মিম থেকে বাহবা – রিঙ্কু সিংয়ের সফলতার যাত্রা।

কেকেআরের তখন দরকার ছিলো ৪৩ বলে ৬৬। বা আর একটু এগিয়ে এসে বলি ৩০ বলে ৪৬। সোশ্যাল মিডিয়া পেজের “ট্রোল মেটেরিয়াল” লোকটির তখনও নিজের খেলা দেখানো শুরু হয়নি, তিনি তখনও ৬ বলে ৮ ব্যাটিং। এরপর থেকে এলো এক বদলে যাওয়া চিত্রনাট্য।

কুলদীপ সেনের লেগ-স্টাম্প অঞ্চলে থাকা বলটা অনায়াসভঙ্গিতে লিফ্ট করে ফাইন-লেগ অঞ্চল দিয়ে ছক্কা মারলেন রিঙ্কু সিং। ধ্রুপদী ব্যাটিংয়ে দুই বল পরে সিঙ্গল নিয়ে অপর প্রান্তে। প্রসিদ্ধ কৃষ্ণর পরবর্তী ওভারের প্রথম বল থার্ড-ম্যান অঞ্চল দিয়ে সিঙ্গল নিয়ে ঠিক তার পরে একটি অফ-স্টাম্পের ওপর রাখা শর্ট বলকে শাফল করে করা পুল বলটির ঠিকানা লিখলো বাউন্ডারি লাইনে। এরপর আবার একটি সিঙ্গল, ফুল-লেংথ বলে কভার অঞ্চল দিয়ে।

স্পিন-হিটার হিসেবে সুনাম বরাবরই ছিলো তাঁর। ইনিংসের ১৮তম ওভারের প্রথম বল যুজবেন্দ্র চাহাল মিডল-স্টাম্পে একটু শর্ট রাখতে ব্যাকফুটে গিয়ে পাঞ্চ করে কভার দিয়ে পেলেন বাউন্ডারি। তার পরের বলই অফ-স্টাম্প ঘেঁষে ফ্লাইট, পুরোনো রিঙ্কু ইনসাইড আউট চেষ্টা করতেই পারতেন কিন্তু বর্তমান রিঙ্কু স্টেপ আউট করে টার্নের বিরুদ্ধে খেলে ডিপ মিড-উইকেটে ঠেললেন এবং চার! এর পরের বল অফস্টাম্পে ফ্লাইট এবং বাড়তি ঝুঁকি না নিয়ে লং-অন দিয়ে দুটি রান। এরপর ওভারের শেষ বলে ডিপ স্কোয়ার-লেগ দিয়ে নিলেন একটি সিঙ্গল।

প্রসিদ্ধ কৃষ্ণর করা ইনিংসের সেকেন্ড লাস্ট ওভারে রিঙ্কুর ব্যাট কেকেআরকে দিলো মিড-অফ দিয়ে সিঙ্গল, অ্যাক্রস-শাফল করে অফ-স্টাম্পের বলকে অফ-সাইড দিয়ে দুরন্ত বাউন্ডারি, এবং মিড-উইকেট দিয়ে সিঙ্গল এবং ওভারের শেষ বলে রিস্ট ঘুরিয়ে ফুলটস বলকে পাঠালেন মিড-উইকেট বাউন্ডারিতে এবং স্কোর লেভেল!

ম্যাচের পর ইন্টারভিউতে রিঙ্কু বললেন “পাঁচ বছর অপেক্ষা করেছি এই সুযোগের জন্য। দলের জন্য কিছু করতে পেরে ভালো লাগছে। অনেক খেটেছি এবং চোটের পর ফিরে এসেছি।” যেটা বলেননি তা হলো এক সময় মাসিক মাত্র পাঁচহাজার টাকার বিনিময়ে ঝাড়ুদারের কাজ করা বাবা কতো কষ্ট করে বড়ো করেছেন তাঁকে এবং প্রথম আইপিএলের টাকা পাওয়ার পর তা তাকে যে খুশির স্বাদ দিয়েছিলো তার কথা। হয়তো বলবেন কোনোদিন। অন্ধকার গলি থেকে ফ্র্যাঞ্চাইজি দুনিয়ার এই আলোকোজ্জ্বল হাইওয়ে – এমন রূপকথার যাত্রা পেরোনোর আনন্দ চেপে রাখা যায় নাকি?

আজ রিঙ্কুর ব্যাট থেকে মাঠের সব দিক থেকে এসেছে শট। মিড-উইকেট থেকে কভার, ফাইন-লেগ থেকে থার্ড-ম্যান, লং-অন থেকে লং-অফ – বলের মেধা অনুযায়ী সব দিকেই খেলেছেন তিনি এবং একবারের জন্যও ফুটে ওঠেনি জড়তা। এই রিঙ্কু সিংকেই ডোমেস্টিক স্তরে উত্তর প্রদেশের হয়ে দেখতে অভ্যস্ত দর্শকরা, আজ আইপিএলের মঞ্চে প্রমাণ করলেন রিঙ্কু। সেই সঙ্গে যেন সমস্ত ট্রোলের ক্ষমাহীন অপরাধকে পাঠালেন বাউন্ডারির বাইরে। একেবারে ‘চারো তরফ সে’।