মাননীয় বিরাট কোহলি, কী ঝামেলায় ফেলেছেন বলুন তো! আপনাকে নিয়ে গোটা ভারতীয় ক্রিকেট মহল এইমুহূর্তে তোলপাড় এবং কার্যত দ্বিধাবিভক্ত। আপনি তো আবার খবরের কাগজ পড়েন না, সোশ্যাল মিডিয়ায় কে কী বলল, লিখল, তা নিয়ে আপনার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই। হ্যাঁ, সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনি ছবি পোস্ট করলে, কিছু লিখলে আমরা অবশ্য হামলে পড়ি। কারণটা আপনি ‘বিরাট কোহলি’ বলেই। একশোর বেশি টেস্টে ৮ হাজারের বেশি রান, আড়াইশোর বেশি একদিনের আন্তর্জাতিকে ১২ হাজারের ওপর রান, প্রায় একশো টি২০ আন্তর্জাতিকে সাড়ে তিন হাজারের কাছাকাছি রান। সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আপনার ৭০টি শতরান। সামনে শুধু রিকি পন্টিং (৭১) এবং শচীন তেন্ডুলকার (১০০)। সেই আপনাকে নিয়েই তো চর্চা হবে। আপনি রান পেলেও আলোচনা, রান করতে না পারলেও আলোচনা। তাই খুব জানতে ইচ্ছে করে, এই যে এখন আপনাকে নিয়ে নানা মুনির নানা মত খবরের কাগজে, টিভির পর্দায়, হাতের মুঠোয় স্মার্টফোনে, তা নিয়ে আপনি কী ভাবছেন। কিন্তু এটাও ঠিক, জানা সম্ভব নয়। ওই যে আগেই লিখেছি, এসব মতামতকে আপনি পাত্তাই দেননা।
তা বেশ। কিন্তু কী করব বলুন তো? চাই না চাই, আমরাও তো এই বিতর্কে জড়িয়ে যাচ্ছি। প্রায় তিন বছর হতে চলল বিরাট, আপনার ব্যাটে সেঞ্চুরি নেই। হাতে গোনা কয়েকটা ইনিংস বাদ দিলে বড় রানেরও দেখা নেই। ব্যাড প্যাচ আপনার কেরিয়ারে আগেও এসেছে। কয়েক বছর আগে ইংল্যান্ড সফরে গিয়ে বারবার জেমস অ্যান্ডারসনের বলে নাস্তানাবুদ হয়েও পরবর্তী সময়ে রাজার মতো ফিরে এসেছেন। কিন্তু এবারের প্রতীক্ষাটা একটু বেশি হচ্ছে বলেই আমাদের ধৈর্যের বাঁধ ভাঙছে। আপনারও কি ভাঙছে? কী জানি।
এবার ইংল্যান্ডে পাঁচ মাস পর আন্তর্জাতিক টি২০–তে প্রত্যাবর্তন। কিন্তু পরপর দুই টি২০ ম্যাচেই চূড়ান্ত ব্যর্থ আপনি। আউট হয়েছেন ১ এবং ১১ করে। এই বছরে চারটি টি২০ ম্যাচে আগের দুটিতে আপনার রান ছিল ১৭ ও ৫২। এই সেদিন বোমা ফাটালেন ভারতের প্রথম বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক, এদেশের চিরশ্রেষ্ঠ অলরাউন্ডার কপিলদেব। কী বললেন? ‘অশ্বিনের মতো বোলার যদি বাদ পড়তে পারে, তাহলে ছন্দে না থাকা বিরাটকে বাদ দিতে সমস্যা কোথায়?’ তৃতীয় টি২০ ম্যাচে ইংল্যান্ডের কাছে হারলেও ঝলমলে সেঞ্চুরিতে নজর কাড়লেন সূর্যকুমার। সম্ভবত সেদিকে ইঙ্গিত করেই বীরেন্দ্র শেহবাগ বললেন, ‘ভারতের অনেক ব্যাটার যথেষ্ট ভাল ছন্দে রয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হল তাদের অনেককেই বসে থাকতে হচ্ছে। বর্তমান ছন্দের বিচারে সেরা ১১ জন ক্রিকেটারেরই খেলা উচিত আন্তর্জাতিক ম্যাচে।’ এবার শুনি দেশের প্রাক্তন জোরে বোলার বেঙ্কটেশ প্রসাদ কী বললেন। তিনি আবার কপিলের মতোই বেশি ঠোঁটকাটা। ‘তুমি যখন ছন্দে থাকবে না, তখন তোমার দলের বাইরে থাকাই উচিত। সে তুমি যেই হও। সৌরভ গাঙ্গুলি, বীরেন্দ্র শেহবাগ, যুবরাজ সিং, জাহির খান, হরভজন সিং সকলকেই খারাপ ছন্দের জন্য বাদ যেতে হয়েছে। ওরা সকলেই ঘরোয়া ক্রিকেটে ফিরে গিয়ে সেখানে ভাল খেলে আবার দলে ফিরেছিল। এখন কি সব বদলে গিয়েছে? বিশ্রাম নিয়ে কে কবে ছন্দে ফিরেছে! এটা উন্নতির কোনও পথ হতে পারে না। আমাদের দেশে প্রতিভার কোনও অভাব নেই। শুধু নামের সুবাদে কেন কেউ খেলেই যাবে। অনিল কুম্বলের মতো ক্রিকেটারকেও বহুবার বসতে হয়েছে।’
‘বিশেষ রূপে অজ্ঞ’। বিশেষজ্ঞদের নাকি নেতিবাচক ও ব্যাঙ্গাত্মক অর্থে এভাবেই ডাকা হয়। কিন্তু কপিল, শেহবাগ, প্রসাদদের উদ্দেশে ‘বাইরে কে, কী বলছেন, আমরা কানে তুলি না। শুনি না। কারা এই বিশেষজ্ঞ? জানি না, কেনই বা এঁদের বিশেষজ্ঞ বলা হয়’ বলে যখন তোপ দাগেন রোহিত শর্মা, তখন অবাক হতে হয় বইকি! তবে আমরা খুশি প্রকৃত নেতার মতোই, যথার্থ টিমম্যানের মতোই এই কঠিন সময়ে রোহিত আপনার পাশে দাঁড়ানোয়। কিংবদন্তি সুনীল গাভাসকারও আপনার পাশে দাঁড়িয়ে বলেছেন, ‘কই, রোহিত রান না পেলে তো এত কথা হয় না? যত আলোচনা একজনকে নিয়েই।’ সানির প্রশ্নেই লুকিয়ে আছে এর উত্তর। আগেই লিখেছি, আপনি ‘বিরাট কোহলি’ বলেই এত প্রশ্নের ঝড়!
আপনি রানে ফিরুন বিরাট। জানি একটা, মাত্র একটা ইনিংসই হয়তো আপনাকে আত্মবিশ্বাসের শিখরে তুলে দেবে। চলতি বছরেই টি২০ বিশ্বকাপ। ভারতের বিজয়কেতন ওড়াতে আপনার ব্যাটে রানের সুনামি দরকার। তাই আপনার পাশেই থাকছি। গোটা শিবিরে জয়ের গন্ধ ছড়িয়ে দিতে মাঠে আপনার আগ্রাসী মেজাজের মতো ব্যাটেও দরকার আগ্রাসন। যদি তা হয়, (প্রশ্নের) ঝড় থেমে যাবে, পৃথিবী আবার শান্ত হবে।