এখন আর কোনও বিতর্ক নয়। এখন সময় উদ্যাপনের। এখন সময় তাঁর পাশে থাকার। আসমুদ্রহিমাচল চাইছে নজির তৈরির টেস্টে ঝলসে উঠুক বিরাট কোহলির ব্যাট। আসুন আমরাও প্রার্থনা করি।
২০১১–র ২০ জুন। কিংস্টনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে টেস্ট অভিষেক হয়েছিল বিরাটের। প্রায় ১১ বছর পরে শুক্রবার শততম টেস্টে নামতে চলেছেন তিনি। এর আগে ভারতের হয়ে ১০০ বা তার বেশি টেস্ট খেলেছেন এগারোজন। কালানুক্রমিকভাবে তাঁরা হলেন সুনীল গাভাসকার, দিলীপ বেঙ্গসরকার, কপিলদেব, শচীন তেন্ডুলকার, অনিল কুম্বলে, রাহুল দ্রাবিড়, সৌরভ গাঙ্গুলি, ভিভিএস লক্ষ্মণ, বীরেন্দ্র শেহবাগ, হরভজন সিং, ইশান্ত শর্মা। সেই তালিকায় প্রবেশ করতে চলেছেন বিরাট। এমন নজির তৈরির আগেই শুভেচ্ছার বন্যায় ভেসেছেন সদ্য-প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক। সেই তালিকায় কে নেই? গাভাসকার থেকে শচীন, সৌরভ থেকে দ্রাবিড়, লক্ষ্মণ থেকে শেহবাগ। শততম টেস্টে বিরাটের থেকে শতরান চেয়েছেন সানি।
তবে সবথেকে নজরে পড়েছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি সৌরভের ভূমিকা। তাঁর সঙ্গে বিরাটকে জড়িয়ে সম্প্রতি নানা বিতর্কে বারবার সরগরম হয়েছে ভারতীয় ক্রিকেট। একদিনের ক্রিকেটে বিরাটের নেতৃত্ব যাওয়া নিয়ে প্রাক্তন ক্রিকেটারদের একাংশ সমালোচনায় বিঁধেছিলেন সৌরভকে। শোনা গিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যাওয়ার আগে বিরাটের বিস্ফোরক সাংবাদিক সম্মেলন নিয়ে বোর্ড সভাপতি নাকি বিরক্ত হয়েছিলেন। কিন্তু বিরাটের শততম টেস্টের আগে ব্যক্তিগতভাবে সৌরভের এবং বোর্ডের ভূমিকা অত্যন্ত ইতিবাচক। বিরাট–বন্দনায় মেতেছেন সৌরভ। শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি সৌরভ বলেছেন, ‘বিরাটের হাতে এখনও অনেক সময় আছে আরও নজির গড়ার। একশো টেস্ট খেলা সহজ নয়। বড় ক্রিকেটার না হলে একশো টেস্ট খেলা যায় না।’ আর বোর্ডের ভূমিকা? কয়েকদিন আগেই পাঞ্জাব ক্রিকেট সংস্থা জানিয়েছিল কোভিড পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে মোহালি টেস্টে থাকবে না কোনও দর্শক। শোনার পর গাভাসকার আক্ষেপ প্রকাশ করে জানিয়েছিলেন, শততম টেস্ট খেলবেন বিরাট অথচ মাঠে থাকবে না দর্শক, এটা খুবই হতাশাজনক। এই আবহেই ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে বোর্ড। সিদ্ধান্ত বদল করেছে তারা। দর্শকদের, বিশেষ করে বিরাট অনুরাগীদের মুখে হাসি ফুটিয়ে বোর্ডের নির্দেশে পাঞ্জাব ক্রিকেট সংস্থা জানিয়েছে মোহালিতে থাকবে পঞ্চাশ শতাংশ দর্শক। বৃহস্পতিবার বোর্ডের ওয়েবসাইটে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিরাটও বুঝিয়েছেন তিনি কতটা খুশি। বলেছেন, ‘কালকের সকালটা আমার কাছে খুবই স্পেশ্যাল হতে চলেছে।’
বিরাট–রোহিতের ‘সম্পর্ক’ নিয়ে কম আলোচনা হয়নি। কিন্তু শততম টেস্টে মাঠে নামার আগে সেই রোহিতই প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন সতীর্থকে। টেস্ট দল হিসেবে ভারতের যে উত্তরণ, তার পেছনে সবথেকে বড় কৃতিত্ব বিরাটের, বলেছেন রোহিত। পরিসংখ্যানও বলছে, ভারতের সেরা টেস্ট অধিনায়কের নাম বিরাট কোহলি। ৬৮ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়ে জিতেছেন ৪০টি। বিরাট যখন টেস্ট অধিনায়কত্বের দায়িত্ব নিয়েছিলেন, আইসিসি র্যাঙ্কিংয়ে ভারত ছিল সাত নম্বরে। তারপর ক্রমশ শক্তিশালী হয়েছে দল। টানা পাঁচ বছর টেস্টে এক নম্বর ছিল বিরাটের ভারত। নেতা হিসেবে অবশ্যই কৃতিত্ব প্রাপ্য তাঁর। টেস্টে প্রথমবারের জন্য নেতৃত্ব দিতে নামার আগে তাই বিরাটের প্রশংসা করতে এতটুকু কার্পণ্য করেননি রোহিতও। নিশ্চিতভাবেই বলা যায় বিরাটের সাজানো বাগানে নতুন মালির নাম রোহিত শর্মা।
‘এই ফরম্যাটে সবসময় হৃদয় দিয়ে খেলেছি’, বলেছেন বিরাট। মোহালি টেস্টেও হৃদয় উজাড় করে খেলুন বিরাট। সব সমালোচনায় ইতি পড়ুক বিরাটোচিত ইনিংসে।