধাসাধি করলেও এড়িয়ে যান। সঞ্জুর জায়গা, বিশেষত দুটি সীমিত ওভারের ফরম্যাটে, আলোচনার স্তরেই থাকে বেশিরভাগ, কখনও কখনও দলে জায়গা পান।
এই মুহূর্তে জাতীয় দলে জায়গা নিশ্চিত, বয়স কম, সামনে সম্ভাবনার সাগর ধরলে তাই সব দিক দিয়েই এগিয়ে থাকছেন পন্থ। হ্যাঁ, ভাবী ভারত অধিনায়ক হিসাবেই!
অবশ্যই রাহুল বা শ্রেয়স নিজেদের আগামী দু-বছরের পারফরম্যান্স দিয়ে এই দৌড়ে পেছনে ফেলতে পারেন পন্থকে। ব্যাটার হিসাবে দুজনেই নিজেদের জাত চিনিয়েছেন। অধিনায়ক হিসাবেও ছাপ রাখতে চাইছেন, তবে, এত তাড়াতাড়ি সবার ক্ষেত্রেই যে, নিশ্চিত কিছু বলা কঠিন। বরঞ্চ, ঋষভের ভবিষ্যৎ সেই তুলনায় নিষ্কন্টক তো বটেই, সোনায় মোড়া! তাঁর উত্থানের লেখচিত্র দেখুন। সোনার চামচে মুখে জন্ম বললেও কিছুই বলা হবে না, বিজ্ঞাপনী স্বপ্নে যতই গুরদোয়ারায় রাত কাটানো থাকুক। এখন তিনি আবার ‘অবিসংবাদিত’ এক নম্বর! সুতরাং, প্রবীণ আমরের মতো প্রবীণকে হুকুম-হুঙ্কার দিয়ে শাস্তি পাওয়াতেও পারছেন, অনায়াসে!
এখন রনজি ট্রফিতে তাঁরাই খেলেন যাঁরা জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার আলোচনায় কখনও সখনও থাকেন। আর রনজিতে ভাল খেললে আইপিএল-এর নীলামে নাম উঠতে পারে, এই আশায়। ভাবুন, চারদিনের ক্রিকেটে ভাল খেলে চার ওভারের ক্রিকেটে সুযোগ পাচ্ছেন বোলার! সারা বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলে জাতীয় তারকারা রনজি খেলতে পারেন না। সামান্য দু-একটা ম্যাচ খেলার সুযোগ থাকলেও বোর্ড তখন বিশ্রামে পাঠিয়ে দেয় শামি-সাহাদের। চারদিনের রনজি ট্রফিতে রাজ্যের নেতৃত্ব দিয়ে তৈরি হবেন পাঁচদিনের ক্রিকেটের নেতৃত্ব দিতে — মাফ করবেন, ভারতীয় ক্রিকেট এসব সাবেকি ভাবনায় একটুও প্রভাবিত হয় না।
ভারতে যে এখন পাঁচদিনের ক্রিকেটের ভাবী ক্যাপ্টেন বেছে নেওয়ার পরীক্ষা নেয় কুড়ি ওভারের ক্রিকেট!