রনজির আগে ফর্মে সায়ন শেখর মন্ডল


ডার্বি ম্যাচের শেষদিন ফলো-অন করছে ইস্টবেঙ্গল। দিনের আর ২টি ওভার বাকি। ইস্টবেঙ্গলের বাঁহাতি ব্যাটার ব্যাট করছেন ৯৪ রানে।
প্যাভিলিয়ন এন্ড থেকে বল করতে এলেন অয়ন ভট্টাচাৰ্য। প্রথম বল, একটু শর্ট এবং অফস্ট্যাম্পের বাইরে। স্টেপ আউট করা সায়ন মিস করলেন ব্যাট ঘোরানোর পরে। দ্বিতীয় বলেও সায়ন আবার ফিরলেন শুন্য হাতে। তৃতীয় বলেও ফলাফল রইল একই। এর মাঝখানে দৌড়ে এসে বল না করে কিছুটা সময় চুরি করে নিলেন অয়ন ভট্টাচাৰ্য এবং মোহনবাগান অধিনায়ক অর্ণব নন্দী লং অন থেকে তাকে বলছেন পায়ে একবার ভলিনি লাগানোর কথা। একেই ডার্বি ম্যাচ, তারপরে প্রতিপক্ষ ব্যাটারের সেঞ্চুরি হবে? নৈব নৈব চ। ব্যাটারকে প্রতিরোধের সবরকম চেষ্টা চলছে ফিল্ডিং টিমের।


এরপর আর কিছুই করার সুযোগ দেননি সায়ন। অয়নের করা পরের বলটা যখন গুড লেংথে অফ স্ট্যাম্প লাইনে পেলেন, সরাসরি ওপেন স্টান্সে দাঁড়িয়ে উড়িয়ে দিলেন মিড অফের ওপর দিয়ে। ক্রিকহিরোস সায়ন শেখর মন্ডলের নামের পাশে দেখালো ১০০*। যদিও পরের বলেই সায়নের প্যাডে বল ফেলে তাকে ফেরত পাঠালেন অয়ন।
চলতি ডার্বিতে শুধু ফলো-অন ইনিংসে সেঞ্চুরিটা ধরলেই সায়নের সব অবদান বলা হবেনা। বরং আপনাকে ফিরে যেতে হবে প্রথম ইনিংসে। মোহনবাগানের তোলা ৩৮২ রানের জবাবে যখন প্রসেনজিৎ দাস, মহম্মদ আরিফ আনসারী, দিগন্ত নিয়োগীকে হারিয়ে যখন রীতিমতো চাপে ইস্টবেঙ্গল, তখন খেলা বাঁচিয়ে রেখেছিলেন ওই বাঁহাতিই। সোহম ঘোষ ফিরে যাওয়ার পরে যখন স্কোরবোর্ড বলছে ১৩১-৬। আর ঠিক এই জায়গা থেকেই আকাশ ঘটককে সঙ্গে নিয়ে একটা ফিরে আসার লড়াই করলেন সায়ন। একদিক থেকে শুভম সরকার-সুমিত মোহান্ত তো অপরদিকে অয়ন ভট্টাচাৰ্য-রাজকুমার পাল-অর্ণব নন্দী, সবাইকেই সামলালেন মুন্সীয়ানার সঙ্গে। ইনিংস শেষে সায়ন যখন ৭০ রানে ফিরছেন অর্ণব নন্দীর বলে, তখন সেটাই যেন ইস্টবেঙ্গল দলের লিড ১৫৭ রানে কমিয়ে নিয়ে আসার কারণ।
ফলো অন করতে নেমে এবার সায়নকে পাঠানো হলো তিন নম্বরে। সেইখানে প্রসেনজিৎ দাস তাড়াতাড়ি ফিরে যাওয়ায় তাকে খেলতে হলো একেবারে নতুন বল। সেইখানেও খুব সাবলীল সায়ন। যতটা সম্ভব দেরিতে বল খেলে এবং লুজ বলকে স্ট্রাইক করে ইনিংস এগিয়েছে নিয়ে গেলেন সায়ন।
সায়নের আরো বড়ো চ্যালেঞ্জ ছিল ধীরগতির আরিফ আনসারী যখন ক্রিজে একেবারেই সুবিধা করতে পারবেন বলে মনে হচ্ছেনা, তখন ইনিংস চালানো। এর মাঝেই তিনি সামলেছেন অয়নের একটি ভালো স্পেল এবং অর্ণব নন্দীর বলে দুইবার কিপার দীপ্তলোক চ্যাটার্জীর গ্লাভসে ক্যাচের আপিল হলেও পরের বল আবার খেলেছেন দক্ষতার সঙ্গে। সম্পূর্ণ ফলো-অন ইনিংসে একমাত্র রাজকুমার পালের ওভারগুলি বাদ দিলে সবসময়ই কোনো না কোনো চ্যালেঞ্জ সামলেছেন সায়ন। এবং তাতে মোটামুটি ডিস্টিঙ্কশন নিয়ে পাশ তিনি।


সায়নের ইনিংসে যেমন ছিল নতুন বলের বিরুদ্ধে দেরিতে খেলা, তেমনই ছিল বল পুরোনো হওয়ার পর ওপেন স্টান্সে দাঁড়িয়ে ইম্প্রোভাইজ করে খেলা। এর আগে ‘উইলোর উইল’কে দেওয়া ইন্টারভিউতে সায়ন বলেছিলেন বাংলা দলের ম্যানেজমেন্ট থেকে তাকে বলা হয়েছিল তার ব্যাটিং পসিশন হবে ‘ফ্লেক্সিবল’। এবং ডার্বি ম্যাচে, সবরকম ফ্লেক্সিবল পরিস্থিতিতেই ব্যাট করে রনজি ট্রফির দল নির্বাচনের আগে দাবি জোরালো করলেন সায়ন।