ইলেক্ট্রিশিয়ান পরিবার থেকে আইপিএলের আলো – তিলক বর্মা

“কোচিং পেয়েছো আগে? কে তোমার কোচ?

” না স্যার। আমার আর্থিক সমস্যা রয়েছে।

সালাম বয়শ নামের এক ব্যক্তির একটা ছোট ছেলেকে টেনিস বলে সোজা ব্যাটে শট খেলতে দেখে বেশ পছন্দ হয়ে গেলে তিনি তাকে প্রশ্ন করে পান এই উত্তর। পরবর্তীতে বয়শ বলেন “টেনিস বলে সাধারণত ছেলেরা স্লগ করে বা ক্রস ব্যাট শট খেলে, কিন্তু ও ক্লিন শট মারছিলো তাও সোজা ব্যাটে ব্যাট করে।”


তিলক ভার্মার বাবা পেশাগতভাবে একজন ইলেক্ট্রিশিয়ান এবং মা গৃহবধূ। আর্থিক সমস্যার কারণে ক্রিকেটের কিট কেনার সামর্থ ছিল না তাঁদের। সেই সময়ে বয়শ নামের ব্যক্তির আবির্ভাব হয় তিলকের জীবনে, যিনি পরবর্তীতে তাঁর কোচিং এর ফিস দেওয়া বা কিট কেনা দেওয়ার দায়িত্ব-সব কিছুই তুলে নেন নিজের কাঁধে। এই বয়শের সঙ্গেই স্কুটারে চেপে নিজের চন্দ্রায়ণ গাট্টার বাড়ি থেকে, লিঙ্গমপল্লির অ্যাকাডেমি অবধি প্রায় ৮০ কিলোমিটার যেতেন তিলক এবং যেতেন সপ্তাহে ছয়দিন।
এইভাবেই ২০১৯ সাল থেকে পাকাপাকিভাবে ঢুকে পড়া হায়দ্রাবাদ রাজ্য দলে। ২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বর প্রথম-শ্রেণীতে অভিষেক করে দুই ইনিংসে ৫ ও ৩৪ করেন তিলক এবং একই বছর অভিষেক লিস্ট-এ ও টিটোয়েন্টি ক্রিকেটে।
বিগত বছরের সৈয়দ মুস্তাক আলী ট্রফিতে দুরন্ত পারফরমেন্স করে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স নির্বাচকদের নজরে পড়েন তিলক ভার্মা। গুজরাটের বিরুদ্ধে কোয়ার্টার ফাইনালে ৫০ বলে ৭৫ রান করেন এবং এরপরে মুম্বাই স্কাউটরা তাঁর ব্যাপারে খবরাখবর করা শুরু করলে কোচ হায়দ্রাবাদ মিলাপ মেওয়াদা বলেন “ছয় মারায় বিশেষ দক্ষতা আছে ওর (তিলক) এবং খুব সহজেই দ্বিতীয়-টিয়ারে ছয় মারতে পারে। এছাড়াও ও পরিস্থিতি অনুযায়ী ভালো খেলতে পারে।
সালাম বয়শ একদিন বলছিলেন একটি আইপিএল ম্যাচে তিলকের বল-বয় হয়ে যাওয়ার ঘটনা। সেই ম্যাচে সুরেশ রায়নাকে দেখে তাঁর ইনসাইড-আউট শট রপ্ত করার ইচ্ছে হয় তিলকের। সেই শট প্র্যাক্টিস করতে গিয়ে প্রায় সারাদিন একটি ব্যাট নিয়ে শ্যাডো করতো তিলক এবং এমনকি একদিন ভোর ৪টের সময় উঠে শ্যাডো প্র্যাক্টিসে বিরত থাকেনি তিলক। এরপরে সে ইনসাইড-আউট খেলাতেও নিজের উৎকৃষ্টতার ছাপ রাখে।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ১.৭০ কোটি টাকায় তিলককে কেনে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স, অন্য তিনটি ফ্র্যাঞ্চাইজিকে বিডিং-এর ভিত্তিতে পরাজিত করে তারা এবং এই মূল্যের অর্থ ছিলো একজন নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের কাছে অনেকটাই। এবং এই বছর মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের পারফরমেন্স-এর এই মন্দার মধ্যেও ১১ ম্যাচে ২টি হাফ-সেঞ্চুরি সহ ৩৩৪ রান করে ভার্মা প্রমাণ করেছেন যে এখানেই শেষ নয়, বরং আরো লম্বা হবে তাঁর যাত্রা।