কিছুদিন ধরে সামাজিক মাধ্যমে একটি আলোচনা বেশ জনপ্রিয় যে যে ব্যাটসম্যান-এর প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে তিনটি ট্রিপল সেঞ্চুরি আছে তিনি ভারতের আট নম্বর কেন? যদি সেটার কারণ হয় তিন থেকে পাঁচ নম্বর জায়গায় পূজারা-কোহলি-রাহানের অবস্থান তবে তবে তো খোলা আছে ছয় নম্বর পসিশন। ছয় নম্বর পজিশনে তার টেস্ট ব্যাটিং গড় ১০টি ইনিংস খেলে ৫৪.৫০ হলেও বেশিরভাগ সময়ে তাকে ব্যাট করতে হয়েছে আট নম্বর পজিশনে। আটে ব্যাট করার ক্ষেত্রে তার কেরিয়ারে কেটেছে ৩১টি ইনিংস এবং তাতে ৩৩ গড় বেশ কার্যকরিতার প্রমাণ দেয় সেখানেও।
তবে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসে রবীন্দ্র জাদেজার ৭ নম্বর পজিশনে ব্যাটিং দেখলে। নিজের কেরিয়ারে দুটি টেস্ট সেঞ্চুরির সবগুলিই এসেছে ওই স্থানে। ২০১৯ সালে শুরু হওয়া বিশ্বটেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপে তার ৫০ গড় বলে দেয় কতো বড়ো মানের ব্যাটসম্যান তিনি শেষ তিন বছরে।
আজ সকালেও হয়নি তার অন্যথা। ভারতের একটি চিরাচরিত বদনাম যে আগের দিনের অপরাজিত ব্যাটসম্যানরা পরের দিন সকালে খুব বেশী হলে টিকে থাকেন একটি ঘন্টা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তার আগেই আয়ারাম গয়ারাম শুরু হয় তাঁদের। কিন্তু মোহালির ফ্ল্যাট ডেকে শ্রীলংকান বোলারদের নির্বিষ বোলিং সেই আশঙ্কার দূরীকরণ করেছিল অনেকটাই। সঙ্গে ছিলেন রবীন্দ্র জাদেজা এবং রবিচন্দ্রন অশ্বিন যাঁরা ঘন্টার পর ঘন্টা বোলারদের এতোই বিভ্রান্ত করলেন যে একসময় সুরঙ্গ লাকমাল-লাসিথ এম্বুল্ডানিয়ার শরীরী ভাষা বলে দিচ্ছিলো কতটা পরিশ্রান্ত।
রবিচন্দ্রন অশ্বিন নিজের দ্বাদশ হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করার পরে যখন ৬১ রানে ফিরে গেলেন সুরঙ্গ লাকমালের বলে এবং পরপর ফেরার রাস্তায় হাঁটলেন জয়ন্ত যাদব (২) তখন দায়িত্ব একমাত্র ছিলো ‘দ্য রয়্যাল রাজপুত’ এর ওপর যাতে ভারত একটি নিরাপদ স্কোরে পৌঁছয়। কিন্তু দশে নামা মহম্মদ শামির সঙ্গে জুটি বেঁধে তিনি যা করলেন তাতে আপাতত লঙ্কার ওপর ধস বিপদসীমা অতিক্রম করেছে অনেকটাই।
দশম উইকেটে নিরবিচ্ছিন্ন ১০৩ রানের পার্টনারশিপে শামির অবদান মাত্র ২০ রানই বলে দেয় আজ কতটা আত্মবিশ্বাসী ছিলেন রবীন্দ্র জাদেজা। তিনি কখনো পুল বা কখনো অফসাইডে স্কোয়ার অফ দ্য উইকেট খেলে রানের খাতা বাড়াতেই থাকেন এবং আজ তার কাছে সুবর্ণ সুযোগ ছিলো নিজের প্রথম আন্তর্জাতিক দ্বিশতক করার কিন্তু ম্যানেজমেন্ট হঠাৎ ইনিংস বিরতি ঘোষণা করায় মাত্র ২৫ রানের জন্য হাতছাড়া হয় দ্বিশতক।
রাহুল দ্রাবিড় টিম ম্যানেজমেন্ট-এর অংশ থাকায় এই ঘটনা নতুন নয়। শচীন তেন্ডুলকারের মুলতানি স্মৃতি এখনো উজ্জ্বল অনেকের মনে এবং সেখানে আজ যুক্ত হলেন রবীন্দ্র জাদেজা। ইনিংস সমাপ্তির কারণ নিয়ে জল্পনা বিস্তর। আর ৫-৬ ওভার পেলেও হয়তো চালিয়ে ২৫টি রান পেতেন জাড্ডু। কিন্তু দিনের শেষে সব জল্পনা শেষ করলেন স্বয়ং জাড্ডু। তিনি বললেন “শ্রীলংকার ক্রিকেটাররা ক্লান্ত থাকায় অলআউট করার সুযোগ ছিলো। সুতরাং আমিই বলেছিলাম ডিক্লেয়ার করতে।”
দিনের শেষে দিমুথ করুনারত্নে, লাহিরু থিরিমানে কেউই খুব বেশী প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেননি অশ্বিন-জাদেজার বিরুদ্ধে এবং মাত্র ১০৮ রানের মাথায় তারা খুইয়েছে চারটি উইকেট। অতএব দিনের শেষে প্রশ্ন থেকেই যায়- আর ৩০টি বল পেলে হয়তো জাদেজা পেতেন দ্বিশতক।
সে আর হলো কই?